জরায়ুমুখের ক্যানসার থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৩০ | প্রকাশিত : ৩০ অক্টোবর ২০২২, ১২:১৫

নারীদের মাতৃত্বের অপরিহার্য ও সংবেদনশীল অঙ্গ জরায়ু। অর্ধেক নারীই কোনো না কোনো পর্যায়ে জরায়ু মুখের ক্ষত ও প্রদাহে ভুগে থাকেন। এ ধরনের ক্ষত ও প্রদাহ থেকে সৃষ্ট ক্যানসার বিশ্বব্যাপী নারীমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে সাত শ’ নারী জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। প্রতিবছর এই রোগে আক্রান্ত হন প্রায় ৫০ লাখ নারী। বাংলাদেশে প্রতিবছর জরায়ু ক্যানসারে আক্রান্ত হন ১৭ হাজার নারী। দেশে প্রতিদিন গড়ে ২৭ জন ও বছরে প্রায় ১০ হাজার নারী জরায়ুমুখের ক্যানসারে মারা যাচ্ছেন। প্রতিবছরই এত মৃত্যু হওয়া সত্ত্বেও জরায়ুমুখের ক্যানসার নিয়ে আমাদের অনেকেরই খুব একটা ধারণা নেই। অথচ একটু সচেতন থাকলে খুব সহজেই জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব।

চিকিৎসকের মতে, জরায়ুমুখের ক্যানসারের প্রথম কারণ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের (এইচপিভি) সংক্রমণ। এই সংক্রমণ মূলত যৌনমিলনের কারণে ঘটে থাকে। ভাইরাস জরায়ুমুখে বাসা বাঁধে। একাধিক মানুষের সঙ্গে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হলেই জরায়ুমুখের ক্যানসারের সম্ভাবনা বেশি।

জরায়ুমুখের ক্যানসারের হাত থেকে বাঁচার একটি উপায়, একাধিক পুরুষের সঙ্গে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকা। কন্ডোম ব্যবহার করলেই যে বিপদমুক্ত, এমনটা ভেবে নেওয়া একেবারেই উচিত নয়। কারণ সামান্য ইউরিনারি ইনফেকশন অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে সেরে যেতে পারে, কিন্তু এক্ষেত্রে তা একেবারেই সম্ভব নয়।

জরায়ুমুখের ক্যানসার সাধারণত নারী দেহের গোপনাঙ্গ এবং জরায়ুকে সংযুক্ত করে। যখন এই জায়গার কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তন হতে শুরু করে তখন ব্যাপারটি ক্যানসারে রূপ নেয়। অনেক সময় জরায়ুমুখের ক্যানসার থেকে শুরু হয়ে পরবর্তীতে ফুসফুস, যকৃত, মূত্রথলি, যোনি, পায়ুপথেও ছড়িয়ে যেতে থাকে।

চিকিৎসকের মতে, জরায়ুমুখের ক্যানসার হয় এক ধরনের ভাইরাসের আক্রমণে, যার নাম “হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস”। আর এটি ছড়ায় ওই ভাইরাস আছে এমন কারো সাথে যৌনমিলন হলে। যৌনমিলনের সময় পুরুষের কাছ থেকে নারীদেহে এই ভাইরাস ঢুকে যায়। ভাইরাসটি ঢোকার সাথে সাথেই ক্যানসার হয় না, ক্যানসার হতে বেশ কয়েক বছরও লাগতে পারে। যখন নারীর শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তখনই এই ভাইরাসটি ক্যানসার রোগের সৃষ্টি করে।

জরায়ুমুখের ক্যানসারের মূল অসুবিধাটি হলো এটি শেষ পর্যায়ে গেলেই শুধুমাত্র ব্যথা দেখা দেয়। এর আগপর্যন্ত এর লক্ষণগুলোকে অনেকেই মাসিকের মেয়েলি সমস্যা বলে মনে করেন। ক্যানসার যখন একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে যায়, তখন রোগটা অনেক দূর ছড়িয়ে যায়।

চিকিৎসকের মতে, ৩৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সি নারীরা সবচেয়ে বেশি জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হন। যারা ঝুঁকিতে আছেন:

১৬ বছর বয়স হওয়ার আগেই যৌনসংগমের অভিজ্ঞতা থাকলে কিংবা পিরিয়ড শুরুর ১ বছরের মধ্যেই যৌন সঙ্গম শুরু করে থাকলে।

স্বামী বা যৌন সঙ্গীর শরীরে ভাইরাসটি থাকলে।

অনেকজন যৌনসঙ্গী থেকে থাকলে।

জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য দীর্ঘদিন, বিশেষত ৫ বছরের বেশি সময় ধরে বড়ি সেবন করে থাকলে।

ধূমপানের অভ্যাস আছে যাদের।

শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি থাকলে।

যৌনসংগমের মাধ্যমে ছড়ায় এমন কোনো রোগ থেকে থাকলে। যেমন–এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া, ইত্যাদি।

যে নারীরা চুল সোজা করার রাসায়নিক পণ্য বছরে চারবারের বেশি ব্যবহার করেন

লক্ষণসমূহ

যৌনসংগমের সময় ব্যথার অনুভূতি।

অস্বাভাবিকভাবে গোপনাঙ্গ থেকে রক্তপাত হলে। যেমন–যৌনসংগম পরবর্তী সময়ে, দুটি পিরিয়ডের মধ্যবর্তী সময়ে, পিরিয়ড বা রজঃশ্রাব বন্ধ হবার পরে, গোপনাঙ্গের কোনো পরীক্ষার পরে।

যোনিদেশ থেকে অস্বাভাবিকভাবে কোনো পদার্থ বের হতে থাকলে।

ক্যানসার ছড়িয়ে যেতে থাকলে যে সমস্ত লক্ষণ দেখা যায়–

গোপনাঙ্গে ব্যথা, প্রস্রাবে সমস্যা, পা ফুলে যেতে থাকা, কিডনি ফেইলিউর, হাড়ে ব্যথা হওয়া, ওজন কমতে থাকা এবং ক্ষুধামান্দ্য, দুর্বলতা অনুভব করা।

প্রাথমিকভাবে কোনো ব্যথা থাকে না দেখেই আমাদের দেশের নারীরা হাসপাতালে আসেন না। এমনকি যখন হয়, হওয়ার পরেও তারা অপেক্ষা করে। দেখা যায় দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব যাচ্ছে কিন্তু লজ্জায় সে কাউকে বলছে না। স্বামীর সাথে মেলামেশায় রক্ত যাচ্ছে সেটিও সে বলছে না। ফলে যখন হাসপাতালে আসে তখন অনেকে দেরি হয়ে যায়।

অথচ এতদূর পর্যন্ত এটি গড়ানোরই কথা নয়। কারণ অন্য ধরনের ক্যান্সারের তুলনায় জরায়ুমুখের ক্যানসার সবচাইতে সহজে নির্ণয় করা যায়।

এমনকি হওয়ার আগেই খুব সহজ একটি পরীক্ষায় ধরা যায় ক্যানসার হওয়ার আগের অবস্থা আছে কি না। এই পরীক্ষাকে বলে ভায়া টেস্ট। যৌন সম্পর্কে আছেন, এমন নারীরা ভায়া টেস্ট করিয়ে নিলেই জানতে পারবেন, তার জরায়ুমুখ ক্যানসার হওয়ার আগের অবস্থায় অছে কি না।

এছাড়া নিয়মিত ভায়া টেস্ট করালে ক্যানসার হবার আগেই তা নির্ণয় করা সম্ভব–এমনকি যদি কারো জরায়ুমুখ ক্যানসার হয়–প্রাথমিক অবস্থায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসা করলে তা ভালো হয়ে যায়।

জরায়ুমুখের ক্যানসার নির্ণয়ের পরীক্ষার প্রাথমিক ধাপ, অর্থাৎ ভায়া টেস্ট করানোটা অত্যন্ত সহজ। কোনো ব্যথা লাগে না। সময়ও লাগে মাত্র এক মিনিট। যেসব নারীর বয়স ৩০ থেকে ৬০-এর মধ্যে তাদের প্রতি ৫ বছর পরপর ভায়া টেস্ট করানো দরকার।

বাংলাদেশের সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি জেলা সদর হাসপাতাল, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, এমনকি নির্বাচিত কিছু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে, এনজিও ক্লিনিকগুলোতে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের পূর্বাবস্থা বোঝার এই ভায়া টেস্ট বিনামূল্যে করা হয়।

অবহেলা বা সংকোচ না করে নিজের ও আপনার পরিবারের প্রতি ৫ বছর পরপর নিয়মিত জরায়ুমুখ ক্যানসারের প্রাথমিক পরীক্ষা অর্থাৎ ভায়া টেস্ট করুন। জরায়ুমুখ ক্যানসার থেকে নিরাপদ থাকুন।

এছাড়া জরায়ুমুখ ক্যানসারই একমাত্র ক্যানসার যার টিকা আছে। মাসিক শুরুর পরপরই এবং যৌন সম্পর্ক শুরু কিংবা বিয়ের আগে টিকা নিলে এই ক্যানসার থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব।

(ঢাকাটাইমস/৩০ অক্টোবর/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ

গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি

ঔষধি গাছ থেকে তিন শতাধিক ওষুধ তৈরি হচ্ছে ইরানে

কণ্ঠের সব চিকিৎসা দেশেই রয়েছে, বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই: বিএসএমএমইউ উপাচার্য 

এপ্রিল থেকেই ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম শুরু, মার্চের মধ্যে টিকা নেওয়ার সুপারিশ গবেষকদের

স্বাস্থ্য খাতে নতুন অশনি সংকেত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ভাতা বাড়লো ইন্টার্ন চিকিৎসকদের

বিএসএমএমইউ বহির্বিভাগ ৪ দিন বন্ধ, খোলা থাকবে ইনডোর ও জরুরি বিভাগ

তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ করতে বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

বিএসএমএমইউতে বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে: ভিসি দীন মোহাম্মদ

ঈদের ছুটিতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে যেসব নির্দেশনা মানতে হবে হাসপাতালগুলোকে

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :