এবি পার্টির সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু

আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের ‘সমঝোতা’ সহজ নয়

জাহিদ বিপ্লব, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৪ জুন ২০২৩, ১৩:০৪ | প্রকাশিত : ১৪ জুন ২০২৩, ০৯:২৯

দীর্ঘ রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে ‘রাজনৈতিক সমঝোতা’ সহজ নয় বলে মনে করেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান মঞ্জু।

আওয়ামী লীগ আর জামায়াতের বিষয়ে মঞ্জুর ভাষ্য, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে অনেক ধুরন্ধর। আর জামায়াত বরাবরই রাজনৈতিকভাবে অদূরদর্শী।

সাবেক জামায়াত নেতা মঞ্জু দলটির কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ছিলেন। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মঞ্জু একসময় চট্টগ্রাম কলেজ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।

জামায়াতে সংস্কারের দাবি তুললে ২০১৮ সালে ধর্মভিত্তিক দলটি তাকে বহিষ্কার করে। পরের বছরই আমার বাংলাদেশ (এবি) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন তিনি। সেই দল নিয়েই রাজনীতিতে সক্রিয় মঞ্জু।

রাজধানীর বিজয়নগরে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা টাইমসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বর্তমানে তার দল এবং রাজনীতির নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন।

ঢাকা টাইমস: দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

মজিবুর রহমান মঞ্জু: দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্টের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আলোচিত মার্কিন ভিসানীতির পর সরকারকে কিছুটা নমনীয় দেখা যাচ্ছে। আমরা যারা দীর্ঘদিন যাবত গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করছি, তাদের সবার মাঝে এক ধরনের আশা-উদ্দীপনাও কাজ করছে।

তবে বরাবরের মতোই অবৈধ সরকারের মন্ত্রীরা একেকজন একেকরকম কথা বলে যাচ্ছেন। আশা করছি, জনমানুষের একটা সমন্বিত গণ-আন্দোলন সহসাই দৃশ্যমান হবে। সরকারকে জনগণের দাবি মেনে পদত্যাগ করতে হবে এবং একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

ঢাকা টাইমস: আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবি পার্টি বড় কোনো জোটে যাবে কি না?

মজিবুর রহমান মঞ্জু: এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা এখন নির্বাচন নয় বরং আমাদের সামর্থ অনুযায়ী আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পদত্যাগের বিষয়টিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। তবে যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং নির্বাচন ঘনিয়ে আসার আগে বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট করে বলা যাবে।

ঢাকা টাইমস: বিএনপির সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলন প্রশ্নে কোনো আলোচনা বা যোগাযোগ হয়েছে?

মজিবুর রহমান মঞ্জু: বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি। তবে, আমরা যে দুই দফা দাবিতে আন্দোলন করছি। অর্থাৎ সরকারর পদত্যাগের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার। এই দুই দফার সঙ্গে বিএনপির দাবির মিল রয়েছে। বিএনপির সঙ্গে আমাদের জোট বা যুগপৎ সমঝোতা না থাকলেও রাজপথে দাবির ঐকমত্য আছে। সম্ভবত, বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে সখ্যতা রক্ষা করার জন্য আমাদেরকে এড়িয়ে চলতে চায়।

ঢাকা টাইমস: সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক নিয়ে কিছু কথা বলাবলি হচ্ছে, এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

মজিবুর রহমান মঞ্জু: রাজনীতিতে নানা সময়ে সত্য-মিথ্যা নানান কথা চাউর হয়। অনেকে ধারণা করেও অনেক কথা বলে থাকেন। আওয়ামী লীগ ও জামাতের সঙ্গে যে দীর্ঘ রাজনৈতিক বৈরিতা তাতে উভয় দলের সমঝোতা বা সমন্বয় সহজ বিষয় নয়।

তবে, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে অনেক ধুরন্ধর। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য তারা যেকোনো কিছু করতে পারে। তারা অতীতে জামায়াতের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করেছে। সরকার গঠনের জন্য সমর্থনও চেয়েছিল। আবার সুযোগ পেয়ে জামায়াত নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে।

পক্ষান্তরে জামায়াত বরাবরই রাজনৈতিকভাবে অদূরদর্শী। আওয়ামী লীগের যেকোনো ফাঁদে জামায়াত নেতারা সহজেই পা দিতে পারেন। ঐতিহাসিকভাবে এর অনেক প্রমাণ রয়েছে। এর আগে ২০১৩ সালে মতিঝিলে জামায়াতের একটি মিছিল থেকে পুলিশকে ফুল দেওয়া হয়েছিল এবং তার পরপরই তার প্রতিক্রিয়ায় শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি করে জামায়াত নেতাদের গণহারে ফাঁসির পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল।

জামায়াতের সমাবেশে সেদিনও দেখলাম দলটির নেতারা পুলিশকে ফুল দিচ্ছে। এখন চতুর্দিকে দেখবেন জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি প্রকট হবে। আমার আশংকা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার আইনি ও সাংবিধানিক যে প্রক্রিয়া, সিই প্রক্রিয়ায় যাওয়ার এটি একটি পূর্বলক্ষণও হতে পারে।

ঢাকা টাইমস: আপনি জামায়াতের রাজনীতি করতেন। হঠাৎ করে কেন নতুন রাজনৈতিক ধারায় জড়িত হলেন?

মজিবুর রহমান মঞ্জু: আমি যখন জামায়াতে ছিলাম তখন দলে সংস্কার প্রশ্নে দাবি তুলেছিলাম। জামায়াত এটাকে দলের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও ষড়যন্ত্র আকারে চিহ্নিত করে আমাকে বহিষ্কার করে।

এরপর সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে একটি সার্বজনীন কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যাশা নিয়ে আমি আমার স্বাধীন চিন্তা থেকে নতুন রাজনীতির ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করি।

ঢাকা টাইমস: অনেকে বলে থাকেন জামায়াতের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করতে সরকারের ইন্ধনে এবি পার্টি গঠিত হয়েছে। এবিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

মজিবুর রহমান মঞ্জু: এটি একটি ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য এবং ভ্রান্ত ধারণা। আমাদের এবি পার্টি সম্পর্কে দুই ধরনের অপপ্রচার চলমান। জামায়াত ও বিএনপির একটি অংশ দূরসন্ধিমূলকভাবে প্রচারণা চালায় যে, আমরা সরকারের ইন্ধনে নতুন দল গঠন করেছি। অপরদিকে সরকারি দল এবং তাদের সমর্থিত একটি অংশ অপপ্রচার চালায় যে, আমরা নাকি জামায়াতের বি টিম।

তবে নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে এতে আমরা বিচলিত নই। এবি পার্টি একটি স্বতন্ত্র ধারণা ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল। আমাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন প্রচারণা প্রমাণ করে আমরা সকলের মধ্যে একটা আগ্রহ তৈরি করতে পেরেছি।

ঢাকা টাইমস: আগামী জাতীয় নির্বাচনে আপনাদের প্রস্তুতি কি রকম?

মজিবুর রহমান মঞ্জু: নির্বাচনের জন্য আমাদের (এবি পার্টি) আলাদা কোনো প্রস্তুতি নেই। তবে দলের নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ব্যাপক তৎপরতা আমাদের চালাতে হয়েছে। এতে আমাদের অটোমেটিক একটি নির্বাচনী প্রস্তুতি হয়ে গেছে।

আগামী নির্বাচনে আমরা যদি জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করি সেক্ষেত্রে ৩০টি আসনকে প্রাধান্য দেবো। আর যদি এককভাবে নির্বাচন করি তাহলে ১৫০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রার্থী ও দলকে সংহত, জনপ্রিয় ও সর্বমহলে পরিচিত করানোর সুযোগ গ্রহণ করবো। এ প্রস্তুতিও আমাদের আছে।

ঢাকা টাইমস: এবি পার্টিসহ ১২টি দলকে নিবন্ধন দিতে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে ইসি, আপনি কতটুকু আশাবাদী?

মজিবুর রহমান মঞ্জু: প্রাথমিক বাছাইয়ের তালিকায় এবি পার্টির নাম এক নাম্বারে আছে। চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণের পরও আইন-নীতি এবং সততার ভিত্তিতে ইসি যদি সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তাহলে ইনশাল্লাহ এবি পার্টি নিবন্ধন পাবে। তবে আমরা নানাদিক থেকে ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছি, আমাদের জেলা, উপজেলার কমিটি, অফিস ও কর্মীদের সাক্ষাৎকার এবং যাচাই-বাছাইয়ের সময় প্রচুর হয়রানি করা হয়েছে।

কিন্তু কোনো কোনো দলের অফিস ও কমিটি যাচাইবাছাই ছাড়াই তাদের পজিটিভ রিপোর্ট দেয়ার আভাস আমরা পেয়েছি। কিছু বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগও তুলে ধরেছি। ইসি এখনো আমাদের কোনো জবাব দেয়নি।

ঢাকা টাইমস: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মজিবুর রহমান মঞ্জু: ঢাকা টাইমসের সম্পাদকসহ সকল কলাকুশলীকেও ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/১৩জুন/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে সরকারকে ভারসাম্যমূলক নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে’: ড. আতিউর রহমান

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

বীমা খাতে আস্থা ফেরাতে কাজ করছি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :