(বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন অবলম্বনে)
স্বাধীনতা আমি
আজ আমি মুক্ত -
নেই কোনো বেড়ি,
নেই ঝড়-ঝঞ্ঝা শৃঙ্খল।
নীচে রাজপথ সুদূর বিস্মৃত,
পাশে শ্যামল তৃণদল
নির্মল শিশিরে স্নাত।
স্নিগ্ধ চাঁদের আলো,
হাস্যোজ্জ্বল তারার ঝিকিমিকি,
সবই মধুর-সবই সমুজ্জ্বল।
এগিয়ে চলছে মটরযান-
দাঁড়িয়ে সহযোদ্ধা-সহচর,
চোখে অশ্রুজলপ্রপাত-
জনগণমনে উচ্ছ্বাস
মুখেতে হাসির ফোয়ারা
নেই কোনো ব্যবধান।
নয় মাসের যুদ্ধ পাকসেনা খান
খাড়া করেছিলো যে
দুরত্বের প্রাচীর-
হয়ে গেলো তার অবসান।
কুর্মিটোলা থেকে রেসকোর্স ময়দান
খোলা জীপগাড়ি বহমান
এগোচ্ছি আমরা
সম্মুখে-পেছনে,
ডানে-বায়ে চারদিকে
লাখে লাখ প্রাণ।
নজরুল-তাজ,মনসুর-জামান,
গায়ে গা-জড়ানো অনুভূতি,
চরম ক্লান্তি তবু পরিস্ফুট -
নির্ভরতার প্রোজ্জ্বল আকুতি।
চেয়ে চাতক পাখির মতো
কতশত সোনার সন্তান,
নেই রাগঅনুরাগ অভিমান-
অগুনতি দিনের যুদ্ধজয়ী প্রাণ।
ফিরিয়েছো আমায়
জাতির পিতার আসনে
নিরাপত্তাহীন জীবনভর,
ওরা সম্মুখীন করে খুঁড়েছিল-
আমার ফাঁসির কবর।
যত শোষণ নিপীড়ন-
পশ্চিমা অবহেলা,
আয়ু'র গতি হ্রাস,
জীবনখাতে সারাবেলা।
আমার ভাগ্যে বরাদ্দ
যতটুকু শলিতা,
পুড়েছে অধিক তার -
যার বর্ণনা ইতিহাসে হয়না।
সহজ-সরল পৌঢ়ত্বের ছাপ,
ঢাকবার ছিলো না জো,
কতশতদিন দৃষ্টিগোচরহীন
ঘুমহারা সহযাত্রীর রাত্রি-নিশিবোঁ।
সেবার প্রকৃতিতে গড়া
দুখিনী রেণুর প্রাণ,
হাসু-কামাল-জামাল-রাসেল
কি যে মধুর আদুরে ডাক
অবিস্মৃত অম্লান।
গাড়ি ধীরলয়ে এগিয়ে
দূরের ক্ষীণ আলো রশ্মি,
ক্রমে উজ্জ্বল হয়-
দূরের সরুপথ ঠেলে।
বেড়ে চলে আকাঙ্খা
জাগে নতুন আশা,
বহনকারী গাড়ি থামে
রেসকোর্স ময়দান লোকে-লোকারন্য
জনমহাসমুদ্রে ঠাসা।
যেখানে দাঁড়িয়ে আমি
শুনাই মন্ত্রমুগ্ধ গান
"এবারের সংগ্রাম -
স্বাধীনতার সংগ্রাম।"
ওদিনের বজ্রকন্ঠে নয়
নয় জ্বালাময়ী ভাষণ,
ব্যক্ত করছি তোমাদের তরে
নতুন আশার স্বপন।
জাগ্রত কর্তব্যের অনুভূতি,
দেশ গড়ার অঙ্গীকার,
স্ব কন্ঠে শুনো রাওয়ালপিন্ডির
লৌহকপাট খোলার ইতিহাস।
এ যে রূপকথার গল্প নয়
কেবলই সত্যাসত্য অভিজ্ঞান
আমার সম্মুখে ফাঁসির আদেশ-
উড়ায়ে পাক নিশান।
হুকুম নয়, শপথ করি
এসো ছাত্রযুবুক মুক্তিযোদ্ধা,
মিলেমিশে স্বদেশ গড়ি-
এসো কৃষক-শ্রমিক জনতা।
এসো হাতে হাত রাখি
সুসংহত করি স্বাধীনতা,
শোষণের নয় শাসিতের শাসন,
মেনে নাও বাংলার-
আইনী-অধীনতা।
হায়! শুনলে না, মানলে না
নষ্ট-ভ্রষ্ট-কীট-দষ্টে আগুয়ান
সোনারবাংলায় হাতে তুলে নিলে
অস্ত্র-মেশিন গান।
লুটেপুটে খেয়ে দিকবিদিক
একাকার স্বাধীনতা বিরোধী মুক্তিকামী
স্বপ্নের বুকে চালায়ে ছুরি,
গর্জ তুফান জাগালো আমায়
শাসালাম চারদিক।
হায়েনার মতো রক্ত ঝরালো
ভাইয়ে ভাইয়ের,
নেতা-জননেতার
রূপসী বাংলার জমিন পুড়ে
স্বাধীনতার চেতনা নিঃশেষ।
ভুলে গেলো ওরা জয়বাংলা
ত্রিশ লাখ শহীদীপ্রাণ,
ভুলে গেল সম্ভ্রমহারা-
মা-বোনের অবদান।
ওরা ভুলে গেল ভাষাশহীদ
ভাষাশিল্পীর গান,
ভুলে গেল ওরা
বীর বাঙালির করুণ পরিনাম।
বলেছি সাধারণ বীরজনতা
রক্ত দিয়ে কেনা এ স্বাধীনতা,
রক্ষায় যদি দিতে হয় দান
মুজিবই দেবে তবে প্রথম প্রাণ।
শকুনিরা চালালো গুলি,
হিংস্রতায় রক্তাক্ত হলো-
আমার বত্রিশ নম্বরের
সড়কের ভূমি।
ডাক শুনেও কেউ আসেনি
রাষ্ট্র নিলো খুনের দায়
খুনিদেরই রাজা-উজির
পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়।
দিয়ে গেলাম গেলাম স্বাধীনতা
সঙ্গে সপরিবারে প্রাণ
তবু আসবো ফিরে ইতিহাসজুড়ে
স্বাধীন বাংলাদেশ যে আমার দান
বাংলা নামের দেশ যে তুমি
রেখে যাওয়া রক্তঋণ-
আমার হাসু'র (শেখ হাসিনা) তর্জনীতে
আসবে দেশে রঙিন দিন।
ঝুলবে ফাঁসিতে আমার খুনি যুদ্ধাপরাধী আইনের শাসনে বেশ
উন্নয়নের জোয়ারে কাঁপাবে বিশ্ব
২০৪১-এ উন্নত বাংলাদেশ।
লেখক: সাংবাদিক -কলামিস্ট-কবি ও ইতিহাসবেত্তা