সালথায় ৭ মাস ধরে নির্মাণাধীন বীর নিবাসের কাজ বন্ধ, নগরকান্দায় ধীরগতি

ফরিদপুরের সালথায় গত সাত মাস ধরে বীর নিবাসের কাজ বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখানে মোট ১১টি বীর নিবাসের মধ্যে ৬টিরই অর্ধেক কাজ করার পর বাকি কাজ বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে নগরকান্দা উপজেলার বরাদ্দকৃত ৮২টি বীর নিবাসের কাজও চলছে ধীরগতিতে। গত ৯ জুলাই এসব বীর নিবাসের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও বেশিরভাগ বীর নিবাসের কাজ এখনো শেষ হয়নি।
জানা গেছে, সালথায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন ১১টি বাড়ি (বীর নিবাস) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৬৩৪ বর্গফিট প্রতিটি বীর নিবাসে দুটি বেড, দুটি টয়লেট, ডাইনিং ও কিচেন রুম তৈরি করা হচ্ছে।
প্রতিটি বীর নিবাসের জন্য সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার ৩৮২ টাকা। এই বীর নিবাসগুলোর দরপত্র আহ্বান করে কাজগুলো পান ফরিদপুরের মাসুম ফার্নিচার নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ১১টি বীর নিবাসের কাজ ২০২৩ সালের ৯ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও এর মধ্যে ৬টির কাজ এখনো শেষ হয়নি। ওই ৬টি বীর নিবাসের অর্ধেক কাজ করে গত ৬-৭ মাস ধরে বাকি কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
জানা যায়, নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হয়েছে। বেশিরভাগ বীর নিবাসের লিনটেল ও দেওয়াল পর্যন্ত ইট দিয়ে গেঁথে কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে গেছেন ঠিকাদারের লোকজন। এতে দেওয়ালে ধরছে নোনা ও ইট ভেঙে পড়ছে। কোনো কোনো মুক্তিযোদ্ধা পরিবার নতুন ঘরের আশায় পুরোনো বসতঘর ভেঙে ফেলেন। পরে তাঁরা সময় মতো নতুন ঘরে উঠতে না পেরে পুরোনো ঘর পুনরায় ঠিক করে বসবাস শুরু করেছেন।
উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের ভাওয়াল গ্রামের যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধকালীন কমান্ডার কে এ জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, সরকার আমাকে একটা বীর নিবাস বরাদ্দ দিয়েছে। ৯ মাস আগে আমার নিজের বসতভিটায় ওই বীর নিবাসের কাজ শুরু হয়। কিন্তু ৬ মাস ধরে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদারেরও কোনো খোঁজখবর পাচ্ছি না। নির্মাণ কাজের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কাজ শেষ হচ্ছে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরেও কোনো লাভ হয়নি। এ অবস্থায় পরিবারের লোকজন নিয়ে বিপাকে আছি।
কে এ জামানের মতো উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের নকুলহাটি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাদাত হোসেন বাদশা, যদুনন্দী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোসলেম শেখ, মাঝারদিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুস মিয়া, কুমারপট্টি গ্রামের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ছলেমান মাতব্বর, যদুনন্দী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মজিবুর রহমানের নামে বরাদ্দকৃত বীর নিবাসের একই অবস্থা।
মাঝারদিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুস মিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে বীর নিবাসের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। যার ফলে পলেস্তার খুলে পড়ছে। ঘরের সমস্ত খরচ সরকার বহন করার কথা থাকলেও মিস্ত্রিদের খাবারের খরচ আমাদের দেওয়া লাগছে। নতুন ঘরে ওঠার আশায় পুরাতন ঘর ভেঙে বিপাকে পড়েছি। পরে বাধ্য হয়ে পুরাতন ঘর মেরামত করে বসবাস করছি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাসুম ফার্নিচারের স্বত্বাধিকারী মাহফুজুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, বীর নিবাসের ঘর নির্মাণ কাজে কোনো নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, খুব দ্রুতই আমরা বীর নিবাসের কাজ শুরু করবো।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ইতোমধ্যে নির্মাণাধীন কয়েকটি বীর নিবাসের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এই মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে কাজগুলো শেষ করতে না পারলে টেন্ডার বাতিল করা হবে। পরে আমরা নিজেরাই কাজ সম্পন্ন করবো। আর নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয় খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: কেসিসি নির্বাচন: ৬ কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে বেকায়দায় বিএনপি
নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈনুল ঢাকা টাইমসকে বলেন, নগরকান্দায় মোট ৮২টি বীর নিবাস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৮টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৬টির কাজ এখনো শুরু হয়নি। বাকি কাজগুলো ধীরগতির বিষয় তিনি বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানদের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিলেও কাজ হচ্ছে না।
(ঢাকাটাইমস/১৮মে/এসএম)

মন্তব্য করুন