বাগানে পানির সংকট, চা-পাতা চয়ন পিছিয়ে যাওয়ার আশংকা

আব্দুল বাছিত বাচ্চু, মৌলভীবাজার
| আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৩, ১৪:২০ | প্রকাশিত : ০৯ মার্চ ২০২৩, ১২:৪৩
ফাইল ছবি।

মৌসুমের শুরুতে দেশের চা-বাগানগুলোতে পানির সংকট চলছে। প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চায়ের চয়ন পিছিয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তারা। পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে রেড স্পাইডারসহ নানা ধরনের পোকামাকড়ের আক্রমণেরও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে চায়ের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত মাসে সিলেটে ২৫-৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও মৌলভীবাজার, কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল এলাকার বাগানগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ।

চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ১০২ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গতবছর দেশে চা উৎপাদন হয়েছে ৯৩.৮২৯ মিলিয়ন কেজি। যদিও গত মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০০ মিলিয়ন কেজি। গত আগস্টে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে তারা কর্ম বিরতি করেন। এ কারণে ওই আগস্ট মাসে উৎপাদন কম হওয়ায় মূলত ২০২২ মৌসূমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি বলে ধারণা করা হচ্ছে । তবে এখন যেহেতু চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে, এ কারণে চলতি মৌসুমে চা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

চা বোর্ডের হিসেব অনুযায়ী দেশে মোট নিবন্ধনকৃত ১৬৭টি টি-এস্টেট ও চা বাগান রয়েছে। এতে সর্বমোট দুই লাখ ৭৯ হাজার ৫০৬.৮৮ একরে চা উৎপাদন হয়ে আসছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে রয়েছে ৭৬টি এস্টেট ও ১৫টি চা বাগান (এক লাখ ৫৬ হাজার ১৯১.৯৪ একর), হবিগঞ্জ জেলায় রয়েছে ২২টি টি-এস্টেট ও তিনটি চা বাগান (৫৪ হাজার ১৬৪.১৬ একর), সিলেট জেলায় রয়েছে ১২টি টি-এস্টেট ও সাতটি চা বাগান (২৮ হাজার ৯৩৬.৩২ একর), চট্টগ্রাম জেলায় রয়েছে ১৮টি টি-এস্টেট ও তিনটি চা বাগান (৩৪ হাজার ৫৬০.৪৫ একর), রাঙ্গামাটি জেলায় রয়েছে একটি টি-এস্টেট ও একটি চা বাগান (৭৯৪.৯৪ একর), পঞ্চগড় জেলায় রয়েছে আটটি চা বাগান (চার হাজার ৮১৮.২৯৫ একর) এবং ঠাকুরগাঁওয়ে রয়েছে একটি চা বাগান (৪০.৭৭একর)।

অন্যদিকে ২০২১ মৌসুমে উদপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭৭.৭৭৮ মিলিয়ন কেজির বিপরীতে উৎপাদন হয় ৯৬.৫০৬ মিলিয়ন কেজি। একইভাবে ২০২০ মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭৫.৯৪০ মিলিয়ন কেজির বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উৎপাদন হয়েছিল ৮৬.৩৯৪ মিলিয়ন কেজি। ২০১৯ মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৪.১৪০ মিলিয়ন কেজি তার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছিল ৯৬.০৬৯ মিলিয়ন কেজি। ২০১৮ মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭২,৩৯০ মিলিয়ন কেজি তার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৮২.১৩৪ মিলিয়ন কেজি।

বাগান সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে মারাত্মক খরার মধ্যে চা-বাগানগুলো। অথচ বাগানগুলো এখন সবুজে ঢাকা থাকার কথা থাকলেও ধূলায় ধূসরিত। পাতা ছাড়ছে না চা-গাছগুলো।

সিলেটের ‘হবিবপুর বাগান’-এর ব্যবস্থাপক হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘চা একটি সংবেদনশীল কৃষিপণ্য। এজন্য প্রয়োজন সুষম আবহাওয়া, সঠিক পরিচর্যা। কিন্তু এবার আবহাওয়া বেশ এলোমেলো।’

বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের নর্থ সিলেট ভ্যালির চেয়ারম্যান নোমান হায়দার চৌধূরী বলেন, ‘এখন খুব বাজে অবস্থা যাচ্ছে। বৃষ্টির দেখা নেই।’ তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা প্রোনিং (চা-গাছ ছেঁটে দেওয়া) শেষ করেছি, খাল, লেবার শেড ইত্যাদি সংস্কার হয়েছে।’ তিনি বলেন, বৃষ্টি হলে চা-গাছ কুড়ি ছাড়বে। আর মার্চের প্রথম সপ্তাহে ‘চা চয়ন’ (পাতি তোলা) শুরু হবে। সিলেট, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের চা-বাগানের ব্যবস্থাপক, শ্রমিক ও মালিক এখন বৃষ্টির জন্য চাতকের মতো চেয়ে আছেন।

২০২৩ সালে দেশে চা উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ১০০ মিলিয়ন কেজির বেশি। ২০২২ সালেও লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০০ মিলিয়ন কেজি। বন্যা ও চা-শ্রমিকদের আন্দোলনসহ নানা কারণে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তাই এ বছর অনেক আশা নিয়ে বাগান সংশ্লিষ্টরা উৎপাদনে নামেন। কিন্তু খরার কারণে সমস্যা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে ১৪০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এর মধ্যে ১৩০ মিলিয়ন কেজি চা দিয়ে দেশের চাহিদা পূরণ করা হবে এবং বাকি ১০ মিলিয়ন কেজি চা বিদেশে রপ্তানি করা হবে। এমনি সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের (বিটিবি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম।

(ঢাকাটাইমস/৯মার্চ/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :