প্রধানমন্ত্রীর আগমনে স্বপ্নপূরণের আশায় রংপুরবাসী

রেজাউল ইসলাম বাবু, রংপুর
| আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২৩, ২৩:১৫ | প্রকাশিত : ০১ আগস্ট ২০২৩, ১৬:৫৫

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার রংপুরে আসছেন। সাড়ে ৪ বছর পর রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগীয় জনসভায় বক্তব্য রাখবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে পুরো নগরীতে এখন সাজ সাজ রব। নির্মাণ করা হয়েছে শতাধিক তোরণ। নানান রংয়ের বেনার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো নগরী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে কেন্দ্র করে আরও উন্নয়নের প্রতিশ্রæতির আশায় বুক বেঁধেছে রংপুরের মানুষ। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর রংপুরে এসে রংপুরের পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে দুইটি নির্বাচনী জনসভা করেছেন।

এবার সাড়ে ৪ বছরের বেশি সময় পর রংপুরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর থেকেই দ্বাদশ নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করবেন তিনি। তাই শেখ হাসিনাকে বরণ করতে প্রস্তুত রংপুরবাসী।

দলীয় শীর্ষ নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে বিভাগের ৫৮টি উপজেলা থেকে যোগ দেবেন নেতাকর্মীরা। জনসভা সফল করতে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় বর্ধিত সভা করা হয়েছে। ১০ লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে জানিয়েছেন তারা। এছাড়াও বিভাগীয় জনসভার পূর্বে প্রধানমন্ত্রীর বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

দলীয় নেতারা বলছেন, ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর জিলা স্কুল মাঠে মহাজোটের এক জনসভায় উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই থেকে উন্নয়নের মোড়কে বদলে যায় একসময়ের ‘মঙ্গাপীড়িত’ রংপুর।

এদিকে বর্তমান সরকারের আমলে রংপুরের যে সব উন্নয়ন হয়েছে এসবও জনগণের নিকট তুলে ধরছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে রংপুর বিভাগ, সিটি করপোরেশন, মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এ বছরের ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুর বিভাগীয় সদর দপ্তরের উদ্বোধন করেছেন। এছাড়া রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয়, মেরিন একাডেমি, উপজেলাগুলোতে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন, তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণসহ নানা উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়েছে। এলেঙ্গা-রংপুর ছয়লেন মহাসড়কের কাজ চলমান। পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এসব উন্নয়নের ফিরিস্তি জনগণের কাছে তুলে ধরছেন দলের একাধিক নেতা।

২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের মধ্যদিয়ে বদলে যেতে থাকে রংপুর। বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ও সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য রংপুর এখন উত্তরাঞ্চলের রাজধানী।

উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে ১৭ তলাবিশিষ্ট ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ, র‍্যাব-১৩ ব্যাটালিয়ন সদর দফতরসহ বিভিন্ন সরকারি অবকাঠামো। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষের ভাগ্যবদলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর রংপুর সফরকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন তিস্তা বেষ্টিত এই অঞ্চলের মানুষ।

তিস্তাপাড়ের সাধারণ মানুষ এবং তিস্তা নিয়ে যারা আন্দোলন করে আসছেন, তাদের আশা প্রধানমন্ত্রী রংপুরের জনসভায় বহু আকাঙ্ক্ষিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো সুখবর নিশ্চয়ই দেবেন। কারণ, পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় তিস্তা এখন উত্তরের মানুষের দুঃখ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর বন্যা এবং খরায় নদীপাড়ের মানুষের দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। তিস্তার দুই পাড়ের লাখ লাখ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করতে পারে একমাত্র মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে তিস্তাপাড়ের মানুষের পানির জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না।

তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, প্রধানমন্ত্রী রংপুরের পুত্রবধূ। ২০১১ থেকে ২০১২ সালের দিকে যখন ভারতের সঙ্গে পানিচুক্তি হলো না, তখন তিনি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছিলেন। আমরা সেই সময় তিস্তাপারের লক্ষাধিক মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে বিশাল মিছিল ও সমাবেশ করেছিলাম। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য সেটি এক যুগেও বাস্তবায়ন হয়নি।

নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সফিয়ার রহমান বলেন, আমরা কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও তিস্তাপাড়ের মানুষ ২ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে উপস্থিত হয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণার দাবি জানাব।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে রংপুরে চলছে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ। প্রতিদিন দলীয় নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে মহাসমাবেশ সফল করতে মিটিং মিছিল করছেন।

দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর এই মহাসমাবেশ রংপুরবাসীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জের। এই মহাসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত করেত তারা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন।

রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জাশেম বিন হোসেন জুম্মন বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা টানা তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে রংপুরকে যেভাবে উন্নয়নের মোড়কে সাজিয়েছেন, তা বিগত সময়ে কোনো সরকার করতে পারেনি। রংপুরে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। এখন মঙ্গাপীড়িত রংপুর বলা হয় না।

রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও গঙ্গাচড়া আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই রংপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়েছেন। তার আমলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের কারণে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রংপুরের মানুষ আওয়ামী লীগকে বিমুখ করবে না বলে তিনি মনে করেন।

(ঢাকাটাইমস/১আগস্ট/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :