তাহলে ৪৪৭ কোটি টাকার ট্যাবের কী হবে

রুদ্র রাসেল, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪৮ | প্রকাশিত : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩৮

জনশুমারির প্রকল্প চলাকালে দেশজুড়ে ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষের তথ্য সংগ্রহ করতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) তিন লাখ ৯৫ হাজার ট্যাব (ট্যাবলয়েড পিসি) ক্রয় করে। ওয়ালটন থেকে ৪৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এ ট্যাবগুলো কেনা হয়। জনশুমারির তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রায় ৪ লাখ কর্মী নিয়োগ দিয়ে ট্যাবগুলো তাদের দেওয়া হয়। তবে প্রকল্প শেষে ট্যাবগুলো বিবিএসকে ফিরিয়ে দেন কর্মীরা। প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ করে সম্পন্ন করা জনশুমারি প্রকল্পের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ অর্থ খরচ করে কেনা এই ট্যাবগুলো এখন পড়ে আছে। ট্যাবগুলোতে কারও কোনো কাজ নেই। মাত্র আট দিন ব্যবহার করা হয় এসব ট্যাব।

এ অবস্থায় ট্যাবগুলো দিয়ে কী করা হবে, কাদের দেওয়া হবে ট্যাবগুলো, এমন নানা প্রশ্ন উঠেছে জনশুমারি শেষে প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিবিএসও বিষয়টি নিয়ে ভাবছে। এ ট্যাবগুলো পরবর্তীতে কী করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত পেতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছে বিবিএস।

বিবিএসের দায়িত্বশীল একটি সূত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে ট্যাবগুলোর অবস্থা ও কার্যকারিতাসহ সার্বিক বিষয়ে একটি সারসংক্ষেপ (সামারি) পাঠানোর কথা জানিয়ে গতকাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জনশুমারি প্রকল্পে ট্যাবগুলো পরবর্তীতে কী করা হবে সে বিষয়ে কোনো শর্ত ছিল না। এ কারণে এগুলো কী হবে সেটি বিবিএস সিদ্ধান্ত নিচ্ছিল। বিবিএস কর্মকর্তারা সমন্বিতভাবে ট্যাবগুলোর পরবর্তী করণীয় বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে উপযুক্ত মনে করায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সিদ্ধান্ত চাওয়ার বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন গতকাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত পেতে তার কাছে পাঠানোর জন্য সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চেয়ে সামারি পাঠানো হবে।’

‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’ প্রকল্পের আওতায় এসব ট্যাব কেনা হয়েছিল। মানুষ গণনার কাজ গেল বছরের ১৫ জুন শুরু হয়ে ২১ জুন শেষ হয়েছে। এখন এই ট্যাবগুলোর ব্যবহার নেই। ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত পরিসংখ্যান ভবনে পড়ে আছে ট্যাবগুলো। বিপুল অঙ্কের টাকায় কেনা এসব ট্যাব কোথায় ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়ে উপায় খুঁজে পেয়েছে বিবিএস। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত চাওয়ার উপায়টিতে একমত হন বিবিএস কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্যাব কেনার পরিকল্পনার সময়ই ঠিক করা উচিত ছিল, জনশুমারির পর এগুলো কোথায় ব্যবহার করা হবে। এখানে পরিকল্পনায় গলদের বিষয়টি স্পষ্ট।

এদিকে ট্যাবগুলো কোন প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া যায়, তার ওপর মতামত দিতে গত ডিসেম্বরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে চিঠি পাঠায় পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ। ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানে ট্যাব বিতরণ করলে এর আইনগত ও পদ্ধতিগত দিক কী হতে পারে, তা খতিয়ে দেখতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত সব মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়া যায়নি।

স্বাধীনতার পর থেকে পাঁচবার জনশুমারির তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল কাগজে বা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। গত বছরের ১৫ থেকে ২১ জুন দেশজুড়ে পরিচালিত ষষ্ঠ জনশুমারিতে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল পদ্ধতিতে ট্যাবের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ট্যাব ব্যবহার নিয়ে খোদ বিবিএসের মধ্যেই আলোচনা ছিল।

প্রাপ্ত নথি ঘেঁটে জানা যায়, বিবিএসের হাতে এখন মোট ট্যাব আছে ৪ লাখ ১০ হাজার, যার মধ্যে জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের আওতায় কেনা হয় তিন লাখ ৯৫ হাজার। দেশীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন ট্যাব সরবরাহ করেছে, যার ওয়ারেন্টি পিরিয়ড দুই বছর। বাকি ১৫ হাজার কেনা হয় অন্য প্রকল্পের আওতায়।

ভবিষ্যতে কোনো জরিপ ও শুমারির কাজে ট্যাব ব্যবহারের চাহিদা চেয়ে গেল বছরের অক্টোবরে বিবিএসের মাঠপর্যায়ের অফিস ও ঢাকা কার্যালয়ের বিভিন্ন শাখায় চিঠি দেন সংস্থাটির মহাপরিচালক মতিয়ার রহমান।

ওই চিঠি পাওয়ার পর ‘অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৩’ পরিচালনার জন্য ১ লাখ ৪০ হাজার ট্যাবের চাহিদা পাওয়া যায়। তবে বিবিএস সূত্র জানায়, এ বছরের মধ্যে অর্থনৈতিক শুমারি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে এ প্রকল্পে এ বছর ট্যাব ব্যবহারেরও সম্ভাবনা নেই।

এ ছাড়া বিবিএসের বিভিন্ন শাখা থেকে ১৭ হাজার ৮১৮টি ট্যাবের চাহিদা আসে। বিবিএসের মাঠপর্যায় থেকে চাহিদা আসে তিন হাজার ৫১৭টি ট্যাবের। অন্যদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন বিভাগের দ্বিতীয় ও তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের দাপ্তরিক কাজে ব্যবহারের জন্য আরও ২৫০টি চাহিদাপত্র পায় বিবিএস। সব মিলিয়ে ১ লাখ ৬১ হাজার ৫৮৫টি ট্যাবের জন্য আবেদন পাওয়া যায়।

বিষয়টি সুরাহা করতে দফায় দফায় সভাও হয়। সেসব সভায় বেশ কিছু মতামত আসে। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয় এ বিষয়ে।

এই প্রথম দেশের ডিজিটাল জনশুমারিতে তথ্য সংগ্রহের জন্য ৪৪৭ কোটি ৭৭ লাখ ৭৭ হাজার ৬৭০ টাকা ব্যয়ে তিন লাখ ৯৫ হাজার ট্যাব (ট্যাবলয়েড) কেনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো- বিবিএস। এছাড়া ট্যাবগুলো ব্যবহার করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহে প্রায় চার লাখ গণনাকারী ও সুপারভাইজার নিয়োগ দেয় বিবিএস। তাদের সম্মানি বাবদ ৪৫৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। এসব টাকা বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট করা হয় বলে বিবিএস সূত্র জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, আইন অনুযায়ী প্রতি ১০ বছর পরপর দেশের প্রতিটি মানুষকে গণনার আওতায় আনা হয়। এজন্য ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’ প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়। শুরুতে এ প্রকল্পের খরচ ধরা হয় এক হাজার ৭৬১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১৮৩ কোটি ১১ লাখ টাকা খরচ করার কথা উল্লেখ করা হয় প্রকল্পের পরিকল্পনায়। পরে প্রকল্পের সংশোধনীতে ব্যয় কিছুটা কমে দাঁড়ায় এক হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা।

প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। দেশে জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন, এরমধ্যে পুরুষ আট কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ এবং নারী ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী ১২ হাজার ৬২৯ জন বলে জনশুমারীর প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে বিবিএস। আর দেশের এই সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ গুনতে খরচ করা হয়েছে এক হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা।

(ঢাকাটাইমস/০৩ফেব্রুয়ারি/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :