চোখের নিরাপত্তা ও ফ্যাশনে সানগ্লাসের বিকল্প নেই

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০১ জুন ২০২৩, ১০:৪৭ | প্রকাশিত : ০১ জুন ২০২৩, ১০:৩৭

প্রকৃতিতে এখন চলছে গরমকাল। গ্রীষ্মকালের তীব্র তাপ, প্রখর রোদ ও ধুলাবালু চোখের নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। চোখের জন্য তীব্র দাবদাহ বা গরম ক্ষতিকর। গরমের সময় সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বক রক্ষার জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার করা হয়, কিন্তু চোখের দিকে আমাদের খেয়ালই থাকে না। অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতি ছাড়াও তীব্র গরমের সময় চোখের অ্যালার্জির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও দূষণ এর অন্যতম কারণ। এ কারণে চোখ চুলকায় ও লালচে রং ধারণ করে। এমনকি রোদে গেলে চোখ জ্বালাপোড়াও করে। অনবরত পানি ঝরার সমস্যা গরমে অনেক বেশি হয়। চোখ লাল হয়ে যায়, চুলকায় ও চোখ দিয়ে পানি পড়ে। চোখের অঞ্জনি হলে চোখের পাতা ফুলে যায়, লাল হয় ও ব্যথা অনুভূত হয়। এগুলো সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়ে থাকে। চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়া এ সময়ের একটি বড় সমস্যা।

সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে চোখ বাঁচাতে সানগ্লাসের জুড়ি নেই। বাইরে বের হলে অবশ্যই সানগ্লাস ব্যবহার করুন। এটি সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চোখকে সুরক্ষা দেবে। সারা বছরই সানগ্লাস ব্যবহার করা খুব জরুরি। কারণ মেঘলা দিনেও সূর্যের ইউভি রশ্মি চোখের জন্য ক্ষতিকর। ধুলোবালি আর খোলা বাতাসে নানা রকম ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের শিকার হয় চোখ। তাই সূর্যের তাপ, ঠান্ডা বাতাস, ধুলাবালি থেকে রক্ষা, চোখের নিরাপত্তা ও ফ্যাশন সচেতনতার জন্য সানগ্লাসের বিকল্প নেই। নতুন সানগ্লাস কিনবেন? আপনার মুখের আকারের সঙ্গে কোন ধরনের চশমা বেশি ভাল মানাবে? কেউ রংচঙে, কেউ আবার কালো কিংবা বাদামি শেডই বেশি পছন্দ করেন। সানগ্লাস কেনার সময় আপনার মুখের গড়ন ও গায়ের রং এই দুটি বিষয় কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রইল তেমনই কিছু জরুরি খুঁটিনাটি।

পোশাকের মতো সারা বছর ধরেই রোদচশমার ফ্যাশনেও রকমারি ট্রেন্ড বার বার ঘুরেফিরে আসে। অনেকেই ওজনে হালকা, পাতলা ফ্রেম ও রঙিন শেডের সানগ্লাসের প্রতিই বেশি আগ্রহী। কেউ রংচঙে, কেউ আবার কালো কিংবা বাদামি শেডই বেশি পছন্দ করেন। কেবল ফ্যাশনের বিষয়টি মাথায় রাখলেই হবে না, চোখের সুরক্ষার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।

রাস্তার ধারে দোকানে যে সানগ্লাসগুলোতে বিক্রি হয় সেগুলোতে কিন্তু ইউভি সুরক্ষা থাকে না, তাই দোকান থেকে যাচাই করে নিয়ে তবেই সানগ্লাস কিনুন। তাই বলে খুব দামি সানগ্লাস কেনার প্রয়োজন যেমন নেই, তেমনই খুব কম খরচের সানগ্লাসও বাছবেন না। সানগ্লাসের মুখ্য উদ্দেশ্য, চোখকে সুরক্ষিত রাখা। তাই বাজারচলতি প্রচলিত ব্র্যান্ডের উপর ভরসা রাখাই ভাল।

সানগ্লাসের রং এখন আর বাদামি ও কালোরমধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বেগুনি, নীল, কমলা, সবুজ নানা রঙের সানগ্লাসও আজকের বাজারে বেশ জনপ্রিয়। স্বচ্ছ কাচের হালফ্যাশনেও সানগ্লাসেও আগ্রহ বাড়ছে। রঙের ভিন্নতার সঙ্গে পেয়ে যাবেন নানা কারুকাজের বর্ডারযুক্ত সানগ্লাসও। আপনার চেহারা ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই নয় অথচ ফ্যাশনের ঝোঁকে পড়ে রঙিন গ্লাস ও ডিজাইন যুক্ত সানগ্লাস কিনলেই মুশকিল। সানগ্লাস কেনার সময় আপনার মুখের গড়ন ও গায়ের রং এই দুটি বিষয় কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রইল তেমনই কিছু জরুরি খুঁটিনাটি।

গায়ের রঙের সঙ্গে খাপ খাইয়ে কিনুন সানগ্লাস। ত্বক উজ্জ্বল হলে নীল, সবুজ, বাদামি, লাল সব ফ্রেমই ভাল মানায়। একটু চাপা হলে মেটালিক ফ্রেম সঙ্গে কালো, কফি, গাঢ় বা হালকা বাদামি রঙের গ্লাস বেশ মানায়।

হার্ট শেপ আকারের মুখে টিয়ারড্রপ সানগ্লাস ও রাউন্ড সানগ্লাস বেশ মানিয়ে যায়। খুব বেশি বড় মাপের গ্লাস এ ক্ষেত্রে না কেনাই ভাল।

ডিম্বাকৃতি মুখে ক্যাট আই, অ্যাভিয়েটর, বাটারফ্লাই সানগ্লাস বেশি ভাল মানায়। শুধু লক্ষ রাখবেন ফ্রেমটি যাতে আপনার মুখের তুলনায় বেশি চওড়া না হয়।

ক্যাট আই কিংবা অ্যাভিয়েটর ফ্রেমের সানগ্লাসে গোল চেহারাকে বেশ লম্বাটে দেখায়। আয়তাকার, কোণযুক্ত ফ্রেমের সানগ্লাসও ভারী মুখের জন্য ভাল।

বর্গাকৃতির মুখে বড়ো মাপের সানগ্লাস বেশি ভাল মানায়। রাউন্ড বা ওভাল ফ্রেমের সানগ্লাস পড়়তে পারেন।

লম্বা মুখের সঙ্গে গোলাকৃতির সানগ্লাস ভাল যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, সানগ্লাসের ফ্রেম যেন খুব ছোট না হয়।

চতুর্ভুজাকৃতি মুখে ক্যাটস আই স্টাইল ভাল যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে সানগ্লাসে যেন চোখের কোল ঢেকে যায়, তাই সানগ্লাস একটু বড় হওয়াই ভাল।

কালো চশমা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সম্প্রতি গবেষকরা সাবধান করছেন। কারণ নিম্নমানের কাচ যে কালো চশমায় ব্যবহৃত হয়, সেগুলো চোখের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। এমনকি এগুলো চোখের পাতার ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। নিম্নমানের কালো চশমায় কাচের বদলে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। টানা বহুদিন এ চশমা পরলে চোখে ছানি পড়তে পারে। কর্নিয়া শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যায় অনেকে ভোগেন। এ সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে কম দামের কালো চশমা। চোখের পাওয়ার বদলে যেতে পারে-এ ধরনের কালো চশমা পরলে। চোখের লেন্সের নানা ধরনের সমস্যাও হতে পারে এগুলোর কারণে। দৃষ্টিশক্তিও কমতে পারে।

চশমার যত্ন যেভাবে নিবেন

সানগ্লাসের কাঁচের সাইডটি কখনো কোনো শক্ত কাঠ বা মেটালের উপর রাখবেন না। এতে ঘষা লেগে সানগ্লাসের সৌন্দর্য যেমন নষ্ট হয় তেমনি সানগ্লাস দিয়ে দেখার দৃষ্টিটাও ঘোলাটে হয়।

সানগ্লাস কখনো শুকনো কাপড় অথবা টিস্যু দিয়ে মুছবেন না। এতে সানগ্লাসের গায়ে লেগে থাকা ধুলা-ময়লা ইত্যাদির কণার ঘষাতে গ্লাসের বারোটা বেজে যেতে পারে। সানগ্লাসের সঙ্গে সবসময়ই একটা মাইক্রোফাইবারের কাপড়ের টুকরো দেওয়া থাকে। সেটি দিয়ে ভেজা অবস্থায় সানগ্লাসটি মুছতে হবে।

আমরা অহরহ চশমা মাথায় তুলে রাখি। মাথার উপরে সানগ্লাস দিয়ে চুল আটকিয়ে রাখি। এভাবে সানগ্লাস দিয়ে চুল আটকানোর কারণে সানগ্লাসের স্ক্রু খুব সহজেই আলগা হয়ে যায়। তাই সানগ্লাসটি খোলার পরপরই বক্সে অথবা শার্টের পকেটে ঝুলিয়ে দিন।

খুব বেশি তাপের কাছাকাছি সানগ্লাস কখনো রাখবেন না। এতে সানগ্লাসের মেটাল গলে গিয়ে সানগ্লাস ব্যবহার অনুপযোগী হতে পারে।

রোদ-চশমা শক্ত বাক্সে রাখার চেষ্টা করুন। যেন কেউ চশমার ওপর বসে পড়ে ভেঙে না ফেলে। আর বাক্সে চশমা রাখলে অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকবে ও চশমার গ্লাসে কোনো দাগ পড়বে না।

রোদ-চশমার নোজপ্যাড পরিষ্কারের জন্য পানিতে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে নরম ব্রাশ দিয়ে ধুয়ে নিতে পারেন।

প্রতিদিন অন্তত একবার চশমা পরিষ্কার করুন। এটুকু চোখের যত্নের জন্যও খুব প্রয়োজনীয়। হালকা গরম পানি ও নরম কোনো সাবান দিয়ে চশমা ধুয়ে নিন। চশমা পরিষ্কারের জন্য যে নরম কাপড়টি দোকান থেকে দেওয়া হয়, তা দিয়ে লেন্সের অংশ মুছে নিন। ক্ষারযুক্ত সাবান দিয়ে চশমা ধোবেন না। এতে চশমার লেন্স নষ্ট হয়।

বাড়তি কয়েক সেট চশমা রাখুন। অফিসের ব্যাগেও অবশ্যই স্পেয়ার চশমা রাখবেন। কোনও কারণে চশমা ভেঙে গেলে বা হারিয়ে গেলে কাজে আসবে।

এক হাত দিয়ে চশমা পরলে বা খুললে চশমা খুললে হাতল বাঁকা হয়ে যায়। লেন্সের পজিশন বদলে যায়। হাতলের শক্তি কমে যায়। এতে সহজেই চশমা খুলে পড়ে যেতে পারে। এজন্য দুই হাতে চশমা খুলুন ও পরুন।

চশমা একটু খুলে গেলে বা আলগা হলে এক আঙুল দিয়ে নাকের ঠিক ওপরের অংশে চাপ দিয়ে আগের অবস্থানে চশমা বসিয়ে দিলে নাকের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। এর পরিবর্তে দুই আঙুল দিয়ে গ্লাসের ওপরে-নিচে ধরে যথাস্থানে বসিয়ে দিন। আর এভাবেই আপনার পছন্দের রোদ চশমা বা সানগ্লাসটি অনেকদিন ব্যবহার করতে পারবেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সানগ্লাস শুধু পড়লেই হবে না। অবশ্যই ভালো মানের সানগ্লাস পড়তে হবে। ভালো সানগ্লাসের ব্যবহার ও নিয়মিত যত্নে আপনার চোখ নিরাপদ থাকবে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক সময় ধরে রোদে থাকা উচিত নয়। বেশি সময় যদি আপনি রোদে থাকেন তাহলে চোখে জ্বালাপোড়া, গ্লুকোমা, ছানিপড়া ও বয়স বাড়ার সঙ্গে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া শঙ্কা বেড়ে যায়। তাই দীর্ঘ সময় রোদে থাকা যাবে না। আর যদি থাকতেই হয় তবে অবশ্যই সানগ্লাস পড়তে হবে।

(ঢাকাটাইমস/০১ জুন /আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :