পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পাস করলেন নগরকান্দার জসিম

সালথা-নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৯:১২

ফরিদপুরের নগরকান্দায় দিনমজুর বাবার ছেলে জসিম মাতুব্বর পা দিয়ে লিখে ৪.২৯ পেয়ে এইচএসসি পাস করেছেন। তিনি ফরিদপুর সিটি কলেজের বিএম শাখা থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন।

বুধবার দুপুরে এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের বিষয়টি জসিম নিজেই নিশ্চিত করেছেন। প্রতিবন্ধী জসিম উপজেলার তালমা ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের উত্তরপাড়ার দিনমজুর মো. হানিফ মাতুব্বর ও গৃহিণী তছিরন বেগম দম্পতির ছেলে।

জানা গেছে, জন্মের পর থেকেই নেই জসিমের দুটি হাত নেই। তারপরেও দারিদ্রের কারণে তিনি জীবনসংগ্রামের কঠিন পথ বেছে নেয়। কৃষক বাবার সংসারে হাল ধরতে ছোট্টবেলা থেকেই দক্ষতার সঙ্গে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি পড়ালেখাও চালিয়ে যান অদম্য এই মেধাবী শিক্ষার্থী। জসিম খেলতে পারেন ক্রিকেট ও গাইতে পারেন মুরশিদী গান। তার অদম্য ইচ্ছার কাছে হার মেনেছে শারীরিক প্রতিবন্ধিতা। জসিম লেখাপড়া শেষ করে সরকারি চাকরি করার প্রবল বাসনা তার।

বুধবার দুপুরে কথা হয় শারীরিক প্রতিবন্ধী জসিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, পা দিয়ে লিখে ফরিদপুর সিটি কলেজের বিএম শাখা থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ৪.২৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। এর আগে পা দিয়ে লিখে কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি ও তালমা নাজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি এবং এসএসসি পাস করেছি।

জসিম আরো বলেন, আমার বাবা একজন দিনমজুর। তার একার পক্ষে সংসার চালানো সম্ভব নয়। চার ভাই এক বোনের মধ্যে আমি সবার বড়। তাই শত প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছি। আমি কাজ করে যা উপার্জন করি, তা দিয়ে সংসারের খরচ মেটানোর পাশাপাশি অর্থ জমিয়ে রাখি। সেই অর্থ দিয়েই ছোট বোনের বিয়ে দিয়েছি। পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি সকলের সহযোগিতা চাই। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন, পড়ালেখা শেষ করে আমি যেন সরকারি একটা চাকরি করতে পারি।

জসিমের মা তছিরন বেগম বলেন, আমার ছেলে জসিম জন্মের পর থেকে প্রতিবন্ধী হলেও কোনো কাজে সে পিছিয়ে নেই সে। খেলাধুলাসহ সব কাজ সফলতার করে আসছে। আর পড়ালেখার প্রতি ছোট সময় থেকে ওর অনেক আগ্রহ। এবারও এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করার খবরটি শুনে আমাদের অনেক আনন্দ লাগছে। যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আল্লাহ ওর মনের আশা পূরণ করুক।

জসিমের বাবা হানিফ মাতুব্বর বলেন, আমার পাঁচ সন্তানের মধ্যে জসিম জন্মের পর থেকে প্রতিবন্ধী। তার একটি হাতও নেই। স্বাভাবিক চলাফেরাও ঠিকমত করতে পারে না। তবে জসিম শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও সে সবার চেয়ে বেশি মেধাবী। বিশেষ করে পড়ালেখার প্রতি অনেক মনোযোগ তার। বাবা হিসেবে ছেলের এই সাফল্যে আমি গর্বিত।

নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈনুল হক বলেন, এইচএসসি পরীক্ষায় হাতবিহীন জসিমের পাস করার খবর শুনেছি। এটা সত্যিই হাজারটি ভাল খবরের মধ্যে একটি সেরা অর্জনের খবর। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ছেলেটাকে অফিসে ডেকে এনে নিজের হাতে মিষ্টি খাওয়াব। পাশাপাশি জসিমের উচ্চশিক্ষার জন্য তাকে সব ধরণের সহযোগিতা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৮ফেব্রুয়ারি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :