সরকারি প্রাথমিক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে উপস্থিত ১ ছাত্রী!

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৩, ১৭:৫৭ | প্রকাশিত : ২১ মার্চ ২০২৩, ১৭:৪২

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে ৩য় এবং ৫ম শ্রেণিতে কোনো ছাত্রছাত্রী নেই। ৪র্থ শ্রেণিতে মাত্র একজন ছাত্রী বসে লেখায় মগ্ন। শিক্ষক রুমে ৩ জন শিক্ষক বসে নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন। ১২টা থেকে ২য় শিফটের পাঠদান আরম্ভ করার নিয়ম হলেও ছাত্রছাত্রী না থাকায় শিক্ষকরা বসে অলস সময় পাড় করছেন। বিদ্যালয় চত্বরে সুনসান নীরবতা। দেখে বুঝার উপায় নেই এটি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

মঙ্গলবার দুপুরে আখাউড়া উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের আনোয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। ৪র্থ শ্রেণিতে উপস্থিত সেই কৃতী ছাত্রী হলো আলিফা, রোল ৩।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আনোয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৫ জন শিক্ষক রয়েছে। এরমধ্যে মঙ্গলবার প্রধান শিক্ষক সুলতানা ফেরদৌসী এবং সহকারী শিক্ষক মো. মনিরুল ইসলাম অসুস্থতার কারণে বিদ্যালয়ের আসেননি। বিদ্যালয়ের মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৬৫ জন ।

এরমধ্যে শিশু শ্রেণিতে ৭ জন, ১ম শ্রেণিতে ৯ জন, ২য় শ্রেণিতে ১১জন, ৩য় শ্রেণিতে ১৭ জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ১২ জন এবং ৫ম শ্রেণিতে ১১ জন রয়েছে। প্রথম শিফট সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এবং ২য় শিফট বেলা ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত পাঠকার্যক্রম চলে।

তবে শিক্ষকরা দাবী করেন সকালে ১ম শিফটে শিশু শ্রেণি থেকে ২য় শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রী উপস্থিতি ভালো ছিল। ২য় শিফটে ছাত্রছাত্রী না আসার বিষয়টি তারা বুঝতে পারছেন না।

তবে, এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিদ্যালয়ের পড়ালেখার মান এবং ফলাফল ভালো না। শিক্ষকরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে না। এজন্য ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। পড়ালেখার মান ভালো না হওয়ায় অভিভাবকরা এ বিদ্যালয়ে ছেলেমেয়ে দিতে চায় না।

বিদ্যালয়ের পাশের বাড়ির বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, শিক্ষকরা ঠিকমতো বিদ্যালয়ে আসে না। ঠিকমত পাঠদান করায় না। এজন্য ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয়ের আসতে চায় না।

বিদ্যালয়ের সাবেক বিদ্যুৎসাহী সদস্য ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মোঃ সাদেক ভূইয়া বলেন, আমি তিন বার সদস্য ছিলাম। শিক্ষকরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে না। তাদের গাফিলতি আছে। গলেখাপড়ার মান ভালো না। পড়ালেখা মান ভালো না। তাই অভিভাবকেরা ছেলে মেয়ে দিতে চায় না।

বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তাহমিদা আক্তার বলেন, পাশে একটা মাদরাসা আছে। অনেক ছাত্র সেখানে পড়ে স্কুলে আসে। এজন্য বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী আনতে আমাদের কষ্ট হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতানা ফেরদৌসী বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ ছুটি নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভাইয়ের বাসায় এসেছি। আমার বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী মোটামুটি উপস্থিতি থাকে। আজকে কেন এরকম হলো বুঝতে পারছি না। তিনি আরও বলেন শিক্ষকরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে। নিয়মিত পাঠদান হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষক চিকিৎসকের কাছে যাবেন বলে আমার কাছ থেকে মৌখিকভাবে ছুটি নিয়েছেন। আরেকজন শিক্ষকে অনুপস্থিতির বিষয়টি আমি জানি না। তবে বিদ্যালয়ে মাত্র ১ জন ছাত্রীর উপস্থিতি অপ্রত্যাশিত। আমি প্রধান শিক্ষককে বলব ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি করার জন্য উঠান বৈঠক, হোম ভিজিটসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে।

আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার অংগ্যজাই মারমা বলেন, বিষয়টি আমি আপনার কাছ থেকে জানলাম। এ বিষয়ে শিক্ষা অফিসারকে তলব করে বিষয়টি জানতে চাইব।

(ঢাকাটাইমস/২১মার্চ/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :