চীন-রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক কমানোর মার্কিন দাবি নাকচ সৌদির

ক্ষমতার বৈশ্বিক দ্বন্দ্বে কোনো একটি পক্ষে থাকতে চায় না মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব। বরং ক্ষমতাধর সব পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার সুফল বা সুবিধা পেতে চায়। বিষয়টি আমেরিকাকে জানিয়ে দিয়েছে দেশটি।
আর তাই চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা বা ঘনিষ্ঠতা কমানোর মার্কিন আহ্বান নাকচ করে দিয়েছে সৌদি এবং পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য সরকার।
একই সঙ্গে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ও তেলের দামের বিষয়েও মার্কিন চাপ প্রত্যাখ্যান করেছে রিয়াদ।
সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিংকেন পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের বৈঠকে যোগ দেন, যাতে বিভিন্ন ইস্যুতে রিয়াদ-ওয়াশিংটন সম্পর্কে যে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে তা কমানো যায়! কিন্তু তার সে আশা পূরণ হয়নি বলেই জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন অ্যান্টনি ব্লিংকেন এবং সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আলে সৌদ। সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীন-রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা কমানো, সিরিয়াকে আরব লীগের সদস্য না বানানো, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা ও তেল বাণিজ্য বিষয়ে সৌদিকে আমেরিকার পক্ষে থাকার বিষয়ে চেষ্টা চালান। বলেন, সৌদি আরব এবং ইসরাইলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে ওয়াশিংটন তার অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করে যাবে। তিনি বলেন, ইসরাইল এবং সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিষয়টি ওয়াশিংটনের কাছে অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনের বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করলে সৌদি আরবের খুব সামান্যই লাভ হবে। ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠা না হলে এই সম্পর্ক থেকে কোনো লাভ পাওয়া যাবে না। তিনি সুস্পষ্ট করে বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যু আরব দেশগুলোর কাছে এখনো কেন্দ্রীয় ইস্যু এবং এটি সৌদি আরবের পররাষ্ট্রনীতির শীর্ষে রয়েছে। গত ১৯ মে আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনেও তিনি একই কথা বলেছিলেন।
সৌদি সরকার ও তার সহযোগী আশপাশের আরব সরকারগুলো সাম্প্রতিক সময়ে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বেশ জোরদার করেছে। তাই এ নিয়ে উদ্বিগ্ন জো-বাইডেনের মার্কিন সরকার। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর যে কোনো একটি পক্ষকে বেছে নিতে মার্কিন ও ইউরোপীয় চাপ মানতে সৌদি সরকার রাজি নয়।
এ সম্পর্কে এক নিবন্ধে নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, সৌদি যুবরাজ এমবিএস তথা মুহাম্মাদ বিন সালমান ও তার সঙ্গীরা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিংকেনকে এটা জানিয়ে দিয়েছেন যে তারা ক্ষমতার বৈশ্বিক দ্বন্দ্বে কোনো একটি পক্ষের সমর্থক হতে বাধ্য নন, বরং ক্ষমতাধর সব পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার সুফল বা সুবিধা পেতে চান।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিংকেন-এর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান বলেছেন, বাণিজ্য ক্ষেত্রে চীন আমাদের সবচেয়ে বড় শরিক, তাই স্বাভাবিকভাবেই চীনের সঙ্গে আমাদের ব্যাপক লেনদেন ও অভিন্ন অবস্থান থাকবে। তিনি একই সঙ্গে একাধিক বা বহু বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে লেনদেন ও সহযোগিতা রাখা সম্ভব বলেও উল্লেখ করেছেন।
সৌদি সরকারের এমন অবস্থানের কারণে মার্কিন সরকার ক্ষুব্ধ বলে মার্কিন দৈনিকটি উল্লেখ করেছে। জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর থেকে রিয়াদ-ওয়াশিংটন সম্পর্ক কিছুটা শীতল হয়ে পড়ে।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের লজ্জাজনক পলায়নও সৌদি সরকার লক্ষ্য করেছে! তাই রিয়াদ এখন মার্কিন সরকারের চেয়েও বেইজিং ও মস্কোকে বেশি নির্ভরযোগ্য শক্তি বলে মনে করে।
সৌদি আরবের সঙ্গে রাশিয়া ও চীনের অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও এমনকি রাজনৈতিক ও সামরিক সম্পর্কও ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।
তেলের উৎপাদন বাড়ানোর মার্কিন চাপকেও উপেক্ষা করেছে সৌদি সরকার। বরং জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ ও উৎপাদন খাতে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সহযোগিতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে রিয়াদ। কিন্তু চীন ও রাশিয়া মার্কিন সরকারের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় এ বিষয়ে সৌদি অবস্থানে ক্ষুব্ধ মার্কিন কর্মকর্তারা। কোনো কোনো কংগ্রেসম্যান এ জন্য রিয়াদকে শাস্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ঢাকাটাইমস/১০জুন/এএসটি
সংবাদটি শেয়ার করুন
আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

কানাডার কয়েক ডজন কূটনীতিক প্রত্যাহার করতে বললো ভারত

আঙ্কারায় বিস্ফোরণের পর কুর্দি বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলা শুরু তুরস্কের

বাজেট ব্যর্থতা সত্ত্বেও ইউক্রেন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দূরে হাঁটবে না: বাইডেন

নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা শুরু হচ্ছে আজ, দেখুন সরাসরি

মেক্সিকোতে দুর্ঘটনায় ট্রাকে লুকিয়ে থাকা ১০ কিউবান অভিবাসী নিহত

মেক্সিকোতে গির্জার ছাদ ধসে নিহত ৯, আটকা পড়েছে ২০ জন

‘কর্মী-সম্পদ ও ভারত সরকারের সহযোগিতার অভাবে’ দিল্লিতে কার্যক্রম বন্ধ আফগান দূতাবাসের

শেষ মুহূর্তে শাটডাউন থেকে বাঁচল যুক্তরাষ্ট্র

মালদ্বীপে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চীনপন্থী প্রার্থী জয়ী
