ইরানের আন্দোলনে বহিরাগত ইন্ধন

সাইখ আল তমাল, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২২, ১২:৫৭ | প্রকাশিত : ০৪ অক্টোবর ২০২২, ১২:৫৩

বাইশ বছর বয়সী কুর্দী তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানজুড়ে দানা বেধেছে ‘নীতি পুলিশ’ বিরোধী আন্দোলন। দেশটির ৩১টি প্রদেশে ছড়িয়েছে পড়েছে সহিংস বিক্ষোভ। ঘটেছে বহু হতাহতের ঘটনা। এই বিক্ষোভের পেছনে থাকতে পারে পশ্চিমাদের ইন্ধন, এমনটাও বলতে শোনা গেছে দেশটির সর্বোচ্চ নেতাকে।

রবিবার এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে তেহরানের নামকরা শরিফ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের হাতে আটকা পড়ে শত শত শিক্ষার্থী। বিক্ষোভের ১৭তম দিনে এসে প্রথমবারের মতো বিক্ষোভ নিয়ে মুখ খুললেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনী।

চলমান পরিস্থিতি এবং মাহসা আমিনির মৃত্যু নিয়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনী সোমবার বলেছেন, ইরানে সহিংসতা ও নৈরাজ্যের পেছনে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দখলদার ইসরাইল। তাদের পরিকল্পনাতেই এসব হয়েছে। দেশে একজন তরুণী মারা গেলেন। তার মৃত্যুর ঘটনায় আমিও ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু এই ঘটনার তদন্তের আগেই কোনো বিষয়ে নিশ্চিত না হয়েই কিছু লোক প্রতিক্রিয়া হিসেবে রাস্তায় নেমে অনিরাপত্তা সৃষ্টি করবে, কুরআনে আগুন দেবে, পর্দানশীন মহিলাদের মাথা থেকে টেনে হিজাব নামিয়ে ফেলবে এবং মসজিদ, হোসাইনিয়া ও মানুষের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করবে, এগুলো স্বাভাবিক কোনো প্রতিক্রিয়া নয়।

ইমাম হাসান আল মুজতাবা (আ.) ইউনিভার্সিটি অব অফিসার অ্যান্ড পুলিশ ট্রেনিং-এ যৌথ শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। খামেনী একই সঙ্গে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এবং দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক।

১৬ অক্টোবর ইরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থাতে রহস্যজনকভাবে মারা যান মাহসা আমিনি। ১৭ অক্টোবর তার অন্তেষ্টিক্রিয়ার সময় থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রথমে কয়েকজন নারী নিজেদের হিজাব খুলে তাতে আগুন ধরিয়ে এবং মাথার চুল কেটে ও খোলা চুলে ভিডিও পোস্ট করার মাধ্যমে প্রতিবাদ শুরু করে। মুহুর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক মাধ্যমে।

বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংস্থার সূত্র অনুযায়ী, ধীরে ধীরে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ শুরু করে ইরানের জনগণ। এক পর্যায়ে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয় সাধারণ মানুষের। সংঘর্ষে বেশ কিছু হতাহতের ঘটনাও ঘটে।

নরওয়ে ভিত্তিক গোষ্ঠী ইরান হিউম্যান রাইটস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এখন পর্যন্ত ইরান জুড়ে ১৩৩ জন নিহত হয়েছে যার মধ্যে ৪০ জনের বেশি লোক গত সপ্তাহে দক্ষিণ-পূর্ব সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী জাহেদানে সংঘর্ষে মারা গেছে। তবে ইরানি কর্তৃপক্ষ মৃতের সংখ্যা জানায়নি। যদিও তারা দাবি করেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর অনেক সদস্যকে ‘বিদেশী শত্রু সমর্থিত দাঙ্গাবাজ এবং গুণ্ডাদের’ মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। গত সপ্তাহে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ ৪১ জন মারা গেছে।

রবিবার ইরানের ছাত্ররা বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করে। এছাড়াও তেহরান, ইয়াজদ, কেরমানশাহ, সানন্দাজ, শিরাজ এবং মাশহাদের মতো বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ হতে দেখা যায়। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোস্টে দেখা যায়, বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা ‘স্বাধীনতা, স্বাধীনতা, খামেনির মৃত্যু’ স্লোগান দিচ্ছে। অপরদিকে একইদিনে ইরানের আইন প্রণেতারা সরকার বিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের সমর্থনে পার্লামেন্টের অধিবেশন চলাকালীন ‘ধন্যবাদ, পুলিশ’ স্লোগান দিয়েছিলেন।

গতকাল খোমেনী তার ভাষণে বলেন, ‘আমি সুস্পষ্টভাবে বলছি যেসব ঘটনা ঘটেছে সেসবের পরিকল্পনায় রয়েছে আমেরিকা, ইহুদিবাদী ইসরাইল এবং তাদের অনুসারীরা। ইরানের সঙ্গে তাদের সমস্যা হলো এই দেশের শক্তি, স্বাধীনতা ও উন্নয়ন। তবে ইরানি জাতি এসব ঘটনায় নিজেকে শক্তিশালী হিসেবে তুলে ধরেছে এবং ভবিষ্যতেও যেখানেই প্রয়োজন হবে সাহসিকতার সঙ্গে ময়দানে অবতীর্ণ হবে।’

সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী এবং ইরানি জাতি সবচেয়ে বেশি জুলুমের শিকার হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন খামেনী। বক্তব্যে ইরানি জাতির অতীত ইতিহাসের কথা স্মরণ করে বলেন, অবশ্য ইরানি জাতি অতীতের মতো এবারও নিজেকে শক্তিশালী হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছে এবং ভবিষ্যতেও এমনটিই ঘটবে। ভবিষ্যতেও শত্রুরা যেখানেই নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা চালাবে ঈমানদার ইরানি জাতিই সাহসিকতার সঙ্গে তা রুখে দেবে।

(ঢাকাটাইমস/০৪অক্টোবর/এসএটি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

দুই নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যার পর বালিচাপা দিলো ইসরায়েলি সেনারা 

গাজায় যুদ্ধাপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে আইসিসির প্রতি আহ্বান

কলকাতা বিমানবন্দরে চলল গুলি, নিরাপত্তা কর্মীর মৃত্যু

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়ে হুমকি পেলেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ

মস্কোতে কনসার্টে হামলা: এখনো প্রায় ১০০ জন নিখোঁজ 

বাবা কোটিপতি, ২০ বছর ধরে জানতই না ছেলে!

গাজা যুদ্ধের ১৭৩তম দিন, প্রাণহানি বেড়ে সাড়ে ৩২ হাজার

মস্কোতে সন্ত্রাসী হামলা: ফের মৃত্যুদণ্ড চালুর আহ্বান রুশ আইনপ্রণেতাদের

দশ বছরে ৬৪ হাজার অভিবাসীর মৃত্যু, বেশিরভাগই সাগরে ডুবে: জাতিসংঘ

৩০ হাজার কোটি রুপি ব্যয়ে মিয়ানমার সীমান্তে বেড়া দেবে ভারত

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :