আস্থা সংকটে সংলাপ

রুদ্র রাসেল, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৬ মার্চ ২০২৩, ১১:০৫

সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যা নিরসন করে নির্বাচনপূর্ব লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির পরামর্শ বিশেষজ্ঞমহল থেকে এলেও দৃশ্যত সে পথে হাঁটছে না দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এই দুই দলেই জোটবদ্ধ হওয়ায় তাদের সমঝোতাকেই অধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। তবে সংলাপের বিষয়ে প্রকাশ্যে ‘না’ বলে যাচ্ছেন উভয় দলের নেতারা।

বেশ কিছুদিন ধরে সংলাপ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে বিশ্বাসের ঘাটতির বিষয়টি উঠে এসেছে। বিএনপির সন্দেহ রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রতি। তারা মনে করছে, সংলাপ এক ধরনের ফাঁদ হতে পারে। যাতে পা দিলে আগের নির্বাচনগুলোর মতো পরিণতি ভোগ করে আরও ৫ বছরের জন্য ছিটকে পড়তে হতে পারে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে। আর আওয়ামী লীগেরও বিশ্বাসে ঘাটতি রয়েছে বিএনপির প্রতি। দলটির একাধিক নেতা মনে করছেন, বিএনপি সংলাপের পরও তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুর ভেতর দিয়ে ওয়ানইলেভেনের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করতে পারে। সব মিলিয়ে বিশ্বাসের ঘাটতিতে সংলাপের পথে হাঁটতে ভরসা পাচ্ছে না উভয় দল।

যদিও ইতোমধ্যেই বিএনপি সংলাপে রাজি হবে কিনা সেই মতামত যাচাইয়ের জন্য তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করছেন। এখন পর্যন্ত যে কটি বৈঠক হয়েছে, এতে সংলাপের দিকে না গিয়ে রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরানোতে আস্থা প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের বিএনপিপন্থি জনপ্রতিনিধিরা। অন্যদিকে, বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও সংলাপে সমাধান দেখছেন না।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতারাও বলছেন, সংলাপ ডাকা হবে না। কোনো সংলাপ হবে না। সংলাপে রাজি নয় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও। তারা বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার দিকেই হাঁটার ইঙ্গিত দিচ্ছেন দলকে। তাদের বিশ্বাস, আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল নির্মাণসহ দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানা খাতে যে যুগান্তকারী উন্নয়ন করেছে, তাতে জনগণ আওয়ামী লীগকেই আবার ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনতে চায়।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা ততই বাড়ছে। বিএনপির দাবি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে না আনলে বিএনপি কি নির্বাচনে আসবে, না এলে কেমন নির্বাচন হবে, দেশ কি সহিংসতার দিকে যাচ্ছে? এমন নানা প্রশ্ন, নানা চিন্তা-ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে মানুষের মুখে মুখে।

গত একমাস ধরেই নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম। তবে চলতি মাসের শুরু থেকেই সেই উত্তাপ আরো বাড়ছে। একইসঙ্গে বাড়ছে আলোচনা, বাড়ছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজপথের মহড়া। উভয় দলই রাজপথের দখলে থাকতে চায়। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু নিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন নিয়ে রাজপথে আছে। আর আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের নামে রাজপথে অবস্থান করছে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে।

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পরিবর্তে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা। আগামী কোরবানির ঈদের আগেই এক দফার আন্দোলনে নামার পরামর্শও দিয়েছেন তারা। পাশাপাশি বর্তমান দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না বলেও তাদের মতামত জানান জনপ্রতিনিধিরা। তারা মনে করেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সরকারের সঙ্গে সংলাপে বিএনপির অর্জন ছিল শূন্য।

গত মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের নীতিনির্ধারকদের মতবিনিময় সভায় এসব পরামর্শ ও প্রস্তাব দেন তৃণমূল জনপ্রতিনিধিরা। বিকাল সোয়া ৩টা থেকে রাত সোয়া ৯টা পর্যন্ত চলে এই সভা। সভায় ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত নির্বাচিত বিএনপির চট্টগ্রাম সাংগঠনিক বিভাগের সাবেক ও বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের ১৯৫ জন চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। যাদের মধ্যে ৩২ জন বক্তব্য দেন। লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্ত হয়ে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের মতামত শোনেন।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রংপুর বিভাগের ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে বিএনপির এ কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর খুলনা, সিলেট, বরিশাল, ঢাকা, ফরিদপুর ও কুমিল্লা অঞ্চলের ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে বিএনপি। ওই ছয় মতবিনিময় সভায় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ও বর্তমান ১ হাজার ১৯৭ জন চেয়ারম্যান অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ২০৮ জন বক্তব্য দেন। গতকাল রাজশাহী বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের সঙ্গেও এসব বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। গত মঙ্গলবার দুপুরে গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপির সংলাপ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিএনপি কোনো সংলাপ করবে না।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপির কেউ কোনো সংলাপ করবে না। প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়ে কথা রাখেন না।

মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল বিএনপি। ওই সংলাপে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের আর কোনো গ্রেপ্তার করা হবে না, পুলিশি হয়রানি হবে না, গায়েবি মামলা হবে না। কিন্তু এর তিনদিন পর থেকে আমাদের প্রার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে।

অপরদিকে, সদ্য সমাপ্ত কাতার সফর নিয়ে গত সোমবার বিকালে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে বসা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৫ আগস্ট আমার বাবা-মাকে হত্যা করা হয়েছে। গ্রেনেড হামলা, বোমা হামলা করে আমাকেও হত্যার চেষ্টা করা হয়। এরপরও তাদের সাথে বৈঠকে বসেছি শুধু দেশের স্বার্থে। কিন্তু তারা একের পর এক অপমান করে গেল। এত অপমানের পরও তাদের সঙ্গে আবার কীসের বৈঠক?

(ঢাকাটাইমস/১৬মার্চ/আরআর/আরকেএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :