কারাগার থেকে মুক্ত বুয়েটের ২৪ জনসহ ৩২ শিক্ষার্থী

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে গ্রেপ্তার বুয়েটের ২৪ জনসহ ৩২ শিক্ষার্থী সুনামগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে বের হয়েছেন।
বুধবার রাত পৌনে ১০টায় সুনামগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়।
এ সময় একে একে সবাই বের হলে তাদের পিতা মাতা ও স্থানীয় স্বজনরা তাদের গাড়িতে উঠান। এ সময় কারো সঙ্গে কোনো কথা বলেননি শিক্ষার্থীরা।
তিনদিন পর শিক্ষার্থীদের কারামুক্তিতে শিক্ষার্থী পরিবারে স্বস্তি ফিরেছে। অন্যদিকে তদন্ত চালিয়ে যাবে পুলিশ বলে জানান সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. এহসান শাহ্।
অভিভাবকদের দাবি তাদের সন্তানরা নির্দোষ তাদের পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
এর পূর্বে বুধবার দুপুরে তাহিরপুর চিফজুডিশিয়াল আদালতে হাজির করলে বিচারক রিমান্ডে না মঞ্জুর করে ফারহান সাদিক জামিনের আদেশ দেন। আদালত থেকে জামিনের কাগজ কারাগারে পাঠানোর পর রাতে তাদের সকল আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কারাকর্তৃপক্ষ তাদের বের করে।
বুয়েটের ২৪ জনসহ ৩২ শিক্ষার্থীর পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু হানিফ নোমানের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে টাঙ্গুয়ার হাওরে রবিবার বিকালে পুলিশের এই বিশেষ অভিযান নিয়ে এলাকায় নানা মহলে আলোচনা চলছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন,হাওরে এই মৌসুমে অনেক পর্যটক আসেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক থাকেন শিক্ষার্থী তারা দলবেঁধে আসেন এই ঘটনায় হাওরে আসা পর্যটকদের মধ্যে প্রভাব পরেছে।
নৌকার চালকরা জানায়, তারা অন্যান্য পর্যটকদের মতো সাভাবিকভাবে কথাবার্তা চলাচল করে। টাংগুয়ার হাওরে গিয়ে গোসল করে। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে ট্যাকেরঘাটের দিকে পাটলাই নদী দিয়ে নতুন বাজারের কাছে গেলে নৌকাসহ বুয়েটের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসে।
জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত ঢাকা থেকে পাওয়া গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান তাদের থানায় নিয়ে আসার পরে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন আলামত জব্দ করার পরই তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. এহসান শাহ্ জানান, আটককৃতরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তাদের মধ্যে কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষার্থীও রয়েছে।
আটককৃতরা সরকার বিরোধী নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা মনে করছেন তারা সবাই ইসলামী ছাত্র শিবির কর্তৃক মোটিভেটেট। আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলবে। পরে আমরা রিপোর্ট জমা দেব।
উল্লেখ, গত রবিবার (৩০ জুলাই) একটি পর্যটকবাহী নৌকা থেকে টাংগুয়ার হাওর থেকে ট্যাকেরঘাট যাওয়ার পথে তাদের গ্রেপ্তার করে তাহিরপুর থানা পুলিশ। এঘটনা জানাজানি হলে উপজেলা ও জেলা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তারকৃত সবাই ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী। এরপর আটকের ২৪ ঘণ্টা পর সোমবার বিকালে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটানো, জনসাধারণের জানমালের ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে গোপন ষড়যন্ত্র ও ধর্মীয় জিহাদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অপরাধে তাহিরপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাশেদুল কবির বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে সন্ধ্যায় আদালতে সোপর্দ করা হলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফারহান সাদিক ৩২ জনকে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন এবং দুইজনের বয়স ১৮ বছরের কম হওয়ায় তাদেরকে শিশু সংশোধনাগারে পাঠানোর আদেশ দেন নারী ও শিশু আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন। এদের মধ্যে ৩১ জন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী। অন্য তিন জনের দুই জন এই বছর এসএসসি পাস করেছে। একজন অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক বোরহান উদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, শিশু তানিমুল ইসলাম (১৫) ও রায়হান ইসলাম সাজিদকে (১৭) শিশু সংশোধনাগারে এবং অন্যদের জেল হাজতে পাঠানো হয়।
এদিকে, আদালত থেকে কারাগারে পাঠানোর সময় একাধিক শিক্ষার্থী দাবি করেন, তারা কোনো অপরাধ করেনি। তারা সবাই টাংগুয়ার হাওর, শহীদ সিরাজ লেকে বেড়াতে এসেছিল। আর পুলিশ কোনো কারণে কি তাদের অপরাধ কিছু না বলে ধরে নিয়ে আসে পরে আদালত পাঠায়। কী মামলা দায়ের করেছে তাও জানেন না তারা।
তাহিরপুর থানা পুলিশ ভাষ্য,তাহিরপুর উপজেলা বাজারের নৌকা ঘাট থেকে রোববার সকাল ৭টায় একটি নৌকায় করে ভুয়েটের ২৬ শিক্ষার্থী ও তাদের সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আরোও ৮ জন শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জনের একটি টিম টাঙ্গুয়ার হাওরের ঘুরতে যান। টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরার পর দুপুরের দিকে পাটলাই নদী দিয়ে জনসাধারণের জানমালের ক্ষতি সাধন এর উদ্দেশ্যে গোপন ষড়যন্ত্র এবং ধর্মীয় জিহাদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার একটি বৈঠক চলে। পরে পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তাহিরপুরের নতুন বাজারের সামনে নৌকাটি আসলে পুলিশের দুটি স্প্রিটবোট পর্যটকবাহী নৌকাটি থামিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে দীর্ঘ ২৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে (৩১জুলাই) সোমবার বিকালে সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯(সংশোধনী ২০১৩) বিভিন্ন ধারায় তাহিরপুর থানার এস আই রাশেদুল কবীর বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাইদ।
(ঢাকাটাইমস/২আগস্ট/এআর)

মন্তব্য করুন