(বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন অবলম্বনে)

স্বাধীনতা আমি

সোহেল সানি
| আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫৯ | প্রকাশিত : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫৬

আজ আমি মুক্ত -

নেই কোনো বেড়ি,

নেই ঝড়-ঝঞ্ঝা শৃঙ্খল।

নীচে রাজপথ সুদূর বিস্মৃত,

পাশে শ্যামল তৃণদল

নির্মল শিশিরে স্নাত।

স্নিগ্ধ চাঁদের আলো,

হাস্যোজ্জ্বল তারার ঝিকিমিকি,

সবই মধুর-সবই সমুজ্জ্বল।

এগিয়ে চলছে মটরযান-

দাঁড়িয়ে সহযোদ্ধা-সহচর,

চোখে অশ্রুজলপ্রপাত-

জনগণমনে উচ্ছ্বাস

মুখেতে হাসির ফোয়ারা

নেই কোনো ব্যবধান।

নয় মাসের যুদ্ধ পাকসেনা খান

খাড়া করেছিলো যে

দুরত্বের প্রাচীর-

হয়ে গেলো তার অবসান।

কুর্মিটোলা থেকে রেসকোর্স ময়দান

খোলা জীপগাড়ি বহমান

এগোচ্ছি আমরা

সম্মুখে-পেছনে,

ডানে-বায়ে চারদিকে

লাখে লাখ প্রাণ।

নজরুল-তাজ,মনসুর-জামান,

গায়ে গা-জড়ানো অনুভূতি,

চরম ক্লান্তি তবু পরিস্ফুট -

নির্ভরতার প্রোজ্জ্বল আকুতি।

চেয়ে চাতক পাখির মতো

কতশত সোনার সন্তান,

নেই রাগঅনুরাগ অভিমান-

অগুনতি দিনের যুদ্ধজয়ী প্রাণ।

ফিরিয়েছো আমায়

জাতির পিতার আসনে

নিরাপত্তাহীন জীবনভর,

ওরা সম্মুখীন করে খুঁড়েছিল-

আমার ফাঁসির কবর।

যত শোষণ নিপীড়ন-

পশ্চিমা অবহেলা,

আয়ু'র গতি হ্রাস,

জীবনখাতে সারাবেলা।

আমার ভাগ্যে বরাদ্দ

যতটুকু শলিতা,

পুড়েছে অধিক তার -

যার বর্ণনা ইতিহাসে হয়না।

সহজ-সরল পৌঢ়ত্বের ছাপ,

ঢাকবার ছিলো না জো,

কতশতদিন দৃষ্টিগোচরহীন

ঘুমহারা সহযাত্রীর রাত্রি-নিশিবোঁ।

সেবার প্রকৃতিতে গড়া

দুখিনী রেণুর প্রাণ,

হাসু-কামাল-জামাল-রাসেল

কি যে মধুর আদুরে ডাক

অবিস্মৃত অম্লান।

গাড়ি ধীরলয়ে এগিয়ে

দূরের ক্ষীণ আলো রশ্মি,

ক্রমে উজ্জ্বল হয়-

দূরের সরুপথ ঠেলে।

বেড়ে চলে আকাঙ্খা

জাগে নতুন আশা,

বহনকারী গাড়ি থামে

রেসকোর্স ময়দান লোকে-লোকারন্য

জনমহাসমুদ্রে ঠাসা।

যেখানে দাঁড়িয়ে আমি

শুনাই মন্ত্রমুগ্ধ গান

"এবারের সংগ্রাম -

স্বাধীনতার সংগ্রাম।"

ওদিনের বজ্রকন্ঠে নয়

নয় জ্বালাময়ী ভাষণ,

ব্যক্ত করছি তোমাদের তরে

নতুন আশার স্বপন।

জাগ্রত কর্তব্যের অনুভূতি,

দেশ গড়ার অঙ্গীকার,

স্ব কন্ঠে শুনো রাওয়ালপিন্ডির

লৌহকপাট খোলার ইতিহাস।

এ যে রূপকথার গল্প নয়

কেবলই সত্যাসত্য অভিজ্ঞান

আমার সম্মুখে ফাঁসির আদেশ-

উড়ায়ে পাক নিশান।

হুকুম নয়, শপথ করি

এসো ছাত্রযুবুক মুক্তিযোদ্ধা,

মিলেমিশে স্বদেশ গড়ি-

এসো কৃষক-শ্রমিক জনতা।

এসো হাতে হাত রাখি

সুসংহত করি স্বাধীনতা,

শোষণের নয় শাসিতের শাসন,

মেনে নাও বাংলার-

আইনী-অধীনতা।

হায়! শুনলে না, মানলে না

নষ্ট-ভ্রষ্ট-কীট-দষ্টে আগুয়ান

সোনারবাংলায় হাতে তুলে নিলে

অস্ত্র-মেশিন গান।

লুটেপুটে খেয়ে দিকবিদিক

একাকার স্বাধীনতা বিরোধী মুক্তিকামী

স্বপ্নের বুকে চালায়ে ছুরি,

গর্জ তুফান জাগালো আমায়

শাসালাম চারদিক।

হায়েনার মতো রক্ত ঝরালো

ভাইয়ে ভাইয়ের,

নেতা-জননেতার

রূপসী বাংলার জমিন পুড়ে

স্বাধীনতার চেতনা নিঃশেষ।

ভুলে গেলো ওরা জয়বাংলা

ত্রিশ লাখ শহীদীপ্রাণ,

ভুলে গেল সম্ভ্রমহারা-

মা-বোনের অবদান।

ওরা ভুলে গেল ভাষাশহীদ

ভাষাশিল্পীর গান,

ভুলে গেল ওরা

বীর বাঙালির করুণ পরিনাম।

বলেছি সাধারণ বীরজনতা

রক্ত দিয়ে কেনা এ স্বাধীনতা,

রক্ষায় যদি দিতে হয় দান

মুজিবই দেবে তবে প্রথম প্রাণ।

শকুনিরা চালালো গুলি,

হিংস্রতায় রক্তাক্ত হলো-

আমার বত্রিশ নম্বরের

সড়কের ভূমি।

ডাক শুনেও কেউ আসেনি

রাষ্ট্র নিলো খুনের দায়

খুনিদেরই রাজা-উজির

পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়।

দিয়ে গেলাম গেলাম স্বাধীনতা

সঙ্গে সপরিবারে প্রাণ

তবু আসবো ফিরে ইতিহাসজুড়ে

স্বাধীন বাংলাদেশ যে আমার দান

বাংলা নামের দেশ যে তুমি

রেখে যাওয়া রক্তঋণ-

আমার হাসু'র (শেখ হাসিনা) তর্জনীতে

আসবে দেশে রঙিন দিন।

ঝুলবে ফাঁসিতে আমার খুনি যুদ্ধাপরাধী আইনের শাসনে বেশ

উন্নয়নের জোয়ারে কাঁপাবে বিশ্ব

২০৪১-এ উন্নত বাংলাদেশ।

লেখক: সাংবাদিক -কলামিস্ট-কবি ও ইতিহাসবেত্তা

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :