এতদিন কোথায় ছিলেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ মে ২০২২, ১৩:৩৮| আপডেট : ২৩ মে ২০২২, ১৪:১৩
অ- অ+

অবৈধ সম্পদের মামলায় টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী চুমকি কারণ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন।

সোমবার চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে হাজির হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

দুদকের মামলায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর প্রদীপ ও চুমকির বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রদীপ বর্তমানে কারাগারে আছেন। আর তার স্ত্রী এতদিন পলাতক ছিলেন।

এতদিন কোথায় ছিলেন

চুমকি কারণ আদালতে আত্মসমর্পণ করলেও এতদিন তিনি কোথায় ছিলেন- এই তথ্য এখন পর্যন্ত অজানা।

প্রদীপপত্নী চুমকি দেশেই কোথাও লুকিয়ে ছিলেন, নাকি পালিয়ে বিদেশে গিয়েছিলেন তা নিয়ে মুখ খোলেননি স্বজনরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও চুমকির অবস্থানের সঠিক কোনো তথ্য স্পষ্ট করতে পারছিল না।

কথিত আছে, অস্ট্রেলিয়া, ভারতের আগরতলা, বারাসাত, গৌহাটিতে প্রদীপ দম্পতির নামে একাধিক বাড়ি রয়েছে। বিদেশে পাচার করেছেন অঢেল অর্থ। রয়েছে ভারতীয় পাসপোর্ট। প্রদীপ ও তার স্ত্রী-সন্তান সেখানকার নাগরিকত্ব নিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রের দাবি।

এর আগে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছিলেন, প্রদীপপত্নীকে খুঁজছেন তারা। বিভিন্ন সংস্থার কাছেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠানো হয়েছে। দেশে থাকলে তাকে অবশ্যই গ্রেপ্তার হতে হবে।

কিন্তু তিনি গ্রেপ্তার হননি। করলেন আত্মসমর্পণ।

অন্য একটি সূত্র জানায়, প্রদীপ গ্রেপ্তারের পর চুমকি কারণ প্রথমে চট্টগ্রাম শহরের সদরঘাটে এক স্বজনের বাসায় কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। এরপর থেকে তার আর হদিস মেলেনি। অনেকে ধারণা, তিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অবৈধ পথে ভারতে পালিয়েছিলেন।

এদিকে গত ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদের আদালতে প্রদীপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। ওইদিন প্রদীপ কুমারকে আদালতে হাজির করা হলেও তার স্ত্রী চুমকি কারণ গরহাজির ছিলেন। প্রদীপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির এই মামলার অভিযোগপত্রে সাক্ষী রাখা হয়েছে ২৯ জনকে।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ। প্রদীপের পরিকল্পনায় সিনহাকে হত্যা করেন বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ লিয়াকত আলী। এ বছরের ৩১ জানুয়ারি এই হত্যা মামলায় প্রদীপ-লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে ছয়জনের।

দুদকের মামলা ও আদালতে বিচারকাজ

গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে আসামি উচ্চ আদালতে আবেদন করে মামলা থেকে অব্যাহতি চান। কিন্তু হাইকোর্ট তা খারিজ করে দেন।

এর আগে ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রম-২ এর তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন। পরের বছরের ২৬ জুলাই প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ১ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত।

দুদকের দেয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরে বাড়ি, ৪৫ ভরি সোনা, একটি ব্যক্তিগত গাড়ি, একটি মাইক্রোবাস, ব্যাংক হিসাব ও কক্সবাজারে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে চুমকির নামে। মামলায় তাকেও আসামি করা হয়। এই দম্পতির বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, চুমকি নিজেকে মৎস্য ব্যবসায়ী বলে দাবি করলেও তার এমন কোনো ব্যবসার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

চুমকির অবস্থান সম্পর্কে বাবার ভাষ্য

চুমকি যখন পলাতক ছিলেন তখন তার অবস্থান সম্পর্কে ঢাকাটাইমস জানতে চেয়েছিল, চুমকি কোথায় আছেন। তার বাবা অজিত কুমার কারণ বলেছিলেন, ‘মেয়ে কোথায় আছে সে ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।’ এ বিষয়ে তিনি অন্য কোনো কথা বলতেও নারাজ। চুমকি কারণের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বর সম্পর্কেও কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

চুমকি আত্মসমর্পণ করার পর তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সম্ভব হয়নি।

এদিকে পলাতক চুমকির অবস্থান সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষ্য ছিল, চুমকি যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে পুলিশ সদরদপ্তরে চিঠি দেয় দুদক। তবে এর আগেই তিনি দেশ ছেড়েছেন- এমনই ধারণা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা তখন বলেছিলেন, অনেক অনুসন্ধানের পর মনে হচ্ছে, প্রদীপের স্ত্রী চুমকি সন্তানসহ ভারতে পালিয়ে গেছেন।

কিন্তু সূত্রই নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেনি। আত্মসমর্পণের পরও প্রশ্ন রয়ে গেছে, এতদিন কোথায় ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/২৩মে/এফএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সরকারি অনুদান পাচ্ছে ৩২ চলচ্চিত্র, তালিকা প্রকাশ
ঢাকায় সৌদি আরবের নতুন রাষ্ট্রদূত
মগবাজারে হোটেলে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, কেয়ারটেকার গ্রেপ্তার
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৫৬ বন্দির সাজা মওকুফ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা