শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র জোরদার হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২২, ১৯:৩৮ | প্রকাশিত : ০৩ আগস্ট ২০২২, ১৯:২২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র জোরদার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘২০১৪’র নির্বাচনের আগে চক্রান্ত করেছে, ২০১৮’র নির্বাচনের আগে করেছে আবার এখন নির্বাচন যখন ঘনিয়ে আসছে তখন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।’

বুধবার গণভবনে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির নবনির্বাচিত বোর্ড সদস্যগণ সৌজন্য সাক্ষাতকালে প্রদত্ত ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ চতুর্দিক দিয়ে আসবে এবং আসছে। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অপর দিকে মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ। তাই এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি ফেলে রাখা যাবে না। উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে নিজের ব্যবস্থা নিজেকেই করে রাখতে হবে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক দুর্যোগও যেমন আসবে পাশাপাশি যেখানে রাসেলকে (১০ বছরের ছোট্ট) পর্যন্ত খুন করলো আর সেই পরিবার থেকে বেঁচে এসে সরকারে এলাম সাফল্য এনে দিলাম, বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিলাম এটা অনেকেই পছন্দ করবে না। কাজেই তারা তৎপর আছে সারাক্ষণই। আমি জানি তাদের তৎপরতা অনেক বেশি। তাদের খবরও আমি রাখি, আমারতো অচেনা কেউ নাই। তারা তাদের চক্রান্ত করেই যাচ্ছে।

তিনি করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশনকে কেন্দ্র করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃচ্ছতা সাধনের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, এই স্যাংশনের ফলেই প্রতিটি জিনিষের দাম বাড়ছে এবং আমি জানি না কারা লাভবান হচ্ছে এই যুদ্ধে। লাভবান হচ্ছে অস্ত্র প্রস্তুত ও সরবরাহকারীরা। আর মরছে সাধারণ মানুষ, ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে সাধারণের আজকে কD মানবেতর জীবন। সেটাই সবথেকে দুঃখজনক।

সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে কার কী লাভ হবে জানি না, তবে বাংলাদেশের মানুষেরতো ক্ষতিই হবে। কারণ, আমরাতো এক একটা জিনিষ টার্গেট করে কাজ করছি। যেমন বলেছি একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। জাতির পিতা যে পদক্ষেপ শুরু করেছিলেন নোয়াখালী থেকে। আমি সেই দায়িত্বটা পালন করে যাচ্ছি। এখন আরও ৫৬ হাজার ঘর তৈরি হচ্ছে (বিনামূল্যে বিতরণের জন্য)। তাহলে এখানে আর কোনো ভূমিহীন থাকবে না।

দেশে ভূমিহীন-গৃহহীন খুঁজে বের করায় সরকারের পাশাপাশি তিনি তাঁর দলের নেতাকর্মীদেরও দায়িত্ব দিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, তারপরেও আমি আলাদাভাবে খবর নিচ্ছি। রংপুরসহ বিভিন্ন বিভাগে আমাদের কৃষক লীগ এবং আওয়ামী লীগের যে নেতা-কর্মী রয়েছে তাদেরকে বলেছি- কোথায় কে ভূমিহীন-গৃহহীণ রয়েছে তাদের খোঁজ করে তালিকা করতে হবে। এক একটা এলাকা ধরে আমাকে তালিকা দিতে বলেছি যাতে কেউ বাদ না যায়। আমরা তাদের ঘর করে দেয়ার পাশাপাশি জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেব। কেননা বাংলাদেশে একটা মানুষও আর ভূমিহীন বা গৃহহীন থাকবে না।

এ সময় সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিলেও বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কিছুটা সীমিত করতে বাধ্য হয়েছে বলে জানান সরকারপ্রধান। বলেন, কেবল আমরাই নই, এখন ইউরোপের দেশগুলো থেকে শুরু করে আমেরিকা পর্যন্ত জ্বালানি সাশ্রয় করছে। কাজেই আমরা আগাম ব্যবস্থা নিচ্ছি ভবিষ্যতে যেন বিপদে না পড়তে হয়। তাছাড়া, ১ কোটি মানুষকে আমরা স্বল্পমূল্যে খাবার দিচ্ছি অর্থাৎ কোনো মানুষ যাতে কষ্টে না থাকে সেটাই আমাদের চেষ্টা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে এটা প্রমাণিত সত্য যে আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ কাজ করেনি এবং করবেও না। আর অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা দখলকারী তারাতো ক্ষমতার চেয়ারটা কীভাবে দখলে রাখবে ওই চিন্তাতেই ব্যস্ত থাকে।

তাঁর কাছে ক্ষমতাটা জনগণকে সেবা করার একটা সুযোগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা থাকলে আছে না থাকলে নাই। তবে, থাকলে দেশের মানুষের জন্য কাজ করার একটা সুযোগ পাই এবং সেই সুযোগটা যতদূর পারি কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। তাই, আমি আমার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি তৃণমূল থেকে সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য।

শেখ হাসিনা দুর্যোগকালে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মকান্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে মানবতার সেবায় সম্পৃক্ত করার উদাত্ত্ব আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন যে, দেশব্যাপী রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির কার্যক্রম বিস্তারে বরাবরের মতো তাঁর সরকার এবং তাঁর ব্যক্তিগত সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। সেই সঙ্গে আগামী ৪ বছরের জন্য আন্তর্জাতিক রেডক্রস সংস্থা আইএফআরসির সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আব্দুল ওয়াহাবকে অভিনন্দন জানান।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় ১৫ আগস্টের দুঃসহ স্মৃতিচারণ করে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, যে জাতির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সারাটি জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, সেই বাঙালি হয়ে কীভাবে ঘাতকরা জাতির পিতার বুকে গুলি চালিয়েছিল!

জাতির পিতার খুনীদের এক সময় তাঁদের ধানমন্ডির বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, খুনি নূর, ডালিম, জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোস্তাক প্রায়ই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসায় আসত। তারা আমার বাবা, মা, আমার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য এবং অন্যান্য নিকটাত্মীয়দের হত্যা করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তারা দেশ ও এর জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ করতে পারেনি, বরং গণমানুষের ভাগ্য অন্ধকার যুগে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।

আবেগ জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জাতির পিতা এদেশে রেডক্রস সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মানবতার কল্যাণে সেবা করার জন্য, ‘৭৫-এ জাতির পিতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার পর সেই রেডক্রসেরই এক টুকরো কাপড়কে কাফন বানিয়ে তাঁকে দাফন করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের পুরনো মর্যাদা ফিরিয়ে আনাসহ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিকে আধুনিকীকরণের একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশনা প্রদান করেন।

তিনি রেড ক্রিসেন্টের জেলা পর্যায়ের কমিটিগুলো নতুন করে করার এবং কমিটিকে কার্যকর করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সোসাইটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আব্দুল ওয়াহাবের নেতৃত্বে ভাইস চেয়ারম্যান নূরুর রহমান, ট্রেজারার এম এ সালাম, মহাসচিব কাজী সফিকুল আজম, আরমা দত্ত এমপি, এম মঞ্জুরুল ইসলামসহ অন্যান্য বোর্ড সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকাটাইমস/০৩আগস্ট/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

প্রতিমা পোড়ানোর মিথ্যা অভিযোগে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে: ছাত্রশিবির সভাপতি

আল্লামা ইকবালের ৮৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে মুসলিম লীগের আলোচনা সভা

সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার প্রতিবাদ জানাল রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন

ভারতীয় পণ্য বর্জন চলবে: ফারুক

যুবদলের নতুন কমিটির দাবিতে সাবেক নেতাদের  মিছিল 

খুলনায় গির্জায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিএনপি নেতা বকুলের সহায়তা

শ্রমিকদের হত্যাকাণ্ডের বিচারে সময়ক্ষেপণ দেশবাসী মেনে নেবে না: খেলাফত মজলিস

আওয়ামী লীগের যৌথসভা মঙ্গলবার

ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত আনু মুহাম্মদের সুস্থতা কামনা মির্জা ফখরুলের

আসুন সিদ্ধান্ত নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দেই: ড. কামাল হোসেন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :