ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকরী বিস্ময়কর ঔষধি ত্বীন ফল

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৩, ০৯:৩৩ | প্রকাশিত : ০৪ মার্চ ২০২৩, ০৯:২০

বিস্ময়কর এবং আশ্চযর্জনক সুমিষ্ট স্বাদের রসালো এক ফলের নাম ত্বীন ফল। ত্বীন ফল এক প্রকার ডুমুর জাতীয় ফল। ত্বীনকে আঞ্জির নামে ডাকা হয়ে থাকে। ত্বীন উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম ফাইকাস কেরিকেল। ফাইকাস দলভুক্ত ৮০০ থেকে ১৯০০ প্রজাতির মধ্যে এই ত্বীন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যার বেশির ভাগ জন্মে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে উদ্যানতত্ত্বের সাথে ডুমুর ফলের নাম দীর্ঘকাল ধরে জড়িত। সৌদি আরব ও বাংলাদেশ এই ফলকে ত্বীন (ডুমুর) নামে ডাকলেও অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে ভারত, তুরস্ক, মিসর, জর্দান ও যুক্তরাষ্ট্রে এটি আঞ্জির নামে পরিচিত।

ত্বীন পৃথিবীর অনেক দেশে এর চাষাবাদ হয়। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম এশিয়ায় এটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয় এবং এটি হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। আফগানিস্তান থেকে পর্তুগাল পর্যন্ত এই ফলের বাণিজ্যিক চাষ হয়ে থাকে। এর আদি নিবাস মধ্যপ্রাচ্য। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় তুরস্কে। বৎসরে তিন লক্ষ টনের বেশি উৎপাদন হয় সেখানে। পরেই আছে মিশর, মরক্কো, আলজেরিয়া, ইরান এবং সিরিয়া।

আমাদের দেশে যে ডুমুর হয়ে থাকে সেগুলো সাধারণত কাকডুমুর। আকারে ছোট এবং পাখির খাবার হিসেবেই সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে। কোন কোন গ্রাম এলাকায় এই কাকডুমুর কাচা অবস্থায় সংগ্রহ করে সিদ্ধ করে বেটে চিংড়ি মাছ দিয়ে তেলে ভুনা করে খাওয়া হয়।

ত্বীন দেশীয় কাকডুমুর থেকে আকারে বড় হয়ে থাকে। এর ঘ্রাণ ও স্বাদ অনেকটা পাকা আবরদেশীয় খেজুরের মত, স্বাদে সুমিষ্ট, খুবই সুস্বাদু এবং রসালো। এককথায় বলা যায় ঘ্রাণে, স্বাদে আর পুষ্টিগুণে সেরা একটি ফল হচ্ছে ত্বীন। ত্বীন গাছ তিন থেকে দশ মিটার পর্যন্ত বড় হয়ে থাকে। গাছটি ঘন এবং খসখসে পাতায় ভরপুর থাকে। ত্বীন ফল দিয়ে জ্যাম, জেলি, চাটনি ইত্যাদি তৈরি করে খাওয়া যায়।

ত্বীন বা ডুমুর গাছগুলো সাধারণত পাতলা, দ্রুত বর্ধনশীল এবং বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। যার ফলে গাছগুলো উচ্চতার চেয়ে প্রস্থে বেশি হয়ে থাকে। ত্বীন চরম জলবায়ু অর্থাৎ শুষ্ক ও শীত প্রধান দেশে চাষ হলেও আমরা প্রমাণ করেছি নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতেও ৩৬৫ দিন এ ফল উৎপাদন সম্ভব।

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে ব্যাপক ত্বীন চাষাবাদের ফলে পোশাক শিল্পের পাশাপাশি বিকল্প আরেকটা সম্ভাবনা হিসেবে ত্বীন ফলের চাহিদা দেখা দিয়েছে। ত্বীন একটি সম্ভাবনাময় ফসল। যা চাষ করে দেশের বেকারত্ব দূর এবং রপ্তানি করে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআনে ত্বীন নামে একটি সুরা আছে। আত-ত্বীন সূরায় বর্ণিত ত্বীন ও জয়তুন ফলের গুণাগুণ সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। মহান আল্লাহ্ ত্বীন ফলের নামে কসম খেয়েছেন। হযরত আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) জান্নাতে থাকাকালীন আল্লাহর নিষেধ অমান্য করে গন্ধম খাওয়ার পর যখন বস্ত্রহীন হয়ে পরেছিলেন তখন এই ত্বীন ফলের পাতা দিয়েই ওনারা লজ্জা নিবারন করেছিলেন। তাই বলা যায় ত্বীন একটি জান্নাতী ফল। রাসুল (সা.) ত্বীন ফল অনুসারীদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়ার সময় বলতেন, ‘এটি খাও, কারণ এতে অনেক রোগের ঔষধ রয়েছে।’

ত্বীন ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ১, ভিটামিন বি ২, ছাড়াও প্রায় সব রকমের জরুরি নিউট্রিশনস যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, সোডিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম ইত্যাদি আছে। ভিটামিন-এ, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাবজনিত রোগে এটি বেশ কার্যকরী। কার্বোহাইড্রেট, সুগার, ফ্যাট, প্রোটিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ছাড়াও বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর ত্বীন ফল। পুষ্টিগুণের পাশাপাশি ত্বীন ফলের অনেক ঔষধি গুণও রয়েছে। জেনে নিন ত্বীন ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা-

ক্যানসার প্রতিরোধ করে

মরণব্যাধি ক্যানসার দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। সচেতন রোগীর প্রাথমিক অবস্থায় রোগ ধরা পড়লে যথাযথ চিকিৎসায় ক্যানসার পুরোপুরি সেরে যেতে পারে অথবা নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক সহজ হয়। এজন্য আপনি প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি ত্বীন ফল খেতে পারেন। ত্বীন ফল ক্যানসারের জন্য খুবই উপকারী। গবেষণায় উঠে এসেছে, যেসকল নারীরা তাদের ডায়েটের অংশ হিসেবে রোজ ত্বীন গ্রহন করেন তাদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কম। মূলত ত্বীন -এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কোলন ক্যানসার রোধেও ত্বীন ফল বেশ কার্যকর।

কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে

রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি মানে হৃদপিণ্ডের ঝুঁকি। তাই রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। ত্বীন ফলের ফাইবার শরীরে দ্রুত শোষিত হয়। এর ফাইবার দ্রুত দ্রবীভূত হয়ে করতে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এছাড়াও ত্বীন ফলে বিদ্যমান পেকটিন কোলেস্টেরল কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

ক্যালসিয়াম,পটাসিয়াম,আয়রন ও জিংক সমৃদ্ধ ত্বীন-কে যৌন পরিপূরক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে রয়েছে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম,যা সেক্স হরমোন ও এস্ট্রোজেন ও এন্ড্রোজেন উৎপাদনে সাহায্য করে। ত্বীন ফল নারী ও পুরুষের বিভিন্ন ধরনের যৌন সমস্যা সমাধান করে এবং যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে। এর সুফল পেতে সারারাত দুধের মধ্যে ত্বীন ফল ভিজিয়ে রেখে সকালে পান করুন।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে

উচ্চরক্তচাপ জনিত সমস্যায় যদি ভুগে থাকেন তবে নিয়মিত ত্বীন ফল গ্রহণ আপনার রক্তচাপ আশানুরূপভাবে কমতে শুরু করবে। ত্বীন ফলে প্রচুর পরিমাণ পটাসিয়াম বিদ্যমান। এটি উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

হজমে সাহায্য করে

ত্বীন ফলে বিদ্যমান উচ্চ ফাইবার আপনার হজমকে উন্নত করবে। এটি বিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রেহাই দেয়। ত্বীন ফল ডায়ারিয়া নিরায়মেও কাজ করে এবং সম্পূর্ণ হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে। হজমকে উন্নত করতে নিয়মিত ২-৩টি ত্বীন ফল পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে পান করুন। এর সাথে চাইলে মধুও মিশিয়ে নিতে পারেন।

রক্তস্বল্পতা দূর করে

ত্বীন ফলে আয়রনের প্রাচুর্য্য আপনার শরীরের রক্তস্বল্পতা ও আয়রনের ঘাটতি পূরন করবে। নারীদের দেহে আয়রনের পরিমাণ সঠিক রাখা একান্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায়ও মায়ের দেহে আয়রনের পরিমাণ নিশ্চিত করতে পারে ত্বীন ফল। এতে উপস্থিত আয়রনের কার্যকারিতা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ ও দূর করতে সাহায্য করে।

হাড়কে করে তুলবে মজবুত ও শক্তিশালী

হাড়ের সুস্থতায় ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদানটি আমাদের দেহে উৎপাদন হয় না। তাই একমাত্র খাদ্যাভাসের মাধ্যমেই শরীরে এর চাহিদা পূরন করতে হয়। ত্বীনে মজুত ক্যালসিয়াম আপনার দেহে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরন করে হাড়কে করে তুলবে মজবুত ও শক্তিশালী। এছাড়াও এটি পটাসিয়ামের ভাল উৎস হওয়ায় হাড়ের ক্ষয় রোধেও উপকারী।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে, এই অসাধারণ ফলটি ওজন কমাতে যেমন সাহায্য করবে তেমনি চর্মসার ব্যক্তির জন্যও বয়ে আনবে সুসংবাদ। ত্বীন ফলের উচ্চ ফাইবার দেহের অতিরিক্ত ক্যালোরি হ্রাস করতে সক্ষম। আবার এই ফল বেশি পরিমানে খেলে এর উন্নত পুষ্টি উপাদান ওজন বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তাই স্থুল ও রোগা উভয়ের জন্যই এটি আশীর্বাদ স্বরূপ।

অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট গুণসম্পন্ন

ত্বীন ফলের রয়েছে অসাধারণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্ষমতা। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্রিয়া আপনার শরীরকে জীবাণু মুক্ত রাখবে এবং রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও প্লাজমার লিপোপ্রোটিন বৃদ্ধিতেও এর বেশ সুনাম রয়েছে।

দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়

ত্বীন ফলটি নিয়মিত গ্রহণের মাধ্যমে আপনার দৃষ্টি ক্ষমতাকে উন্নত করতে পারেন। ম্যাকুলার অবক্ষয়ের কারনে বয়স্কদের দর্শন শক্তি লোপ পায়। এতে উপস্থিত ভিটামিন এ ম্যাকুলার অবক্ষয় রোধ করে এবং দৃষ্টি ক্ষমতাকে উন্নত করে। এছাড়াও রেটিনাল ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সক্ষম এই ফল।

ত্বকের সৌন্দর্যে

বাড়তি বয়সের ছাপ হিসেবে মুখে ফুটে উঠে বলিরেখার মত যত সমস্যা। এক গবেষণায় জানা যায়, ত্বীন ত্বকের বলিরেখা দূর করতে বেশ কার্যকর। এটি ত্বকে গভীর থেকে কাজ করে ফলে ব্রণ ও ব্রনের দাগ দূর করতেও এর জুরি নেই। ভিটামিন সি এবং এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্রিয়া ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ত্বককে সুন্দর ও কোমল করে তুলে।

চুলের পরিচর্যায়

কেবল সুস্বাস্থ্যেই নয়, চুলের যত্নেও ত্বীন এর বিকল্প নেই। চুল পরা কমাতে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে এটি। কারন এতে আছে চুলের জন্য উপকারী ভিটামিন সি,ই ও ম্যাগনেসিয়াম। চুলের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে এর খ্যাতি বেশ পুরোনো। এটি স্ক্যাল্পের ময়েশ্চার ধরে রাখে।

গলা ব্যাথা দূর করে

গলা ব্যাথা কমাতে সহায়তা করবে ত্বীন ফল। এটি গলা ব্যাথা কেবল উপশমই করে না, তা প্রতিরোধেও কাজ করে। এটি ভোকাল কর্ডের জন্যও বেশ উপযোগী। টনসিলের নিরাময়েও ব্যবহার করা হয় ত্বীন ফল।

(ঢাকাটাইমস/০৪ মার্চ/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :