মূত্র থেকেই শনাক্ত হবে কালাজ্বর, লাগবে মাত্র ৩ ঘণ্টা

ঢাবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০২ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬:০৬
অ- অ+

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মনজুরুল করিম এর নেতৃত্বে একদল গবেষক কালাজ্বর ব্যাধি শনাক্তকরণে দ্রুত ও কার্যকরী একটি নতুন মলিকিউলার ডায়াগনস্টিক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন।

কালাজ্বর শনাক্তকরণে গতানুগতিকভাবে অনুসৃত বোন ম্যারো, স্প্লিন এসপিরেট কিংবা লিভার বায়োপসির পরিবর্তে মূত্র নমুনা ব্যবহার করে গবেষকদল এই মলিকিউলার ডায়াগনস্টিক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।

সোমবার সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয় সংলগ্ন প্রফেসর আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে এক সংবাদ সম্মেলন এসব তথ্য জানান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মনজুরুল করিম। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।

গবেষক দলের নেতৃত্বে থাকা অধ্যাপক মুহাম্মদ মনজুরুল করিম বলেন, ‘ইতোপূর্বে এ রোগ নির্ণয়ে রক্তের ইমিউনোক্রোমাটোগ্রাফিক পরীক্ষা এবং অস্থি- মজ্জা, যকৃত, প্লীহা, লিম্ফ নোড এর টিস্যু অণুবিক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হতো, যার প্রথমটির রোগ নির্ণয়ে নির্দিষ্টতা কম, আর অন্যটিতে টিস্যু সংগ্রহের সময় মারাত্মক রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বিদ্যমান।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত দশকে বেশ কিছু পলিমারেজ চেইন রিএকশন (পিসিআর) ভিত্তিক কালাজ্বর নির্ণয় প্রক্রিয়া প্রচলিত হয়েছে। যদিও এই প্রক্রিয়া পূর্বে ব্যবহৃত পদ্ধতি হতে রোগ নির্ণয়ে অধিক কার্যকারি, এই সকল প্রক্রিয়ায় রক্ত, অস্থি-মজ্জা, যকৃত, প্লীহা, লিম্ফ নোড এর টিস্যু এর নমুনা ব্যবহার করা হয়। যেহেতু ইতোমধ্যে একাধিক গবেষণায় লেশম্যানিয়ার দেহের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে, তাই আমরা প্রস্রাবের নমুনা ব্যবহার করে এবং রিয়েল টাইম পিসিআর প্রযুক্তির সাহায্যে কালাজ্বর সনাক্ত করার চেষ্টা করেছি।’

‘ক্লিনিক্যালি নির্ণয়কৃত কালাজ্বর রোগীদের থেকে সংগ্রহ করা প্রস্রাবের নমুনা ব্যবহার করে তাতে (L. dorovani) পরজীবীর অস্তিত্ব রিয়েল টাইম পিসিআর এর মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়েছিল। রোগীদের একই সেট থেকে রক্তের নমুনা তুলনা করে পরীক্ষার ফলাফলগুলি যাচাই করা হয়েছিল। সেই সাথে এই বিয়েল টাইম পিসিআর ভিত্তিক কালাজ্বর নির্ণয় পরিক্ষীণটি, পূর্বের এক গবেষণায় অংশগ্রহণকারী কালাজ্বর রোগিদের হতে সংগৃহীত অস্থি-মজ্জার নমুনার ওপর প্রয়োগ করা হয়। রিয়েল টাইম পিসিআর ভিত্তিক পরিক্ষণটি প্রস্রাবে রক্ত এবং পূর্ববর্তী অস্থি মজ্জার নমুনাগুলি থেকে (L. donovani) পরজীবী সনাক্ত করার ক্ষেত্রে শতভাগ সংবেদনশীলতা প্রদর্শন করে। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপগুলিতে অর্থাৎ গবেষণায় অংশগ্রহণকারী সুস্থ ব্যক্তি এবং কালাজ্বর এর ন্যয় অন্যান্য রোগ যেমন, মালেরিয়া, ডেঙ্গু এবং যক্ষমা আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রস্রাব এবং রক্তের নমুনায় কোনরূপ সংবেদনশীলতা পরিলক্ষিত হয়নি।’

রিয়েল টাইম পিসিআর ভিত্তিক এই মলিকুলার ডায়াগনস্টিক পদ্ধতিটি (Molecular Diagnostics, MDX) সম্পূর্ণ নির্ভুল এবং নিখুঁত ভাবে কালাজ্বর সনাক্তকরণের জন্য একটি রোগী-বান্ধব পদ্ধতি উল্লেখ করে অধ্যাপক মুহাম্মদ মনজুরুল করিম বলেন, ‘এ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুততার সাথে কালাজ্বর সনাক্ত করা সম্ভব যা রোগীর দ্রুত চিকিৎসা এবং রোগ নিরাময় এর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই পদ্ধতির ব্যবহার বাংলাদেশকে কালাজ্বর নির্মূলের দিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ২০৩০ সালের মধ্যে উপেক্ষিত গ্রীষ্মমন্ডলীয় রোগ নির্মূলের জন্য নির্ধারিত কার্যপ্রণালীর (2030 NTD Road Map) অন্যতম লক্ষ্য। প্রস্রাবের নমুনা ব্যবহার করে এই পদ্ধতিতে যে উল্লেখযোগ্য সংবেদনশীলতা এবং নির্দিষ্টতা পাওয়া গিয়েছে তা রক্ত বা আরও জটিল নমুনা যেমন অস্থি-মজ্জা বা প্লীহা এর নমুনা ভিত্তিক কালাজ্বর নির্ণয় পদ্ধতিকে প্রতিস্থাপন করতে পারবে।’

‘অধিকন্তু, প্রচলিত পিসিআর এবং নেস্টেড পিসিআর-ভিত্তিক কৌশলগুলির সাথে তুলনা করলে, রিয়েল টাইম-পিসিআর-এর একটি ধাপেই রোগকে অধিক নির্ভুলতা এবং নিশ্চয়তার সাথে সনাক্তকরণে সক্ষম, যা প্যাথলজিস্টদের জন্য কাজের চাপ কমিয়ে দিবে। এই পদ্ধতিটি একইসাথে চিকিৎসা প্রতি রোগী ও জীবাণুর প্রতিক্রিয়া মূল্যায়ন, আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে পরজীবীর গতিবিধি, পরিবেশে সংক্রমণনের গতিবিধি নিরুপন এবং মহামারী সংক্রান্ত জরিপ পর্যবেক্ষণেও ব্যবহার করা যেতে পারে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগে করা কালাজ্বর এর MDx-এ ক্লিনিকাল নমুনা হিসাবে প্রস্রাব ব্যবহার করার দৃষ্টান্ত ভারতীয় উপমহাদেশে এই প্রথম এবং এর ফলাফল বিশ্বখ্যাত জার্নালে (PLOS Global Public Health) প্রকাশিত হয়েছে।

লিংক: https://doi.org/10.1371/journal.pgph.0000834

দেশ এবং দেশের বাইরে কালাজ্বর নির্মূলে এই গবেষণা উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অধ্যাপক মুহাম্মদ মনজুরুল করিম।

গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের একটি উপেক্ষিত রোগ কালা আজার বা কালাজ্বর (Visceral Leishmaniasis), যা লেশমানিয়াসিসের ৩টি রূপের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এবং প্রাণঘাতি। বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে কালাজ্বর এর প্রকোপ আছে। যদিও এটি লেশমানিয়া গোত্রের একাধিক পরজীবীর মাধ্যমে ঘটে থাকে, বাংলাদেশে একমাত্র Leishmania denovam পরজীবীর অস্তিত্বই পাওয়া গেছে। কালাজ্বর এর সংক্রমণ এতটাই গুরুতর ও মারাত্মক হয়ে থাকে যে, এ রোগে মৃত্যুহার শতকরা ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে যদি চিকিৎসা করানো না হয়।

(ঢাকাটাইমস/০২জানুয়ারি/এসকে)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ভাইস প্রেসিডেন্টের টাই-ভাঙা ভোটে পাস হলো ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল’ বিল
ফিরে দেখা ৪ জুলাই: সারাদেশে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক, উত্তাল সব বিশ্ববিদ্যালয়
এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকেও ইভিএম বাদ
আগামী কয়েক দিন ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা, পাউবো কর্মচারীদের কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা