প্রেমিকের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে নারীর অনশন, অর্থের বিনিময়ে মীমাংসা

সালথা-নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৫:০০

ফরিদপুরের সালথায় বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে টানা ১৮ অনশনে বসেছিল এক বিধবা নারী। ঘটনার থেকে অভিযুক্ত প্রেমিক পলাতক থাকলেও তার অনুপস্থিতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা মোটা অংকের টাকার বিনিময় বিষয়টি থামাচাপা দিয়ে মীমাংসা করে অনশনকারী নারীকে তার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ২টা থেকে শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রেমিকের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে অনশন করেন ওই নারী। উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের জুগীকান্দা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ৬ বছর আগে ওই নারীর স্বামী মারা যান। কিছুদিন পর ৩২ বছর বয়সী বিধবা নারী জুগীকান্দা গ্রামের ৩ সন্তানের জনক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. জাহিদ মাতুব্বরের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। ঘটনার রাতে তার ঘরে আসেন জাহিদ। এ সময় স্থানীয়রা তাকে ধরতে তিনি ধস্তাধস্তি করে পালিয়ে যান। কিন্তু রাত ২টার দিকে ওই নারী জাহিদের বাড়ি গিয়ে ওঠে। বিয়ের দাবিতে সেখানে টানা ১৮ ঘণ্টা অনশন করেন তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্ত জাহিদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে স্থানীয়রা প্রভাবশালী একটি মহল এই ঘটনাটি থামাচাপা দিয়ে মীমাংসা করে দেয়। তবে ওই নারী কত টাকা পেয়েছে সঠিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি।

জুগীকান্দা গ্রামের প্রভাবশালী বশির মাতুব্বর বলেন, ঘটনাটি নিজেদের মধ্যে ঘটেছে। তাই চেয়ারম্যানের নির্দেশে শুক্রবার সন্ধ্যায় মীমাংসা করে দিয়েছি। ওই সালিশ বৈঠকে স্থানীয় পিকুল মাতব্বর, গেদা মাতব্বর, শাহাদত মাতব্বর ও হেমায়েত মাতব্বর উপস্থিত ছিলেন। এখানে টাকা পয়সার কোনো লেনদেন হয়নি। এমনিতেই ওই নারীকে বুঝিয়ে শুনিয়ে তার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাঝারদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আফছার মাতুব্বর বলেন, শুনেছি প্রতিবেশী বাতাগ্রাম গ্রামের মাতব্বররা গিয়ে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে ঘটনাটি মিমাংসা দিয়েছে। কিভাবে মিমাংসা হয়েছে, তা বলতে পারবো না।

মীমাংসার আগে অনশনকারী নারী বলেন, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জাহিদ আমার সঙ্গে একাধিকবার মেলামেশাও করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে জাহিদ আমার বাড়িতে আসলে আমার ছেলে দেখে ফেলে। ঘটনার পর আমি সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না। তাই বিয়ের দাবিতে জাহিদের বাড়িতে এসেছি। এখন যদি জাহিদ আমাকে বিয়ে না করে, মরণ ছাড়া কোনো পথ নেই আমার। তবে মীমাংসার পর ওইনারী গা ঢাকা দেওয়ায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ওই নারীর পরিবার জানান, ভুক্তভোগী নারী কোথায় আছে, তা বলতে পারবো না। তবে ঘটনাটি স্থানীয় মাতব্বররা মীমাংসা করে দিয়েছে। অভিযুক্ত জাহিদ মাতুব্বর পলাতক থাকায় মুঠোফোনে বলেন, আমি ঢাকায় আছি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা, সত্য নয়। ষড়যন্ত্র করে ওই নারী আমার বাড়িতে এসে ওঠে। তারপরেও বিষয়টি স্থানীয়রা মাতব্বররা মীমাংসা করে দিয়েছেন। কিভাবে কত টাকার বিনিময় মীমাংসা করা হয়েছে সে বিষয় প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান।

এদিকে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, অভিযুক্ত জাহিদ একজন বড় পেঁয়াজের ব্যবসায়ী। তার অনেক টাকা আছে। সেই টাকার জোরে এমন ঘটনা ঘটিয়ে বেঁচে গেলেন। টাকার বিনিময় এসব নোংরা-ঘৃণীত ঘটনা থামাচাপা পড়ে যাওয়ার কারণে চরম মাত্রায় সমাজিক অবক্ষয় ঘটতে থাকবে। এমন ঘটনার বিচার হওয়া উচিত ছিল।

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ সাদিক বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১১ফেব্রুয়ারি/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :