মোবাইল টাওয়ার বসানোর নামে অভিনব প্রতারণা, চক্রের হোতা গ্রেপ্তার
রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে প্রতারক চক্রের মূলহোতা আব্দুল জলিল ওরফে মাসুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেটিগেশন (পিবিআই)। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তরের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তার আব্দুল জলিল ওরফে মাসুদুর রহমান মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর থানার ফুলতলা গ্রামের মো. সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে। তিনি রাজধানীর মিরপুর থানার সেনপাড়া পর্বতা সাততারা মসজিদ রোডের ৩৯/বি/১ নম্বর বাড়িতে বসবাস করেন।
পিবিআই জানায়, সুসজ্জিত ভুয়া অফিস বানিয়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ারসহ আরো বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতকারী প্রতারক চক্রের মূল হোতা আব্দুল জলিলকে মিরপুর সেনপাড়া পর্বতা এলাকা থেকে একটি বিশেষ টিম অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।
পিবিআই জানায়, মো. শাহজাহান নামে একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী। তিনি আশুলিয়ায় নিজ জমিতে একটি বাড়ি নির্মাণ করছেন। গত ২৬ অক্টোবর দুপুরে সায়মন নামে এক ব্যক্তি তার সঙ্গে পরিচিত হন। সায়মন জানায়, তিনি এস/বি ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেডে চাকরি করেন। তাদের প্রতিষ্ঠানের টাওয়ার নির্মাণের জন্য ভুক্তভোগী শাহজাহানের নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ভাড়া নেওয়ার প্রস্তাব করেন। তার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এম.ডি) মাসুদুর রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
পিবিআই জানায়, গত ২ নভেম্বর শাহজাহান ঢাকার পল্লবী থানার ১২ নম্বর সেকশনের এস/বি ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানী লিমিটেডের এম.ডি গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল জলিল সহ অন্যান্য সহযোগিরা তার ভবনের ছাদ ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে কথা বলেন। ভুক্তভোগী শাহজাহান সেখানে যাওয়ার পরে ওই এম.ডিসহ অন্যান্য সহযোগিরা ভুক্তভোগী শাহজাহানকে প্রস্তাব করে সোনারগাঁও মুরগাপাড়া এলাকায় ইন্ড্রাস্টির জন্য দুই একর ৬৫ শতক জমি আছে। ওই জমিটি তাদের নামে ছাড়া অন্য কারো নামে বায়নানামা দলিল করলে তারা কোম্পানি থেকে অনেক টাকা আদায় করতে পারবেন। তখন আব্দুল জলিল ও তার সহযোগিরা ভুক্তভোগী শাহজাহানকে বায়নানামা দলিলের গ্রহীতা হওয়ার প্রস্তাব করেন। আর অতিরিক্ত টাকা শাহজাহানসহ অন্য সহযোগিরা সমানভাবে ভাগ করে নিবেন। প্রতারক চক্রটি এক গ্লাস পানি নিয়ে রুমে উপস্থিত সবাইকে একটি আঙ্গুল গ্লাসের ভিতর পানিতে রেখে শপথ করায়।
পিবিআই জানায়, একপর্যায়ে গ্রেপ্তারকৃত এম.ডি আব্দুল জলিল জমির মালিক সাজিয়ে পলাতক তার অপর সহযোগি মোস্তফাকে ডাকে। তখন মোস্তফা এসে জানায় তার স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। তাকে চিকিৎসা করানোর জন্য দ্রুত সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিতে হবে। সেখানে চিকিৎসা করাতে অনেক টাকার দরকার। তাই তিনি কম দামে জমি বিক্রি করতেছেন। জমির মোট দাম ধরা হয় ২৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আর বায়না বাবদ দুই কোটি টাকা উল্লেখ করে শাহজাহানের সঙ্গে বায়নানামা চুক্তি করেন। বায়নার দুই কোটি টাকা উল্লেখ করলেও জমির মালিক পলাতক মোস্তফাকে ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। তখন ওই প্রতারক চক্রটির কাছে ৫০ লাখ টাকা না থাকায় আব্দুল জলিলসহ অন্যান্য সহযোগিরা ভুক্তভোগী শাহজাহানকে ১৫ লাখ টাকা দিতে বলেন। শাহজাহান এই প্রতারক চক্রটির কথায় বিশ্বাস করে লোভে পরে ১৫ লাখ টাকা দিতে রাজি হন।
পিবিআইয়ের ভাষ্যমতে, গত ৬ নভেম্বর শাহজাহান পল্লবী থানার ইসলামী ব্যাংক, পল্লবী শাখা থেকে ১৫ লাখ টাকা উঠিয়ে এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া মো. আমিনুর ইসলামের সঙ্গে রিকশায় করে ঘটনাস্থল ফ্ল্যাটে যায়। অফিসে যাওয়ার পর ওই গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল জলিলসহ তার অন্যান্য সহযোগিরা শাহজাহানের কাছ থেকে সু-কৌশলে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে আব্দুল জলিল আবারও শাহজাহানের কাছে আরো ১০ লাখ টাকা চাইলে তার সন্দেহ হয়। পরবর্তীতে শাহজাহান এই ঘটনাটি গত ৯ নভেম্বর পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ে এসে বিশেষ পুলিশ সুপার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
পিবিআইর তথ্যমতে, পিবিআইর প্রধান বনজ কুমার মজুমদারে সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক-নির্দেশনায় এবং পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলমের নিবিড় তদারকিতে পিবিআই তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। গত ১০ নভেম্বর ভুক্তভোগী শাহজাহান বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি মামলা করেন। পল্লবী থানার মামলা নম্বর-৩০। ধারা-৪২০/৪০৬ পেনাল কোড। পরে পিবিআইর উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রবিউল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করেন।
পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) এর একটি বিশেষ টিম এই প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য আব্দুল জলিলকে ২৭ নভেম্বর রাত সোয়া ১০ টার দিকে মিরপুর সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে। পিবিআই আব্দুল জলিলকে আদালতে পাঠিয়ে সাত দিনের পুলিশ রিমান্ড চায়। আদালত তার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদে এই গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল জলিলসহ তারা একটি সক্রিয় প্রতারক চক্রের সদস্য স্বীকার করে।
(ঢাকাটাইমস/০১ডিসেম্বর/এএ/কেএম)