বিচারকের পা ধরে অভিভাবককে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

বগুড়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ মার্চ ২০২৩, ০৯:৪৬

প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে শিক্ষার্থীর মাকে এক নারী বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।

তারা ঘটনার সম্মানজনক বিচারের দাবিতে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দুই দফা সড়ক অবরোধ এবং স্কুলে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। পরে বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেন। কিন্তু তাতেও শিক্ষার্থীরা অনড় থাকলে পরে জেলা প্রশাসক বগুড়া জেলা জজের সঙ্গে কথা বলে যখন জানান যে, ওই বিচারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তখন শিক্ষার্থীরা শান্ত হন এবং রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা বাড়ি ফিরতে শুরু করেন।

জানা গেছে, বগুড়া শহরের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে (ভিএম) অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ে। স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থী প্রতিদিন শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিয়ে পরিচ্ছন্ন করে। গত সোমবার ক্লাস ঝাড়ু দেওয়ার কথা ছিল বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ের। তবে নিজেকে বিচারকের মেয়ে পরিচয় দিয়ে সে ক্লাস ঝাড়ু দিতে অস্বীকার করে। এ নিয়ে তার সঙ্গে অন্য সহপাঠীদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। বিষয়টি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের ডাকলে বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনও আসেন। সেখানে তিনি মেয়ের পক্ষ নিয়ে অন্য অভিভাবকদের অপমানজনক নানা কথা বলেন। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষিকার সামনেই দুই অভিভাবককে বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে হয়।

ঘটনা জানাজানি হলে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে স্কুলের অন্য শিক্ষার্থীরা। বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের বিচার দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে তারা স্কুলের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করেন।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলছে, গত সোমবার রাতে বিচারকের মেয়ে মেসেঞ্জারে সহপাঠীদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অপমানজনক নানা বার্তা পাঠায়। যার উত্তর দেয় চার সহপাঠী। এ নিয়ে মঙ্গলবার বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনকে ওই চার মেয়ের অভিভাবককে ডাকতে বলেন। সকাল ১১টার দিকে প্রধান শিক্ষকের ডাকে ওই চার ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে আসেন। এ সময় বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিন মেয়ের পক্ষ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অপমানজনক কথা বলেন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার হুমকি দেন। এ সময় দুই অভিভাবককে ওই বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে নেওয়া হয়।

স্কুলের এক সহকারী শিক্ষিকা বলেন, ‘বিচারকের মেয়ে ও কিছু শিক্ষার্থীর পাল্টাপাল্টি বার্তা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সকালে প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে বিচার বসানো হয়। এ সময় বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জেলে দেওয়ার হুমকি দেন। পরে দুই অভিভাবক নিজে থেকে তার পা ধরে ক্ষমা চান। তাদের কেউ বাধ্য করেনি।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি, সোমবার বিচারকের মেয়ের ক্লাস ঝাড়ু দেওয়া কথা ছিল। তবে সে তিন মাস আগে এই স্কুলে ভর্তি হওয়ায় এখনও পরিবেশ হয়তো বুঝে উঠতে পারেনি। এজন্য সে ঝাড়ু দিতে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে কাজটি করে। এসময় অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে কটাক্ষ করে, যা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ কারণে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু অভিভাবকের মাফ চাওয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে। অভিভাবকরা ভয় পেয়ে এভাবে মাফ চেয়েছেন। তাঁদের কেউ বাধ্য করেনি। এই মাফ চাওয়াটা শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারেনি।

এ সময় জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, আজকের ঘটনার জন্য শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদের বিরুদ্ধে কোন মামলা বা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। তিনি ঘটনাটি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা ও আইসিটি) নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের আশ্বাস দেন। কিন্তু তার পরেও শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অনড় থাকলে এক পর্যায়ে তিনি জেলা জজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন।

এরপর তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা কেউ চিৎকার করবে না। তোমাদের বিষয়টা আমি জেলা জজকে জানিয়েছি। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি। যে বিচারকের সঙ্গে একটি ইনসিডেন্ট ঘটেছিল। ইতিমধ্যে হাইকোর্ট জেনেছে, আইন মন্ত্রণালয় জেনেছে। তার বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা অলরেডি চালু হয়ে গেছে। জেলা জজ সাহেব তোমাদেরকে এই মেসেজটি দিতে বলেছে।’

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ কোন শিক্ষক যদি অন্যায়ভাবে কোন ছাত্রীর বা কোন অভিভাবকের সাথে অন্যায় কোন আচরণ করে তাহলে সেটার ব্যাপারে আমাদের যে তদন্ত কমিটি আছে তারা সেটি চিহ্নিত করে বিধিমত ব্যবস্থা নিবে।

জেলা প্রশাসকের ওই বক্তব্যের পর শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে রাত ৯টা ৩০ মিনিটে বিদ্যালয় ছেড়ে চলে যায়।

এর আগে ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে সিনিয়র শিক্ষক মোবাশ্বেরা বেগম বলেন, বিষয়টি এই রকম নয়। এক ফেসবুক পোস্ট নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ঝামেলা বাধে। এরপরে সকাল ১১টার সময় ঐ বিচারক এসে কিছু শিক্ষার্থী এবং তার অভিভাবকদের বলেন যে এই শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে তাকে ও তার মেয়েকে নিয়ে অনেক অপমানজনক কথা কেন বলেছেন। এই সব লিখলে আইসিটি আইনে একটা মামলা হতে পারে সেটা কি তোমরা জানো ? এমন সময় একজন শিক্ষার্থীর মা এসে বিচারকের পায়ে ধরে ক্ষমা চান।

এ বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/২২মার্চ/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :