ফেলানী হত্যার ১২ বছর পূর্তি শনিবার: সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে এখনো কাঁদেন মা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১৯:৫১
অ- অ+

শনিবার ৭ জানুয়ারি। ২০১১ সালের এই দিনে ভারতীয় বিএসএফ নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে ফেলানীকে। তার হত্যার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও সন্তান হত্যার বিচার পায়নি তার পরিবার। প্রিয় সন্তান হত্যার বিচারের আশায় এখনো কাঁদে তার পরিবার।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের শ্রমিক নূরুল ইসলাম পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতের বঙ্গাইগাঁও এলাকায়। সেখানেই তিনি একটি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন। এর মধ্যে বাংলাদেশে খালাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হয় নিহত কিশোরী ফেলানী খাতুনের। সেই উদ্দেশ্যে বাবা নুরুল ইসলামের বড় মেয়ে ফেলানীকে নিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে রওনা দেন।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুয়াশাঢাকা ভোর ৬টার দিকে দালালের মাধ্যমে ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে মই বেয়ে কাঁটাতার পার হচ্ছিলেন ফেলানী ও বাবা নুরুল ইসলাম। মইয়ের সামনে ছিলেন বাবা নুরুল ইসলাম, পেছনে ফেলানী। এসময় বিএসএফ টের পেয়ে গুলি ছুঁড়লে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ফেলানীর বাবা নেমে পরায় বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ হয়ে কাঁটাতারে ঝুলে থাকে কিশোরী ফেলানী। প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে তার লাশ।

এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত। সেই চাপের মুখে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারের জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। বিএসএফের এ কোর্টে সাক্ষী দেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফের বিশেষ কোর্ট। রায় প্রত্যাখ্যান করে পুনঃবিচারের দাবি জানান ফেলানীর বাবা। পরে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনঃবিচার শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও বিএসএফের আদালতে। এবার শুধু সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। আবারো ২০১৫ সালের ২ জুলাই ওই আদালত আত্মস্বীকৃত আসামি অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়। রায়ের পরে একই বছর ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়। এরপর ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ করোনা শুরুর আগে শুনানির দিন ধার্য হলেও শুনানি হয়নি।

ওই এলাকার মজিরণ ও সামসুল জানান, প্রথম প্রথম লোকজন খোঁজ-খবর নিলেও এখন আর কেউ এই পরিবারের খোঁজ রাখে না। বিচার শুরুর সময় মনে হয়েছিল ন্যায় বিচার পাবে। কিন্তু যেভাবে বিচার হচ্ছে এবং সময় কাটানো হচ্ছে- তাতে বোঝা যায় ফেলানী হত্যার বিচার পাবে না তার পরিবার। এছাড়াও ফেলানী হত্যার এক যুগেও বন্ধ হয়নি সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতন।

ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম জানান, আমাদের সন্তানকে নির্মমভাবে কাঁটাতারে হত্যা করা হয়েছে। তাকে একটু পানিও খেতে দেয়া হয়নি। আমরা বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছি। কিন্তু এক যুগ পেরিয়ে গেলেও আমরা না পেলাম ক্ষতিপূরণ, না পেলাম ন্যায় বিচার।

করোনার কারণে ফেলানী খাতুন হত্যার বিচার ঝুলে থাকায় দুই রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব সম্পর্ক অটুট রাখতে দ্রুত ভারতের উচ্চ আদালত বিচারটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এমনটাই প্রত্যাশা কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর এসএম আব্রাহাম লিংকনের।

(ঢাকাটাইমস/০৬জানুয়ারি/এলএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
জাতীয় পার্টি আর ভাঙবেন না, বাবাকে আর অপমান করবেন না: এরিক এরশাদ
মোহাম্মদপুরে পুলিশের বিশেষ অভিযান, পেশাদার মাদক কারবারিসহ ৩৫ জন গ্রেপ্তার
বাংলাদেশের উন্নয়নে পল্লীবন্ধু এরশাদের অবদান অনস্বীকার্য: মামুনুর রশীদ
বিএনপির প্রতি জনসমর্থন ক্ষুণ্ণ করতে ষড়যন্ত্র করছে দুই একটি ইসলামি দল: রিজভী
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা