বিয়ে করে বাবা হয়ে বারবার কেন লুকান শাকিব খান? কীসের ভয়

আরিফ হাসান
| আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২২, ১৬:৩৫ | প্রকাশিত : ০১ অক্টোবর ২০২২, ১৫:২৭

বাংলা চলচ্চিত্রের বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় তারকা বলা হয়ে থাকে চিত্রনায়ক শাকিব খানকে। ফিল্মি ক্যারিয়ারের চেয়ে যার ব্যক্তিগত জীবনটা অনেক বেশি চমকপ্রদ, আলোচিত, সমালোচিত। ঢালিউডের নাম্বার ওয়ান নায়ক হিসেবে তাকে নিয়ে বিস্তর আলোচনা যেমন হয়, তেমনই কিং খানকে নিয়ে বিতর্কও কম নেই। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শাকিব খানের একাধিক গোপন বিয়ে এবং সন্তান জন্মদান।

দেশসেরা এই নায়কের দুটি বিয়ের কথা এখন সবারই জানা। একটি বিয়ে হয়েছিল একসময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের সঙ্গে। আরেকটি হয়েছে এই সময়ের আলোচিত নায়িকা শবনম ইয়াসমিন বুবলীর সঙ্গে। অপু বিশ্বাসের সঙ্গে শাকিব খানের দাম্পত্যে দাঁড়ি পড়েছে ২০১৭ সালে। বুবলীর সঙ্গেও নাকি গত বছর বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। যদিও এ খবরের কোনো সত্যতা মেলেনি।

দুই নায়িকাকে দুটি পুত্রসন্তান উপহার দিয়েছেন শাকিব খান। অপু বিশ্বাসকে দিয়েছেন আব্রাম খান জয় এবং শবনম ইয়াসমিন বুবলীকে দিয়েছেন শেহজাদ খান বীর। দুই ছেলের নামের বেশ বাহার। চেহারাও মাশায়াল্লাহ বাবা শাকিব খানের মতোই নিখুঁত। বাংলা সিনেমার বর্তমান রাজার কাছে তার দুই ছেলেই রাজপুত্র। কিন্তু দুই স্ত্রী পায়নি রানির মর্যাদা। কারণ, বিয়ে করে সে খবর রেখেছেন লুকিয়ে। প্রকাশ পেতেই বিচ্ছেদ।

চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসকে শাকিব খান বিয়ে করেন ২০০৮ সালে। দীর্ঘ ৯ বছর সে খবর লুকিয়ে রাখেন। ২০১৬ সালে কলকাতায় গিয়ে ছেলে আব্রাম খান জয়ের জন্ম দেন অপু বিশ্বাস। লুকিয়ে রাখা হয় সে খবরও। পরে ২০১৭ সালে একটি টিভি চ্যানেলে হাজির হয়ে সবকিছু প্রকাশ করেন অপু বিশ্বাস। শোনা যায়, ওই সময় চিত্রনায়িকা বুবলীর সঙ্গে শাকিব খানের প্রেম-রসায়ন তুঙ্গে। সে কারণেই তড়িঘড়ি সন্তান নিয়ে প্রকাশ্যে আসেন অপু বিশ্বাস।

কিন্তু তার ফল ভালো হয়নি। বিয়ে ও সন্তানের কথা প্রকাশ করার কয়েক মাস পরই নানা ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে অপু বিশ্বাসকে তালাকনামা ধরিয়ে দেন শাকিব খান। এর পরই নাকি তিনি বুবলীকে বিয়ে করেন। লুকিয়ে রাখেন সে খবরও। যদিও কবে কোথায় শাকিব খান ও বুবলীর বিয়ে হয়েছে, তা এখনো প্রকাশ পায়নি। এরপর অপু বিশ্বাসের মতো বুবলীও দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ছেলে শেহজাদ খান বীরের জন্ম দেন।

এ খবরও দীর্ঘ আড়াই বছর জানতে পারেনি কাকপক্ষীও। যদিও গুঞ্জন বহু আগে থেকে চলছে। তবে সেসবের সত্যতা মেলে শুক্রবার। এদিন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শাকিব-বুবলী দুজনেই জানান, শেহজাদ খান বীর তাদের সন্তান। তবে শুধু অপু বিশ্বাস এবং বুবলীই নয়, ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে শাকিব খান একটা বিয়ে করেন বলে গুঞ্জন আছে। রাত্রি নামে একজন অভিনেত্রী শাকিব খানকে নিজের স্বামী হিসেবে দাবি করে আসছেন বহু বছর ধরে।

এমন গুঞ্জনও আছে, অভিনেত্রী রাত্রিকেও নাকি একটি পুত্রসন্তান উপহার দিয়েছিলেন শাকিব খান। তার নাম রাহুল খান। সেই ছেলে নাকি রাজধানীর বাংলামোটরের একটি গ্যারেজে মাসিক তিন হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন। অন্যদিকে নায়কের কথিত স্ত্রী রাত্রি কাজ করেন একটি পার্লারে। দেশের বড় একজন তারকার স্ত্রী-পুত্রর এমন দুরবস্থা দেখে অনেককেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নাক সিটকাতে দেখা যায়। এই বিয়েটাও হয়েছিল গোপনে।

কিন্তু বারবার সম্পর্কে জড়িয়ে, বিয়ে করে, সন্তানের জন্ম দিয়ে এভাবে লুকিয়ে কেন রাখেন শাকিব খান? তার কিসের এত ভয়? অনেকে বলেন, তারকা-খ্যাতি নষ্ট হওয়ার ভয়ে এমনটা করেন শাকিব খান। তিনি বিবাহিত, বাবা হয়েছেন জানলে অনেক পরিচালক, প্রযোজক বা নায়িকা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন- এমন ভয় নাকি আছে শাকিব খানের মধ্যে। তাই তিনি বিয়ে করেও অবিবাহিত হয়ে থাকেন।

কিন্তু বিয়ে আর বাবা হওয়ার কথা প্রকাশ পেলেই কি কোনো অভিনেতা বা অভিনেত্রীর তারকা-খ্যাতি নষ্ট হয়ে যায়? তাহলে তো বলিউডের শাহরুখ খান, আমির খান, অক্ষয় কুমার, অজয় দেবগণ, মাধুরী দীক্ষিত এবং কাজলদের মতো বড় বড় তারকাদের নাম ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে যেত। তারা তো ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই সবাই বিয়ে করেছেন। মা-বাবা হয়েছেন। বিয়ে বা সন্তান জন্ম দেওয়া তো তাদের তারকা হওয়া ঠেকাতে পারেনি!

শাহরুখ খান যখন গৌরীকে বিয়ে করেন, তখন তিনি বলিউডেই আসেননি। ১৯৯১ সালে শাহরুখ-গৌরীর বিয়ে হয়। পরের বছর বলিউডে অভিষেক করেন কিং খান। তিন তিনটি সন্তানের জনক তিনি। সেই শাহরুখ খান তো শুধু বলিউড নয়, বিশ্বের একজন নামকরা তারকা। কই বিয়ে বা বাবা হওয়া তো তার উপরে ওঠার পথে বাধা হতে পারেনি। অন্যদিকে আমির খান, অক্ষয়, অজয়, মাধুরী, কাজলরাও বিয়ে করেন ক্যারিয়ারের শুরুতে। তারাও নিজ নিজ জায়গা থেকে সেরা।

আমাদের শাকিব খান কি বলিউডের শাহরুখ খান-আমির খানদের চেয়ে বড় তারকা? তাহলে বিয়ে আর বাবা হওয়া কেন তার পথে বাধা হবে। শুধু বলিউড নয়, বিয়ে করা বা মা-বাবা হওয়ার জন্য যে কারও তারকা-খ্যাতি নষ্ট হয় না, তার বহু নজির এদেশের চলচ্চিত্র জগতেও রয়েছে। রাজ্জাক, আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, সোহেল রানা, শাবানা, ববিতাসহ আরও অনেকে আছেন, যারা ক্যারিয়ারের শুরুতে বিয়ে করেছেন। বড় তারকাও হয়েছেন।

তাহলে কি শাকিব খানের উদ্দেশ্য ভিন্ন? বারবার বিয়ে করে, সন্তান জন্ম দিয়ে লুকিয়ে রাখা বা লুকিয়ে রাখতে বাধ্য করার পেছনে এই অভিনেতার অসৎ উদ্দেশ্য আছে বলে আড়ালে আবডালে ফিসফাস করেন অনেকে। সমালোচকরা বলেন, যে নায়িকার সঙ্গে কাজ করেন, তার সঙ্গেই সম্পর্কে জড়ানোর একটা প্রবণতা আছে শাকিব খানের মধ্যে। অপু-বুবলী ছাড়াও একসময়ের জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূর, পূর্ণিমা, সাহারা থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের পূজা চেরির নামও জড়িয়েছে শাকিব খানের সঙ্গে।

সে কারণে অনেকে বলে থাকেন, বিয়ে এবং বাবা হওয়ার খবর এই বিতর্কিত অভিনেতা বারবার লুকিয়ে রাখেন, যাতে অন্য নায়িকারা তাকে অবিবাহিত মনে করে, তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। তাতে খুব সহজেই ওই নায়িকাদের তিনি প্রেমের জালে জড়াতে পারেন। উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে নায়িকারাও খুব সহজে কাছে টেনে নেন শাকিব খানকে। কারণ, আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে একটা কথা প্রচলিত আছে, শাকিব খান যদি কোনো পরিচালক বা প্রযোজককে বলেন, ‍ওমুক নায়িকাকে আমার বিপরীতে চাই, সে কথা রাখতে যে কেউ বাধ্য।

নিন্দুকেরা বলেন, এই সুযোগটাই নেন শাকিব খান। কাজের সুযোগের আশায় নায়িকারাও তাকে প্রশ্রয় দেন। কিন্তু যাকে লাখ লাখ মানুষ পছন্দ করে, অনুসরণ-অনুকরণ করে, যার মত হওয়ার স্বপ্ন দেখে, যাকে আদর্শ হিসেবে মনে করে, সেরকম একজন সুপারস্টার এত বিতর্ক কেন ছড়াবেন? বিয়ে করে, সন্তানের বাবা হয়ে, সেই খুশির খবর কেন তিনি বারবার লুকিয়ে রাখবেন বা স্ত্রীকে লুকিয়ে রাখতে বাধ্য করবেন? স্বয়ং অপু বিশ্বাস বলেছিলেন যে, বিয়ে ও সন্তানের জন্মের কথা প্রকাশ করতে শাকিব খান তাকে নিষেধ করেছিলেন।

কিন্তু কেন? আমরা তো এমন সুপারস্টার চাই না। শাকিব খানের এমন ভূমিকার কারণে যদি সমাজে কোনো খারাপ প্রভাব পড়ে, তার দায় কার? অভিনেতার এই বিতর্কিত কর্মকাণ্ড দেখে কোনো উঠতি বয়সের তরুণ যদি তার নিজের মধ্যেও এই চরিত্র লালন করে, সেটি কি খুব ভালো কোনো নজির হবে? তাই নিজের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য শাকিব খানের ক্ষমা চাওয়া উচিত। আর কোনো নায়িকা লুকিয়ে তার সন্তানের মা না হোক, এটাই সবার চাওয়া। দাঁড়ি পড়ুক বুবলীতেই।

লেখক: সংবাদকর্মী

সংবাদটি শেয়ার করুন

মুক্তমত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা