২০৫ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে ২০১ গম্বুজ মসজিদে জুমা পড়লেন ফরিদপুরের বৃদ্ধ

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০:০৫

কথায় আছে- ‘ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়’। সত্যি তাই, ইচ্ছে ছিল সাইকেল চালিয়ে জুমার নামাজ আদায় করার। যেমন ইচ্ছে, ঠিক তেমন কাজও তার। সাইকেল চালিয়ে প্রায় ২০৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ২০১ গম্বুজ মসজিদ জুমার নামাজ পড়ার জন্য এসেছেন ৫৮ বছর বয়সী রাসেল লাল বিশ্বাস। তার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সহযোগিতা করেছেন পরিবার ও স্বজনরা।

জুমার নামাজ আদায় করার জন্য গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার পাথালিয়া গ্রামে নির্মিত ২০১ গম্বুজ মসজিদে পৌঁছান। পরে দুপুরে স্থানীয় মুসল্লিদের সাথে নামাজ আদায় করেন। সে সময় তাকে দেখতে মুসল্লি ও স্থানীয় লোকজন ভিড় জমান। তার সাথে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ করেন মুসল্লিরা।

শুক্রবার ২০১ গম্বুজ মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন তিনি। এসময় শতশত মুসুলির কাছে প্রশংসায় ভাসেন রাসেল। বৃদ্ধ রাসেল লাল বিশ্বাসের বাড়ি ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার পৌর এলাকার পশ্চিম গারাখোলা গ্রামে। তিনি ওই এলাকার মৃত আব্দুল ছাত্তার বিশ্বাসের ছেলে। পেশায় তিনি বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি বলে জানান।

নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে বুধবার সকাল ৬টায় যাত্রা শুরু করেন রাসেল।

বৃদ্ধ রাসেল লাল বিশ্বাস জানান, পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার পাথালিয়া এলাকায় নির্মিত ২০১ গম্বুজের বিষয়ে জানতে পারেন। তিনি এসব মাধ্যমে জেনেছেন দৃষ্টি নন্দন এই ২০১ গম্বুজ মসজিদে প্রতি শুক্রবার দেশের বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ জুমার নামাজ পড়তে আসেন। সে থেকেই ইচ্ছে জাগে ২০১ গম্বুজ মসজিদে নামাজ পড়ার।

তিনি জানান, পরে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেন টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ওই মসজিদে আসার। বাসে এলে আশপাশের পরিবেশ দেখা যাবে না ভেবে পুরনো একটি সাইকেল নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। এ বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করলে তার স্ত্রী ও দুই সন্তান সাইকেল নিয়ে যেতে উৎসাহিত করেন। সেই উৎসাহ থেকে প্রায় ২০৫ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে মসজিদে আসতে সক্ষম হন।

রাসেল বিশ্বাসের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার সকাল ৬টার দিকে মধুখালী নিজ বাড়ি থেকে সাধারণ একটি পুরনো সাইকেল নিয়ে টাঙ্গাইলের গোপালপুরের ২০১ গম্বুজ মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হন। কোনো বিরতি না দিয়ে ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছান দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। ফেরিতে নদী পার হয়ে আরিচা ফেরিঘাটে আসেন। তারপর আবার সাইকেল চালানো শুরু করেন।

মানিকগঞ্জের শিবালয়, ঘিওর হয়ে দৌলতপুর উপজেলা সদরে আসেন বুধবার দুপুরে। সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার যাত্রা শুরু করেন রাসেল। এরপর টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলা পার হয়ে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার অলোয়া এলাকায় একটি মসজিদে রাতযাপনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু ওই এলাকার মতিয়ার রহমান নামে এক ব্যক্তি তাকে তার বাড়িতে রাতযাপন করার সুযোগ দেন। পরে আবারও প্রস্তুতি নেন গোপালপুরে যাওয়ার।

এরপর সেখান থেকে ভূঞাপুর হয়ে বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৭টায় আবার যাত্রা শুরু করেন গোপালপুরের উদ্দেশ্যে। দুপুর ১২টায় তিনি গোপালপুরের পাথালিয়া গ্রামে ২০১ গম্বুজ মসজিদে পৌঁছান। পরে দুপুরের নামাজ শেষে তিনি ওই এলাকা ঘুরে দেখেন। দীর্ঘ এই পথ পাড়ি দেয়ার পথে নতুন নতুন অনেক জায়গা দেখার সুযোগ হয়। এতে তার খুব ভালো লেগেছে। তাই পথে কোনো ক্লান্তি বোধ হয়নি বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় নূর আলমসহ বেশ কয়েকজন জানান, রাসেল বিশ্বাস নামে এই বৃদ্ধ লোকটি তার নিজ বাড়ি থেকে প্রায় ২০৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সাইকেলযোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে গোপালপুরের ২০১ গম্বুজ মসজিদে প্রাঙ্গণে পৌঁছান। পরে তাকে দেখতে লোকজন ভিড় করে। তার সাথে অনেকে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিদের সাথে। বিষয়টি খুবই প্রশংসনীয়।

২০১ গম্বুজ মসজিদের প্রতিষ্ঠাতার ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল করিম জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে মসজিদে এসে দেখি এক ব্যক্তি সাইকেলযোগে ২০১ মসজিদে এসেছে। পরে তার সাথে কথা বললে, তিনি এই মসজিদে নামাজ পড়া ইচ্ছের বিষয়টি জানান। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ শেষে তিনি ধনবাড়ীর নবাববাড়ী মসজিদ দেখার উদ্দেশ্যে রওনা হন। এখানে আসতে পেরে তিনি অনেক খুশি এবং তাকে আমরা ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

(ঢাকাটাইমস/০৩ফেব্রুয়ারি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :