‘রূপান্তরিত হতে সমাজ পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করেছিল’

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৬ জুলাই ২০২২, ০৯:৫১| আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২২, ১০:১৪
অ- অ+

ছিলেন কামাল হোসেন শিশির। পরে শারীরিক ও মানসিকভাবে নিজেকে তাসনুভা আনান শিশিরে রূপান্তরিত করেছেন। নিজেকে যুক্ত করেছেন মডেলিং, অভিনয়, সংবাদ পাঠিকা এবং মানবাধিকারসহ নানা কাজে। দেশজুড়ে হয়েছেন আলোচিত। এসএসসির সময় পরিবার ছেড়েছিলেন তাসনুভা।

বাগেরহাটে জন্ম নেওয়া এই রূপান্তরিত নারী এক যুগের বেশি সময় ধরে ঢাকার বাসিন্দা। সাত মাস ধরে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখান থেকে জীবনের নানা বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেন ঢাকাটাইমস-এর সঙ্গে। আলাপচারিতায় ছিলেন আরিফ হাসান

যুক্তরাষ্ট্রে কেন এবং কোন মাধ্যমে গেলেন?

বেস্ট নিউজ অ্যাংকরের একটা প্রোগ্রামে ইনভাইটেশন ছিল। তবে মূল কারণ আমার ট্রিটমেন্ট। শরীরটা খারাপ ছিল অনেক দিন ধরে। যখন শিওর হলাম যে এখানে (যুক্তরাষ্ট্র) আসব, তখন এখানে আমার যারা বন্ধু ছিল তাদের সঙ্গে কথা বললাম। ডক্টরের সঙ্গে কথা বললাম। মূলত ট্রিটমেন্ট প্রসেসের জন্যই এখানে থাকা।

হাতে কী কী কাজ আছে?

এই মুহূর্তে মঞ্চ নিয়ে ব্যস্ত আছি। কিছু ফটোশ্যুটের কাজ আছে। দেশে ফিরে একটা সিনেমায় কাজের কথা রয়েছে। যদিও এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। যেহেতু এখানে (যুক্তরাষ্ট্রে) ট্রিটমেন্টের জন্য লম্বা সময় থাকতে হচ্ছে, তাই সময়টা নষ্ট না করে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টের জন্য কাজ করছি।

এ বছর ইলগার (ILGA) বোর্ড মেম্বার হয়েছি। আগামী দুই বছর এই কাজটা আমাকে করতে হবে। একটা পারফর্ম করেছি সম্প্রতি ‘আই শকুন্তলা’ ইংরেজি মঞ্চ নাটকে। সামনে আরেকটা প্রোডাকশন রয়েছে। অডিশন শেষ হয়েছে। সেটাতে কাজ করব। ইচ্ছা আছে। বাকিটা সময় ও বাস্তবতা নির্ধারণ করবে।

পড়াশোনার কী খবর?

ভালো একটা রেজাল্ট নিয়ে ‘পাবলিক হেল্থ’-এ মাস্টার্স শেষ করলাম। এছাড়া ডব্লিউএইচও (WHO) থেকে স্কলারশিপ পেয়েছিলাম। এখন থার্ড মাস্টার্সটা করতে চাই। সেটা হিউম্যান রাইটস নয়তো অ্যাকটিং- যেকোনো একটার উপর করব। সেটারই প্ল্যান চলছে এখন। কতটুকু কী বাস্তবায়ন করতে পারব জানি না। তবে করতে চাই। পড়াশোনা করতে ভীষণ ভালো লাগে।

রূপান্তরের ইচ্ছা কেন হলো?

রূপান্তরের আসলে ইচ্ছা হয়েছিল কী না জানি না, তবে প্রয়োজন ছিল ভীষণ রকমের। ছেলেবেলায় যে পরিমাণ হ্যারাসমেন্ট, বুলিং, টিজিং আর ট্রলের শিকার হয়েছি! সবকিছু মিলে আমার মনে হয়, রূপান্তরিত হতে সমাজ এবং পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করেছিল। তাছাড়া মনেপ্রাণে আমি নিজেকে নারীই মনে করি সবসময়।

এখন তো পরিপূর্ণ নারী। সংসার বাধার ইচ্ছা আছে?

নারীর পূর্ণতা আসলে কী দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা যায় আমি জানি না। হ্যা, সংসার করার ইচ্ছা অবশ্যই আছে। কিন্তু সংসারের জন্য সেই মানুষটা দরকার, পুরুষ মানুষ বা যার সঙ্গে সংসারটা করতে চাই। আমাদের দেশে যে পরিমাণ অজ্ঞতা আর কুসংস্কার! এসব ভেঙেচুরে উপড়ে ফেলে আমাকে ভালোবাসার মতো সৎ সাহস কার আছে জানি না। তাই সামাজিক স্বীকৃতিসহ দেশে এমন কাউকে খুঁজে পেলে অবশ্যই ভেবে দেখবো।

কারও কাছ থেকে কখনো প্রেম বা বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন?

প্রেম আর বিয়ের প্রস্তাব অনেক আগে থেকেই পাই। অহরহ প্রতিদিনই। অনেক সিরিয়াস মানুষও বিভিন্ন জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। যুক্তরাষ্ট্রে গত সাত মাসে অনেকগুলো বিয়ের প্রস্তাবে আমাকে না বলতে হয়েছে। সেটার কারণ- যে মানুষটাকে ভালোবাসি না বা যার প্রতি কোনো ফিলিংস থাকবে না, সেই মানুষটার উজ্জ্বল ক্যারিয়ার, বৈভব, প্রভাব, প্রতিপত্তি দেখে তাকে বিয়ে করব, এমন চিন্তা কখনোই করি না।

পরিবার সম্পর্কে জানতে চাই।

পরিবার সম্পর্কে আসলে ওরকম কিছু বলার নেই। কারণ যে সম্পর্কগুলো শেষ হয়ে যায়, যে সম্পর্কগুলোতে ভাঙন ধরে, তারপর জীবনবোধ একরকম তৈরি হয়, তাদের জীবনবোধ একরকম, একটা গ্যাপের পরে অনেক ধরনের গ্যাপ তৈরি হয়। সেই গ্যাপগুলো আর পূরণ হয় না। মা আছেন, তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। মায়ের সমস্ত দায়িত্ব আমার। তার জীবনধারণের জন্য যখন যেটা পেরেছি করেছি। এখনো যতটা পারি করি।

পরিবার মানে আমার কাছে এটাই। আবার পরিবার মানে আমি যাদের সঙ্গে কাজ করি, যাদের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগ করি, মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করি- দিনশেষে আমার কাছে সেটাই পরিবার। তাদের সঙ্গেই দিনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করতে হয়। আত্মিক অর্থে যে পরিবারের কথা আমরা সবাই বুঝি, সেই অস্তিত্বটা অনেক আগেই বিলিন হয়ে গেছে। তার কোনো অস্তিত্ব আর আমার জীবনে নেই।

ঘর ছেড়েছিলেন কেন?

ঘর কি ছেড়েছিলাম? আসলে এই প্রশ্ন এখনো খুঁজে বেড়াই। ঘর আমি কখনোই ছাড়িনি, ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল। পরিবেশ পরিস্থিতি এমন একটা জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছিল, আর তো কোনো উপায়, রাস্তা বা মাধ্যম ছিল না পরিবারের সঙ্গে থাকার।

অতীতের সঙ্গে বর্তমান জীবনের পার্থক্য কী?

অনেক কষ্ট এবং সংগ্রাম করে ক্যারিয়ার দাঁড় করিয়েছি। দেশের মানুষজন আমাকে চেনেন। দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ বেড়েছে। কেউ যখন বলে আমি তার অনুপ্রেরণা, সেটা খুব ভালো লাগে। বাঁচার নতুন প্রত্যাশা পাই। তখন কাজের মাত্রাও বেড়ে যায়। জীবনের গতি বেড়ে যায়। নতুনভাবে নিজেকে নতুন ফ্রেমে আবিষ্কার করতে ইচ্ছে হয়।

এটাই অতীতের সঙ্গে বর্তমান জীবনের বিশাল পার্থক্য। যখন দেখি যে, আমাকে দেখে আরেকজন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে, নতুন করে জীবনকে ভাবছে, সেটা অনেক কিছু আমার জন্য। মনে হয় এটাই সবচেয়ে বড় তফাৎ। এটা আমি আগে কখনোই পেতাম না। গত তিন-চার বছরে যেটা আমি দেখছি।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে বলুন

আমি কখনো কোনো কিছু হতে চাইনি। ভবিষ্যতে এটা করব, এমন কোনো ডায়াফ্রেম নিয়ে কখনো এগোয়নি। আমি একটা নির্দিষ্ট ছকের মধ্যে নিজের কাজ করতে পছন্দ করি। যেহেতু শিল্পী, অভিনয়ই করব। ট্রান্স রাইটস এক্টিভিস্ট হিসেবে যখন যেভাবে সুযোগ পাচ্ছি করছি। এগুলোই আপাতত স্বপ্ন। এগুলোই কন্টিনিউ করতে চাই। আর বড় কোনো প্ল্যান এখনই ডিক্লেয়ার করতে চাই না। পরে যদি বাস্তবায়ন না হয়। ভয় লাগে আসলে।

সময় দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ

ঢাকাটাইমসকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ

(ঢাকাটাইমস/০৬ জুলাই/এএইচ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
জটিল রোগের মহৌষধ ভেষজ লটকন, স্বাস্থ্য উপকারিতা জানলে চমকে উঠবেন
ঢাকাসহ ৬ বিভাগে ঝড় ও বজ্র-বৃষ্টির পূর্বাভাস
মেট্রোরেলের ঢাবি স্টেশন বিকেল থেকে বন্ধ থাকবে
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ বিমান হামলায় নিহত ৯৫, মোট মৃত্যু ছাড়াল ৫৮ হাজার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা