‘স্যার, আমার রাতের খাবার মাত্র এককাপ চা’

মো. আমিনুল ইসলাম
 | প্রকাশিত : ২৮ আগস্ট ২০২২, ১৫:০০

রাতে ভরপেট ভাত খেলে কেমন ভারী ভারী অস্থির লাগে। তাই ভাবলাম, আজ আর ভাত খাব না। ভাবতে ভাবতে পলওয়েল মার্কেট চলে এলাম ডিম-রুটি খাব বলে।

পলওয়েল অফিসের এক কর্মচারী তালা খুলে দিল। ভিতরে গিয়ে বসলাম।

পাঁচশ টাকার একটা নোট বের করে তাকে বললাম, দুইটা ডিম আর পরোটা নিয়ে এসো। আর শোনো, তোমার জন্যও খাবার নিয়ে এসো।

সে টাকা নিয়ে বাইরে গেল। মিনিট দশেক পর দুই প্লেটে ডিম আর গরম পরোটা নিয়ে হাজির।

ডিম পরোটা আর পানি দিয়ে সে চলে গেল পাশের রুমে। ভাংতি টাকা ফেরত দিল না। ভাব-ভঙ্গি দেখে আমার একটু খটকাই লাগল।

গরম পরোটা আর ডিম সাবাড় করে ঢেকুর তুলতে তুলতে লোকটাকে ডাকলাম। সে এক কাপ লিকার চা নিয়ে হাজির। বলল, স্যার চা খান। রাতে ঘুমানোর আগে আমি এককাপ চা খাই। অফিসে পানি গরম করার কেটলি আছে।

চা শেষ করতেই লোকটা এসে আমার ভাংতি টাকা মেলে ধরল। হাতে নিয়ে গুনে দেখি চারশ টাকার বেশি ফেরত দিয়েছে। তার মানে সে তার জন্য কোনো খাবার কেনেনি।

বললাম, তুমি রাতে কি খাবে কিনে নাও। বাকি টাকা ফেরত দাও।

বলল সে, স্যার আমি খুব অল্প বেতন পাই। দুই ছেলে কলেজে পড়ে। সংসারের খরচ দিয়ে খুব সামান্য বাঁচে। তাই দুই বেলা খাবার অভ্যাস করেছি। রাতে এক কাপ চা ছাড়া আর কিছু খাই না, স্যার। চা খেলে আর ক্ষুধা লাগে না। আমার ছেলে দুটার জন্য দোয়া করবেন, স্যার।

খুব খারাপ লাগল। ভাংতি পুরো চারশ বিশ টাকা তার দিকে বাড়িয়ে ধরলাম। বললাম, টাকাটা নাও। কয়েকদিন রাতে খেতে পারবে।

সে মোটেও হাত বাড়াল না।

স্যার রাতে আমার একটুও খেতে ইচ্ছে করে না, বলল সে।

বুঝলাম সে টাকাটা নিবে না।

আমার সমস্ত বিশ্বাস, সমস্ত সংস্কার, সমস্ত ভাবনা কেমন এলোমেলো হয়ে গেল। দুবেলা খাওয়া শীর্ণ অভাবী লোকটি কিভাবে তার লোভ সংবরণ করলো?! লোভ-লালসার সংসারে কোথায় কিভাবে পেল সে অমন মানসিক দৃঢ়তা?! জীবনের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা!!

ইচ্ছে হচ্ছিল তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু মিথ্যা অহংকার পথ আগলে দাঁড়াল।

সব কিছু ঠেলে সরিয়ে দিলাম। দুই বাহুতে জড়িয়ে ধরলাম তাঁকে। ওপাশের আয়নায় চেয়ে দেখি রক্তাভ আদ্র আমার চোখ। আর হত-বিহোবল তার চাহনি।

গাড়িতে বসে ভাবলাম, তাঁর নিজের অন্তত দুটি টাকা খরচ হয়েছে আমার জন্য চা বানাতে। খানিকটা নির্মোহ শ্রমও দিয়েছে সে, ভীষণ আন্তরিকতায়। ঋণ তার শোধ হলো না; রয়েই গেল হিসেবের খাতায় দায় বাড়াবার।

বুঝলাম- মানুষ হওয়ার পথে আরো বহু দূর পাড়ি দিতে হবে!

লেখক: মো. আমিনুল ইসলাম পুলিশ কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/২৮আগস্ট/এসকেএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :