তিন ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি

অনুসন্ধানে নামছে সিআইডি দুদক ও বিএফআইইউ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ২৩:২৮

ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা অনুসন্ধান করতে তিনটি সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। অনুসন্ধানের দায়িত্ব পাওয়া তিনটি সংস্থা হলো- বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আগামী চার মাসের মধ্যে অনুসন্ধানের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তিন ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের তালিকাও চেয়েছে আদালত।

এছাড়া এস আলম গ্রুপের ৩০ হাজার কোটি টাকাসহ অনিয়ম করে ঋণ নেওয়ার ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করা হয়েছে।

রবিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ স্ব-প্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন।

আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মানিক জানান, ব্যাংকের ঋণ নিয়ে পত্রিকায় যে খবর এসেছে সেই বিষয়ে আদালত আদেশ দিয়েছেন এবং স্ব-প্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছেন। তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা যাচাই করে তিন সংস্থাকে আগামী ৫ এপ্রিল প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত। একই সঙ্গে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে এস আলম গ্রুপকেও ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন আদালত।’

ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপের ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার বিষয়ে একটি ইংরেজি দৈনিকের প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আদালত তাকে রিট করার পরামর্শ দেন। তবে শিশির মনির রিট না করে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের দাবি জানিয়ে বিএফআইইউ ও দুদককে চিঠি দেন। এছাড়া গভীরভাবে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককেও তিনি চিঠি দেন।

ইসলামী ব্যাংকে ব্যাপক অনিয়ম পেয়েছে পরিদর্শক দল

ইসলামী ব্যাংকের ঋণ অনিয়ম খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দলের নির্ধারিত সময়সূচি গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। তবে ব্যাংকটি পরিদর্শনে যে পরিস্থিতি ধরা পড়েছে, তাতে ওই সময়ে পরিদর্শন শেষ করতে পারেনি। এ জন্য পরিদর্শন অব্যাহত রেখেছেন কর্মকর্তারা, এবার কোনো নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়নি।

পরিদর্শক দলের কর্মকর্তারা আলোচনায় থাকা সব ধরনের কোম্পানির ঋণের হিসাব খোলার বিবরণী থেকে শুরু করে বিতরণ পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করছেন। পাশাপাশি ১০০ কোটি টাকার বেশি যত ঋণ দেওয়া হয়েছে, তাদের তথ্য চেয়েছে। ১০ কোটি টাকার বেশি পে-অর্ডারের মাধ্যমে যেসব টাকা বের করা হয়েছে, তারও নথি চেয়েছে। এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন করবেন কর্মকর্তারা।

এদিকে যেসব কোম্পানির ঋণ অনিয়মের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেসব কোম্পানির নথিপত্র পূর্ণাঙ্গ করতে শুরু করেছে ইসলামী ব্যাংক। কারণ, আগে যাচাই-বাছাই না করে দিনেদিনে কোম্পানি খুলে টাকা ছাড় করা হয়েছে। পাশাপাশি যেসব ঠিকানা ব্যবহার করে টাকা বের করা হয়েছে, তাতেও বসানো হচ্ছে সাইনবোর্ড। রাজধানীর বনানীর ডি ব্লকের ১৭ নম্বর সড়কের ১৩ নম্বর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহীর নাবিল গ্রুপের অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করে মার্টস বিজনেস লাইন, মেডিগ্রিন ইন্টারন্যাশনাল ও এসএস স্ট্রেইট লাইন ইন্টারন্যাশনালের নামে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে ইসলামী ব্যাংক থেকে। এর মধ্যে ১ থেকে ১০ নভেম্বর মার্টস বিজনেস লাইন ও মেডিগ্রিন ইন্টারন্যাশনালকে দেওয়া হয় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। তবে ওই ঠিকানায় ঋণ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের কোনো অফিস ছিল না, সেখানে নাবিল গ্রুপের সাইনবোর্ড ছিল। তবে ঋণ জালিয়াতির বিষয়টি আলোচনায় উঠার কিছুদিন পর সেখানে ঋণ নেওয়া তিনটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়েছে।

এদিকে ঋণ অনিয়মের বিষয় আলোচনায় আসার পর ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় তারল্য ব্যবস্থাপনায় তদারকি বাড়িয়েছে ইসলামী ব্যাংক। প্রতিদিন দুইবার সব শাখাকে টাকা জমা ও উত্তোলনের তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইতোমধ্যে সব শাখার ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে অনলাইনে সভা করেছেন। এতে কেউ যাতে টাকা চেয়ে ফেরত না যান, তার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভ্রান্তিতে পড়ে কেউ টাকা তুলে নিতে চাইলে, তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ গ্রাহকদের পাশাপাশি বড় করপোরেট গ্রাহকেরাও ব্যাংকটির সঙ্গে সম্পর্ক গুটিয়ে নিতে চাইছেন। আবার বিতরণ করা ঋণ ফেরত আনতে নিয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। এর অংশ হিসেবে রাষ্ট্রমালিকানাধীন একটি ব্যাংক থেকে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে একটি গ্রুপ।

চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর ব্যাংকটির আমানত ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। ৩১ অক্টোবর যা ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। আর সেপ্টেম্বরে আমানত ছিল ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। এখন ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোকে আমানতের সাড়ে ৯ শতাংশ সিআরআর (নগদ জমার হার) ও এসএলআর (বিধিবদ্ধ জমার হার) রাখতে হয়। ফলে ইসলামী ব্যাংক নতুন করে ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছে।

তারল্য সংকট এড়াতে ব্যাংকটি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এক শাখার হিসাবে অন্য শাখায় টাকা জমা ও উত্তোলনে মাশুল ছাড় দিয়েছে ব্যাংকটি। যা ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। আগে এক শাখার গ্রাহক ওই জেলার অন্য শাখায় এক লাখ টাকা জমা বা উত্তোলন করলে তাকে ২২৫ টাকা মাশুল দিতে হতো। আর এক জেলা থেকে অন্য জেলার শাখায় এক লাখ টাকা জমা ও উত্তোলনে মাশুল দিতে হতো ৩০৫ টাকা।

(ঢাকাটাইমস/০৪ডিসেম্বর/আরকেএইচ/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :