বাংলাদেশ কিছু বেঈমান বিশ্বাসঘাতকের জন্য সারা জীবন দুঃখ ভোগ করল

মিজান মালিক
  প্রকাশিত : ১৫ আগস্ট ২০২২, ১১:৩৯| আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২২, ১১:৫১
অ- অ+

ইতিহাসে মৃত্যুহীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। বিভিন্ন সময়ে দেওয়া তার বক্তব্য পর্যালোচনা করলে আমরা তা দেখতে পাই। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন লালন করে দেশের মানুষের মুক্তিসংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন, জীবন দিয়েছেন- সেই স্বপ্ন আজও শুধু পথ খুঁজে বেড়ায়। তিনি যে সোনার বাংলার রূপকল্প করেছিলেন, যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই বাংলার স্বরূপটি এখনো অনুজ্জ্বল।

সারাজীবন তিনি দুঃখী মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছেন। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। নিজে খুব সুখী জীবনযাপন করতে পারেননি। তাঁর বুকে শিশু রাসেলের ছবির প্রতি দৃষ্টি দিলে তাঁর সরলতার একটা দিক আমরা অনুমান করতে পারি।

কখনো ভাবেননি যাদের ওপর আস্থা রেখেছিলেন, তারাই ঘাতক লেলিয়ে দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে তাঁর জীবন কেড়ে নেবে। সেই কথিত বিশ্বস্তরা খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মসনদে বসে। ‘কারাগারের রোজনামচা’র দিকে নজর দিলে আমরা দেখতে পাই, বঙ্গবন্ধু অনেক আগেই বিশ্বাসঘাতকদের বিষয়ে ধারণা পেয়েছিলেন। বলেছেন, ‘বাংলাদেশ শুধু কিছু বিশ্বাসঘাতকের জন্য সারা জীবন দুঃখ করল।’

সেই অবিশ্বাসীদের তালিকা কি পরবর্তী সময়ে ছোট হয়েছিল? না। এই তালিকা কখনো ছোট হওয়ার নয়। এখনো ক্ষমতার মসনদের আশপাশে তাদের কালো শ্বাস পড়ে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে এখনো ভুল বুঝিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত।

দলের নাম ভাঙিয়ে অনেকে দিনে দিনে হয়ে উঠেছে দানব। তাদের সব লাগবে। ব্যাংক লাগবে। জমি লাগবে। বাড়ি লাগবে। গাড়ি লাগবে। শিল্প-কারখানা লাগবে। লাইসেন্স লাগবে। এসব সুবিধাভোগী শ্রেণির দেখা বঙ্গবন্ধু পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাদের সবাইকে পুরোপুরি অবিশ্বাস করেননি। আবার মুখে বলেও ফেলেছেন, ‘সবাই পায় সোনার খনি, আমি পাই চোরের খনি। আর এই চোরের দল আমার দুঃখী মানুষের সর্বনাশ করে এভাবে লুটতরাজ করে খায়।’

তিনি কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমরা অমানুষ হয়ে যাই। এত রক্ত দেওয়ার পর যে স্বাধীনতা এনেছি, চরিত্রের পরিবর্তন অনেকের হয়নি। এখনো সুদখোর, দুর্নীতিবাজ, চোরাকারবারি, মুনাফাখোর বাংলার দুঃখী মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। দীর্ঘ তিন বছর পর্যন্ত এদেরকে আমি অনুরোধ করেছি- ‘চোরা নাহি শোনে ধর্মের কাহিনি।’

‘কিন্তু আর না। বাংলার মানুষের জন্য জীবন আর যৌবন আমি কারাগারে কাটিয়েছি। এই মানুষের দুঃখ দেখে আমি পাগল হয়ে যাই। পাকিস্তানিরা কাগজ ছাড়া আমার কাছে কিছু রেখে যায়নি। বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে আমাকে আনতে হয়। আর এই চোরের দল আমার দুঃখী মানুষের সর্বনাশ করে এভাবে লুটতরাজ করে খায়।’

‘এই বাংলার মাটি থেকে দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, মুনাফাখোরদের নির্মূল করতে হবে। আমি প্রতিজ্ঞা নিয়েছি, তোমরা প্রতিজ্ঞা নাও। বাংলার জনগণও প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করুক। আর না। ধৈর্যের সীমা হারিয়ে ফেলেছি। এ জন্য জীবন আর যৌবন নষ্ট করি নাই। কয়েকটা চোরাকারবারি, মুনাফাখোর, ঘুষখোর দেশের সম্পদ বাইরে বাইর করে দিয়া আসে। জিনিসপত্র গুদাম করে মানুষকে না খাইয়ে মারে। উৎখাত করতে হবে বাংলার বুক থেকে এদের।’

বঙ্গবন্ধুর সেই যে সংশয়, হুঁশিয়ারি, অনুরোধ- সবকিছুই আজও প্রাসঙ্গিক। একটি স্বাবলম্বী বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। তিনি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু সেই সময়ই তাঁর স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়ায় দুর্নীতিবাজরা, বিদেশে অর্থ পাচারকারী, চোরাকারবারি, মুনাফাখোর, অবৈধ সম্পদশালীরা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসে আজকে আমরা কী দেখছি? দুর্নীতিবাজ, অর্থপাচারকারীদের কাছে আজও দেশের মানুষ জিম্মি। আজও দানবীয় কায়দায় দখলবাজি, লুটপাট চলছে। হাজার হাজার কোটি টাকা চলে গেছে দেশের বাইরে। মানুষকে বোকা বানিয়ে অনেকেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। এখনো অনেকেই জানে না বঙ্গবন্ধু কেমন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন।

মুখে বঙ্গবন্ধু বলতে বলতে ফেনা তুলে ফেলে, ভেতরে ভেতরে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করতে কাজ করে। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসা মানে দেশকে ভালোবাসা। দেশের মানুষকে ভালোবাসা। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসা মানে তাঁর নাম ব্যবহার করে লুটপাট করা নয়। দুর্নীতি করা নয়। সিন্ডিকেট করা নয়। নিজের আখের গোছানো নয়।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়তে হলে এখনো আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। সব ধরনের দুর্নীতির পথ বন্ধ করতে হবে। দেশের বাইরে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে এনে দেশের অর্থনৈতিক সংকট সমাধানে কাজে লাগাতে হবে। শিল্প-কারখানা তৈরি করে বেকার সমস্যার সমাধান করতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হলে তেলবাজি বন্ধ করতে হবে। নিজের কাজটা যত্নের সঙ্গে করতে হবে। মিথ্যাচার, জোচ্চুরি বন্ধ করতে হবে। সুবিধাবাদী লীগ চিরতরে বন্ধ করতে হবে। সব মানুষের সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মানুষের কষ্ট অনুধাবন করে তাদের জন্য সবাই মিলে কাজ করতে হবে। বিপন্ন মানুষের সাথে প্রতারণা বন্ধ করতে হবে। যারা সিন্ডিকেট করে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় তাদের রশি দিয়ে বেঁধে জেলে ভরতে হবে। সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টের সঙ্গে একাত্ম হয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক ঢাকা টাইমস ও ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মিটফোর্ডের ঘটনায় ভাষা হারিয়ে ফেলিছি, আমরা লজ্জিত: জামায়াত আমির
গাজায় খাবারের অভাবে মানুষের জীবন হুমকির মুখে, ডব্লিউএফপি’র সতর্কবার্তা
এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ জানালো তদন্তকারী সংস্থা
ফিরে দেখা ১২ জুলাই: ছুটির দিনের বিকালে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল সারা দেশ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা