বইমেলায় বিক্রি নেই, দামও বেশি
একুশে বইমেলায় প্রকাশক, পাঠক ও লেখকদের এ এক প্রাণের মিলনমেলা। মেলায় ১১তম দিনে মানুষের ঢল। তবে ছুটির দিনে স্টল-প্যাভিলিয়নগুলোতে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ে। পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে শিশু-কিশোরসহ বড়দের আগমনে ফিরেছে উচ্ছ্বাস। এছাড়া দিন যত যাচ্ছে মুখর হয়ে উঠেছে বইমেলা প্রাঙ্গণ।
শনিবার সরজমিনে একুশে বইমেলা ঘুরে দেখা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমিতে পরিবার-পরিজন, বন্ধুদের নিয়ে দলবেঁধে আসেন। আবার কেউ কেউ প্রিয় মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন মেলায়। আগতরা ঘুরে ঘুরে দেখছেন নিজের প্রিয় লেখকসহ অন্য লেখকদের নতুন বই। মাঝেমধ্যে কিনছেন বইও। তবে ক্রেতা-বিক্রেতারা বলেছেন, বইয়ের মূল্য বেশি হওয়াতে তুলনামূলক কম বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা জানান, এখনও মেলায় বই বিক্রি ভালোভাবে শুরু হয়নি। এখন ক্রেতার চেয়ে ঘুরতে আসা মানুষের সংখ্যা বেশি। গত কয়েক বছর ধরে করোনা মহামারির কারণে লেখক, দর্শনার্থী ও বইপ্রেমীদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল। তবে এবার বিক্রিও বাড়বে বলে আশাবাদী বিক্রেতারা।
রাজধানীর মহানগর প্রজেক্ট থেকে একুশে বই মেলায় এসেছেন ইরফান তালুকদার। তিনি ঢাকা টাইমসেক বলেন, একুশে বই মেলা শুরু হয়েছে না এসে পারি? আমি প্রতিবছর নবীন-প্রবীণদের নতুন নতুন অনেক বই কিনি। আমি বাজেট রাখি বই কেনার জন্য। আমি ফিকশন, নন-ফিকশন উভয় প্রকারের বই কিনি। কিন্তু এ বছর বইয়ের দামও বেশি। কাগজের মানও তেমন ভালো না। তারপরও বাজেট কমিয়ে হলেও কিছু বই কিনবো। তবে আমার মনে হয় বইয়ের দাম আরও কমে বিক্রি করলে ভালো হতো আমাদের মতো পাঠকদের।
কালান্তর প্রকাশনীর স্টাফ মো. ইয়াছিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, বইমেলাতে সন্ধ্যার পর মানুষের ঢল নামলেও সে অনুযায়ী বাড়েনি বইয়ের বিক্রি। তবে আসা আছে আগামী দিনগুলোতে বই বিক্রি বাড়তে পারে।
লাইট অফ হোপ প্রকাশনীর স্টাফ মো. রাহবার চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, বই মেলায় মানুষ আসছে কিন্তু সেই তুলনায় বিক্রি নেই। বই মেলায় পরিবার-পরিজনসহ বন্ধু-বান্ধব আসছেন ঠিকই। কিন্তু কেউ বই কিনেন কেউ আবার না কিনে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার বই কেনার আগ্রহ দেখালেও অতিরিক্ত দাম হওয়াতে স্টল থেকে বই না কিনে চলে যাচ্ছেন।
সাব্যসাচীর প্রকাশনীর প্রকাশক সানজানা মেহরান ঢাকা টাইমসকে বলেন, বই মেলায় পাঠক আছে, বইমেলা ঘুরে দেখে যাচ্ছে বই। পাঠকদের একটা সময়-সীমা আছে। যা অনেকেরই টার্গেট থাকে এতো তারিখের মধ্যে বই কিনবে। আবার অনেকেই মাসের শেষের দিকে কিনে। তার উপর এবার কাগজের দাম অতিরিক্ত হওয়াতে যেটা হয়েছে প্রকাশকরা সময় মতো স্টলে নতুন বই তুলতে পারছে না। এবং কাগজের দাম বাড়াতে স্বাভাবিকভাবে বইয়ের দামও বেড়ে গেছে।
সানজানা মেহরান বলেন, বাংলা একাডেমি থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ২৫ শতাংশ ছাড়া দিতে। আমরাও ২৫ শতাংশ ছাড় দিচ্ছি। তারপরও ক্রেতারা ২৫ শতাংশ ছাড় দেওয়ার পরও আরও কমে বই চায়। আমাদের পক্ষে এর চেয়ে দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না এই মুহূর্তে। বই বাঁধাইকরাসহ বই স্টলে আনতে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। ঠিক মতো স্টলে নতুন বই আসছে না।
সানজানা বলেন, ব্যবসা মন্দা, তবে আশা আছে ১৫ ফেব্রুয়ারির পর বই বিক্রি বাড়তে পারে। পাঠকরাও বই কিনতে একবারের জায়গায় অনেকবার ভাবছে। এমনিতে বই মেলা মোটামুটি গুছানো আরও একটু গুচানো হলে আমি মনে করি ভালো হতো্। তবে অনেক পাঠক বই কিনতে আসে না। উনারা শুধু ঘুরতে আসে। এটাও ভালো এবছর ঘুরতে আসছে সামনের বছর দু-একটা বই কেনার জন্য আসবে। এটা অবস্য ভালো দিক। সব মিলিয়ে আসা করি একেবারে খারাপ যাবে না বই মেলা। আবার একেবারে ভালোও যাবে না।
এবারের একুশে বইমেলায় নতুন বইয়ের মধ্যে পাঠক সমাবেশ থেকে মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার, ড. ওয়াহিদুজ্জামানের সিংগেল মাদার, আবু সাঈদ তুলুর বাংলাদেশের সমকালীন থিয়েটার, ড. লীনা তাপসী খানের কাজী নজরুলের সংগীত ভাবনা, ঐতিহ্য থেকে আবদুল মান্নান সৈয়দের আমার নজরুল, শান্তনু কায়সারের গভীর গভীরতর অসুখ: গদ্যসত্তার জীবনানন্দ দাশ, রবিশংকর বলের ধুলোবালিকথা, আগামী থেকে রফিকুর রশিদের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস সমগ্র, দীলতাজ রহমানের দাগের দামে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও নবীন-প্রবীণদের নতুন বই আসছে এবারের মেলায়।
(ঢাকাটাইমস/১১ফেব্রুয়ারি/পিআর/কেএম)