নবজাতক বিক্রি: শ্রীপুরে সেই হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৭ মে ২০২৩, ১২:১৮ | প্রকাশিত : ২৭ মে ২০২৩, ১১:০৪

গাজীপুরের শ্রীপুরে নবজাতককে বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধের ঘটনায় সেই হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ ও জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ঢাকাটাইমসসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নবজাতক বিক্রির ঘটনার খবর প্রকাশ হলে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় ভ্রাম্যমাণ আদালত নিউ এশিয়া ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।

এর আগে খবর প্রকাশ হয়, উপজেলা পৌর শহরের শ্রীপুর চৌরাস্তার নিউ এশিয়া ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি হাসপাতালে নবজাতককে বিক্রি করে বিল পরিশোধ করেছেন এক দম্পতি।

অভিযোগ উঠে হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ওই নবজাতককে টাকার বিনিময়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির হাতে বিক্রি করে দেন। পরে হাসপাতালের বিল রেখে প্রসূতি মাকে ১৪ হাজার টাকা হাতে দিয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড় দেন।

নবজাতকের মা প্রিয়া আক্তার (২৪) ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার মালিডাঙ্গা গ্রামের মো. রাসেলের স্ত্রী। তিনি উপজেলার শ্রীপুর-কাপাসিয়া সড়কের পাশে বাবুল সরকারের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। প্রিয়া-রাসেল দম্পতির ঘরে ৪ ও ৫ বছরের আরও দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

নবজাতকের বাবা রাসেল জানান, গত রবিবার (২১ মে) তার স্ত্রীর প্রসব ব্যথা উঠলে স্ত্রীকে নিয়ে শ্রীপুর চৌরাস্তা নিউ এশিয়া ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি হাসপাতালে বেলা ১১টায় ভর্তি করেন। পরে ওই হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রীকে পরীক্ষা করে ওই দিনই সিজারিয়ান অপারেশন করার পরামর্শ দেন। দ্রুত অপারেশন না করালে উভয়ের (মা-নবজাতকের) সমস্যা হওয়ার কথা জানান।

রাসেল তার কাছে সিজার করার টাকা না থাকার কথা জানালে পরিচালক রাসেল এই দম্পতিকে নবজাতক বিক্রি করার প্রস্তাব দেন। বলেন ছেলে নবজাতক হলে ৫০ হাজার এবং মেয়ে নবজাতক হলে ৩০ হাজার টাকা দেবেন। তবে সিজারিয়ান খরচের টাকা পরিশোধের পর তাদেরকে ওই টাকা দেওয়ার কথা জানান। ওইদিনই সন্ধ্যা ৭টায় প্রিয়া সিজারে মেয়ে জন্ম দেন।

রাসেল আরও জানান, পরদিন সোমবার (২২ মে) হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর অজ্ঞাত এক ব্যক্তির কাছে নবজাতক মেয়েকে বিক্রি করে দেন। তাদের নবজাতককে কোন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেছে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলে জাহাঙ্গীর নবজাতক ক্রেতার পরিচয় গোপন রাখেন। পরে জাহাঙ্গীর দম্পতিকে বলেন তাদের নবজাতককে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। ওই টাকার মধ্যে ১৬ হাজার টাকা হাসপাতালের সিজারিয়ান বিল পরিশোধ করে বাকি ১৪ হাজার টাকা তাদের কাছে বুঝিয়ে দেন।

এ ঘটনার দুদিন পর বুধবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় নবজাতক বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধের বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে স্থানীয় সাংবাদিকরা হাসপাতালে গিয়ে তথ্য চাইলে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অস্বীকার করে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা টাইমসকে জানান, প্রিয়া-রাসেল দম্পতির সম্মতি নিয়েই প্রিয়াকে সিজার করা হয়েছে। তাদের নবজাতককে তারাই বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেছেন।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল ফজল মো. নাসিম ঢাকা টাইমসকে বলেন, নবজাতক বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধের বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে বিষয়টি আমি শুনেছি। জানতে পেরেছি ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই হাসপাতালের সকল কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। নবজাতক বিক্রির বিষয়ে কোনো অভিযোগ এলে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন ও অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।

আরও পড়ুন: ফরিদপুরে খেয়া ভাড়া পাঁচ গুণ বেশি নিচ্ছে ইজারাদার

শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল মামুন বলেন, বিষয়টি জানার পর শুক্রবার ‘শ্রীপুর চৌরাস্তা নিউ এশিয়া ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি হাসপাতালে’ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এসময় কর্তৃপক্ষকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় ওই হাসপাতালের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৭মে/এসএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :