ফুসফুস সুস্থ ও শক্তিশালী রাখার প্রাকৃতিক উপায়

বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাব এবং চলমান বায়ুদূষণ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন রকম জটিল রোগ। সমস্যা দেখা দিচ্ছে ফুসফুসে। করোনা, ওমিক্রন থেকে শুরু করে বেশিরভাগ ভাইরাসগুলো ফুসফুসের সবচেয়ে ক্ষতি করে এবং শ্বাসকষ্টের সংক্রমণ ঘটায়। শরীরে অতি প্রয়োজনীয় ফুসফুস অঙ্গটি ধীরে ধীরে ক্ষতির সম্মুখীন হলে আপনি আক্রান্ত হতে পারেন অ্যাজমা, সিওপিডি এর মতো গুরুতর রোগ, এমনকি ফুসফুসের ক্যানসারও।
এছাড়া নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী সাধারণত কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত পড়া, উচ্চমাত্রার জ্বর ও আক্রান্ত দিকে তীব্র বুকের ব্যথা নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারে। শিশু ও বয়স্ক রোগীরা এ রোগে অধিকহারে আক্রান্ত হয়। ভাইরাসজনিত ফুসফুস আক্রান্ত হলে প্লুরিসির সৃষ্টি হয় এবং রোগী শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় তীব্র ব্যথা অনুভব করে।
মানবদেহে লালচে বাদামি রঙের অঙ্গটি পেটের ওপর বুকজুড়ে হৃৎপিণ্ডের দুই পাশে ফুসফুসের অবস্থান। ফুসফুস আমাদের শরীরে বিশেষ এক অঙ্গ। এই অঙ্গটির মাধ্যমেই রক্তে মেশে অক্সিজেন। তারপর সেই অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যায় গোটা দেহে। আবার অপরদিকে কার্বন ডাই অক্সাইড এই অঙ্গের মাধ্যমেই সারা দেহ থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। জীবন বাঁচানোর তাগিদে ফুসফুস সুস্থ রাখা এবং এর যত্ন নেওয়া একান্ত জরুরি।
কীভাবে আপনার ফুসফুসকে পরিষ্কার করবেন দেয়া হল কিছু পদ্ধতি:
ফুসফুসের ভিতর থেকে টক্সিনগুলো যাতে বের হয়ে যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। সকালে নাশতা করার আগে ৩০০ মিলিলিটার পানির সঙ্গে ২টি লেবুর রস চিপে পানির সাথে মিশিয়ে পান করুন।
হলুদ রান্নাঘরে ব্যবহৃত অন্যতম প্রধান মশলা, যার ফলে আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকার হয়। হলুদ তার প্রদাহ বিরোধী এবং অ্যান্টি-সেপটিক বৈশিষ্ট্যের জন্য জনপ্রিয়। হলুদে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলি শ্বাস প্রশ্বাসের ট্র্যাক্ট পরিষ্কার রাখার মাধ্যমে প্রদাহ হ্রাস করতে এবং শ্বাস প্রশ্বাসে সহায়তা করে। হলুদ একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ভাইরালও, যা ফুসফুসে প্রভাবিত ভাইরাল সংক্রমণকে দূরে রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে।
আঙুর, আপেল বা আনারসের জুস বানিয়ে পান করুন, কারণ এসব ফলের জুসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহের শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার পদ্ধতিকে উন্নত করে।
নিয়মিত একটি আপেল খাওয়ার অভ্যাস শুধু ফুসফুস নয়, যেকোনো রোগের বিরুদ্ধেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। তবে আপেলের ভিটামিন, খনিজ, ফ্ল্যাভানয়েডস উপাদানগুলো ফুসফুস থেকে টক্সিন বের করতে বিশেষভাবে কার্যকরী থাকে।
স্বাদে আর পুষ্টিতে অনন্য কলা ফুসফুসের সুরক্ষায় বিশেষভাবে কার্যকরী। কলাতে থাকা পটাশিয়াম ফুসফুসের নানা সমস্যা ও ত্রুটির সমাধান করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যান্য ফলের মতো পেয়ারা খেলেও ভালো থাকে ফুসফুস। এর মাধ্যমে গুরুতর অসুখও প্রতিরোধ করা সম্ভব।
সকালের নাশতায় ও দুপুরে খাওয়ার সময়ে খাদ্য তালিকায় রাখুন গাজরের জুস। গাজরের জুস দেহের রক্তে ক্ষারের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় কলার জুস, নারিকেলের শ্বাস, পালংশাক খেতে পারেন কারণ এই খাবারগুলোর মধ্যে আছে পটাশিয়াম যা দেহের বিষাক্ত টক্সিন পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
রাতে ঘুমানোর আগে আপনি ১ কাপ গ্রিন টি পান করুন। এই চা পানের মাধ্যমে আপনার দেহ থেকে সমস্ত টক্সিন বের হয়ে যাবে যা দেহের জন্য ক্ষতিকর। এই পদ্ধতি মেনে চলার সময় এমন কোন কাজ করা যাবেনা যা ফুসফুসের ওপরে চাপ প্রয়োগ করে।
ভিটামিন-এ জীবাণুদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। তবে ট্যাবলেট ক্যাপসুল নয়, খাবারে থাকা ভিটামিনই ভালো। ভিটামিন-এ পাওয়া যায় গাজর, কমলালেবু, টমেটো, ডিমের কুসুম, পালংশাক, রাঙা আলু, ব্রোকোলি-সহ নানা টাটকা ফল ও সবজিতে।
ফুসফুসকে রক্ষা করতে পারে তুলসিপাতা। বাতাসে থাকা ধূলিকণা শোষণ করতে পারে তুলসিগাছ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন অল্প করে তুলসীপাতার রস খেলে শরীরের শ্বাসযন্ত্রের দূষিত পদার্থ দূর হয়।
ফুসফুস ভালো রাখতে কালোজিরা অনেক ভালো কাজ করে। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শ্বাসনালির প্রদাহ রোধ করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন আধা চা চামচ কালোজিরের গুঁড়া এক চা চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ফুসফুস ভালো থাকবে।
ভিটামিন 'সি' সমৃদ্ধ খাবারের কোনো বিকল্প নেই। ফুসফুসের প্রদাহজনিত সমস্যা রোধ করে এই ভিটামিন। শ্বাসযন্ত্রে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সাহায্য করে এবং শ্বাসনালির জীবাণু ধ্বংস করে। লেবু, আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন 'সি' রয়েছে।
নিয়মিত গোলমরিচ খান আপনার শ্বাস কষ্ট থাকবে না।
ফুসফুসের জন্য আদা-রসুন খুবই ভাল। আদা-রসুন ফুসফুস পরিষ্কার রাখে ও কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
অ্যাজমা ও ব্রংকাইটিসের মতো অনেক শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় কার্যকর হতে পারে গুড়। তিলের সঙ্গে গুড় মিশিয়ে খেলে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়।
ধূমপান যত দ্রুত সম্ভব ত্যাগ করা। ধূমপান শুধু ফুসফুসের ক্ষতি নয়, শরীরের অন্যান্য অঙ্গেরও ক্ষতি করে। ধূমপান ত্যাগ করলে পুরো শরীরের মঙ্গল।
ফুসফুসে প্রতিনিয়ত যে ক্ষয় হয় সেজন্য ভিটামিন-সি, ডি এবং জিঙ্ক যুক্ত খাবার খাওয়া খুব জরুরি।
ফুসফুস ভালো রাখতে ব্যায়াম
নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ফুসফুসকে সুস্থ রাখে। বিশেষত হাঁপানি বা ক্রনিক ব্রংকাইটিসের রোগীদের ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়াতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম উপকারী। এছাড়া এতে শিথিলায়ন হয় বা মানসিক চাপ কমে। এ রকম কয়েকটি ব্যায়াম সম্পর্কে জেনে নিন:
৪-৭-৮ রিলাক্সিং ব্রিদিং: পিঠ সোজা রেখে আরাম করে বসুন। ‘হুস’ আওয়াজ করে মুখ দিয়ে ফুসফুসের সবটুকু বাতাস বের করে দিন। এবার চোখ বন্ধ করে নিঃশব্দে নাক দিয়ে ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনতে গুনতে গভীর শ্বাস নিন। সেটা ভেতরে আটকে রাখুন, মনে মনে ৭ পর্যন্ত গুনুন। এবার ঠোঁট গোল করে আবার ‘হুস করে পুরোটা বাতাস বের করে দিন ৮ পর্যন্ত গুনতে গুনতে। কয়েক সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে পর পর চারবার এভাবে শ্বাস নিন। এই ব্যায়াম দিনে দুবার করা ভালো। এতে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিক চাপ কমে। ঘুমও ভালো হয়।
শ্বাস গোনার ব্যায়াম: এই ব্যায়ামে ক্রমান্বয়ে প্রশ্বাসের সময় ধীর করে আনতে হয়। মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। চোখ বন্ধ করে পর পর কয়েকবার গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। ধীরে ধীরে এর গতি কমে আসবে। প্রথমে প্রশ্বাস ছাড়ার সময় এক গুনবেন, তার পরের বার দুই, এভাবে পাঁচ পর্যন্ত। তারপর আবার নতুন করে এক দিয়ে শুরু করুন। এই ব্যায়ামটি দিনে ১০ মিনিট করবেন। এটি এক ধরনের মেডিটেশন বা ধ্যান। এটি মস্তিষ্ককে সজাগ করে ও মনঃসংযোগ বাড়ায়। মানসিক চাপ কমায়।
বেলো ব্রিদিং: মুখ বন্ধ করে চটপট নাক দিয়ে ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ব্যায়াম এটি। প্রতি সেকেন্ডে তিনবার শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার চেষ্টা করুন। শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার সময়টি সমান থাকবে। এতে বুকের ও বক্ষচ্ছদার মাংসপেশির দ্রুত ব্যায়াম হবে। তারপর কিছুক্ষণ স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। ১৫ সেকেন্ডের বেশি নয়। এটি যোগব্যায়ামের একটি কৌশল। এতে ক্লান্তি ঝরে যায় এবং কর্মস্পৃহা ও উদ্যম বাড়ে।
(ঢাকাটাইমস/১৮ সেপ্টেম্বর/আরজেড)

মন্তব্য করুন