খুনি যেভাবে ঢাকায় ২৩ বছর ভাড়া বাসায় ছিল
রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার রাতে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিপ্লব হোসেন (৫০)। জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের নাম বদলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ধুলা দিয়ে ২৩ বছর পালিয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
র্যাব-৪, সিপিসি-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ হোসেন ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন, মানিকগঞ্জে ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে খুন করা হয় কাবুল খান নামের এক ব্যক্তিকে। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই বিপ্লব পলাতক ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়াতে জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের নাম বদল করেছিলেন। তবে বাবা-মায়ের নাম ও ঠিকানা সঠিক ছিল। এছাড়া ঘনঘন পেশাও পরিবর্তন করছিলেন বিপ্লব।
র্যাব ও স্থানীয় সূত্র বলছে, রাজনৈতিক মতবিরোধের জের ধরে মানিকগঞ্জ জেলা সদরের গড়পাড়া ঘোষের বাজার এলাকায় বিপ্লব ও তার সহযোগীরা এলাকার মোতালেব হোসেনের বাড়িতে ধারালো অস্ত্রসহ হামলা চালায়। তখন মোতালেব বাড়িতে ছিলেন না। তাই ক্ষুব্ধ হয়ে তার বাড়ির সামনে কাবুল খানকে পেয়ে কুপিয়ে জখম করে ফেলে যান তারা। স্থানীয়রা কাবুলকে উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পরদিন মোতালেব হোসেন বাদী হয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানায় বিপ্লবসহ ২৮-৩০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৫০-৬০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামি বিপ্লব, মনির চৌধুরী, নিপ্পাই, মোশারফ হোসেন, সুনীল, উজ্জ্বল ও শহীদসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। এর ভিত্তিতে ২০০৯ সালের ৭ আগস্ট আদালত বিপ্লব হোসেন ও মনির চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড এবং নিপ্পাই, মোশারফ, সুনীল, উজ্জ্বল ও শহীদুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বাকি ছয় আসামিকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
এরপর মনির, উজ্জ্বল ও মোশারফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে উচ্চ আদালতে আপিল করলে ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ ওই সাত আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। উচ্চ আদালতে আপিল করে মামলা থেকে অব্যাহতি পান উজ্জ্বল। প্রায় চার বছর আগে গ্রেপ্তার আসামি মোশারফ কারাগারে মারা যান। মনির বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ হোসেন জানান, গ্রেপ্তার বিপ্লব আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় জাতীয় পরিচয়পত্রে মা-বাবার নাম ঠিক রেখে নিজের নাম পাল্টে শহিদুল ইসলাম ব্যবহার করতেন। এছাড়া ক্রমাগত পেশা পরিবর্তন করে আসছিলেন তিনি। প্রথমদিকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দোকানের কর্মচারী, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি এবং পরবর্তী সময়ে পরিবেশ অধিদফতরের আগারগাঁও অফিসে প্রতারণামূলক দালালির কাজ করতেন।
(ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/আরআর/এফএ)