কুড়িগ্রামে কমছে পানি, এখনও পানিবন্দী ৫৬ হাজার মানুষ

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও ধরলার, দুধকুমারের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। নদ-নদীর পানি তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার ৯টি উপজেলার প্রায় ৫৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এ অবস্থায় ত্রাণ সহায়তা শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে দুধকুমার ও ধরলা বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সবকটি নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পানি কমতে থাকলে জেলায় বন্যা পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
উজানের ঢলের পানিতে নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়ে জেলার ৯ টি উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। এতে করে এসব এলাকার প্রায় ১৫ হাজার পরিবারের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য উঁচু স্থান,স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে প্লাবিত এলাকার বেশিরভাগ পরিবার জিনিসপত্র ও গবাদি পশু সরাতে না পারায় ঝুঁকি নিয়ে বসতবাড়িতেই অবস্থান করছেন।
জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার সুত্রে জানাযায়, শনিবার পর্যন্ত জেলার ৯ উপজেলার ৪৫ ইউনিয়নের ১৮৫ গ্রামের ১৪ হাজার ৬০টি পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। এসব পরিবারের ৫৬ হাজার ২৪০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে জীবনযাপন করছেন। সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে নাগেশ্বরী উপজেলা। সেখানে ৯টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে আট হাজারের বেশি মানুষ পানি বন্দি।
দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা শাখা আরও জানায়, উপজেলাগুলোতে দুর্গত মানুষদের সহায়তার জন্য এ পর্যন্ত ২৮৩ মেট্রিক টন চাল, সাড়ে আট লাখ টাকা ও ৩০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দুর্গত এলাকায় তা বিতরণ শুরু হয়েছে।
নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আহমেদ সাদাত বলেন, ‘উপজেলার ৯ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে বামনডাঙা ইউনিয়নের প্রায় পুরোটাই প্লাবিত। মানুষের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা ত্রাণ সহায়তা শুরু করেছি। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন তাদেরও ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’
এ দিকে জেলার ৯ উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারি ত্রাণ সহায়তা বিতরণ চলছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘উপজেলাগুলোতে দুর্গত মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হয়েছে। দুর্গত এলাকার পরিবারগুলোর মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া শুরু হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরতদের ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে । পশুখাদ্য যেন ঘাটতি না হয় সেই জন্য প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।’
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন শনিবার বলেন, ‘নদ-নদীর পানি কমছে। সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী উজানে বৃষ্টিপাত কমেছে। ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টা নদ-নদীর পানি কমে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। অল্প সময়ের মধ্যে নদ-নদীর পানি নেমে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।’
(ঢাকাটাইমস/১৬জুলাই/এআর)

মন্তব্য করুন