দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাণিজ্যের নতুন দুয়ার খুলেছে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদকত, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট ২০২৩, ২০:২৯

বৈশ্বিক জিডিপি’র প্রায় ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণকারী পাঁচ দেশের জোট ব্রিকসের ১৫তম সম্মেলনে যোগ দিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও ব্যবসায়ী প্রতিনিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য নতুন দুয়ার খুলেছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশনের মধ্যেও এ সফরে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণসহ বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে গেছে।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বিকালে সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তেব্যে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।

সরকারপ্রধান বলেন, আমি দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের কথা তুলে ধরি। আমি তাঁদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য আহ্বান জানাই। বাংলাদেশের ব্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য আমাদের যে অভিযাত্রা সেখানে তাদের সম্পৃক্ত হওয়ারও আহ্বান জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আফ্রিকা মহাদেশের ৯টি দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতগণের অংশগ্রহণে আঞ্চলিক দূত সম্মেলন'-এ অংশগ্রহণ করি। সম্মেলনে রাষ্ট্রদূতগণ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টি তুলে ধরেন। রাষ্ট্রদূতদের সরকার কর্তৃক গৃহীত 'লুক আফ্রিকা পলিসি'র আওতায় আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক কূটনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দ্বিপক্ষীয় সম্ভাবনাময় খাতসমূহ চিহ্নিতকরণ ও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাই। এছাড়া, রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য রাষ্ট্রদূতদের স্বাগতিক দেশগুলোর সরকার যাতে জোরালো অবস্থান গ্রহণ করে সে জন্য কাজ করার নির্দেশনা প্রদান করি।।

তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছে সেদিন সন্ধ্যায় আমি ব্রিকস এর চেয়ার এবং সম্মেলনের আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে যোগদান করি। একই দিন সন্ধ্যায় চীনের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আমার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে 'সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্ব-এর বিষয়ে আমাদের পারস্পরিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করি।

‘চীনের প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশকে সব সময় সমর্থন দিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের জ্বালানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়তা করতে তাঁর দেশের আগ্রহের কথা জানান। পরদিন আমি ব্রিকস আফ্রিকা আউটরিচ অ্যান্ড ব্রিকস প্লাস ডায়ালগে অংশগ্রহণ করি। এ সভায় ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষ হতে আমি বক্তব্য প্রদান করি।

‘আমার বক্তব্যে আমি গত সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন এবং নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরি। একইসঙ্গে আমি রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে 'স্মার্ট' বাংলাদেশ' বিনির্মাণে গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করি। আমি বিশেষভাবে উল্লেখ করি যে, টেকসই উন্নয়নের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি নিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি। ২০০৬ সালে যেখানে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১.৫%, ২০২২ সালে আমরা দারিদ্র্যের হার কমিয়ে ১৮.৭% করেছি। একই সময়ের মধ্যে আমরা চরম দারিদ্র্যকে ২৫.১% থেকে ৫.৬% এ হ্রাস করেছি। আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীনতার অভিশাপ থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে চলেছি। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছর। গত সপ্তাহে, আমরা ১০ কোটি মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে 'স্মার্ট বাংলাদেশ' বিনির্মাণের লক্ষ্যে আমাদের আবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিল্প-কারখানা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ প্রয়োজন মর্মে উল্লেখ করি। আমি আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা সংস্কারের জন্য অপেক্ষমাণ থাকাকালীন কার্যকর বিকল্পের প্রয়জনীয়তাও তুলে ধরি।’

শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানে আমরা উৎপাদন, সাশ্রয়ী মূল্যের ওষুধ, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং দুর্যোগের ঝুঁকিহ্রাস বিষয়ে আমাদের দক্ষতার আফ্রিকার দেশসমূহের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে বাংলাদেশের সদিচ্ছা প্রকাশ করি। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, মানবপাচার, সাইবার এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ ইতাদি বিষয়ে সহযোগিতা বৃষ্টির প্রতি গুরুত্বারোপ করি। সম্মিলিতভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিশ্রুত অর্থায়ন এবং প্রযুক্তি প্রাপ্তির চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়েও আমি গুরুত্বারোপ করি। আমি ক্লাইমেট জাস্টিস, অভিবাসীদের অধিকার, ডিজিটাল ইকুইটি এবং টেকসই করণের বিষয়ে এক হওয়ার জন্য সকলকে আহ্বান জানাই।

তিনি বলেন, নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগসহ আইনভিত্তিক বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থা চালু রাখার প্রয়োজনীয়তা দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করি যে, বৈশ্বিক দক্ষিণে অবস্থানকারী দেশসমূহের ওপর আরোপিত কৃত্তিম সিদ্ধান্ত এবং বিভাজনের নীতিকে 'না' বলার এখনই উপযুক্ত সময়। সর্বজনীন নিয়ম ও মূল্যবোধকে অগ্নে পরিণত করার প্রচেষ্টাকে আমাদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নিষেধাজ্ঞা পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করতে হবে। আমাদের অবশ্যই সব হুমকি, উস্কানি ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। আমি বিপজ্জনক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় সম্পদ অপচয় না করে বিশ্বব্যাপী জনসাধারণের জন্য পণ্য ও পরিষেবা প্রদানে অর্থ সংস্থান করার জন্য আহ্বান জানাই। বিশ্বজুড়ে শান্তি ন্যায়বিচার ও স্থিতিশীলতার জন্য সকলকে দায়িত্বশীল হওয়ারও আহ্বান জানাই।

‘সেখানে আমি নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের সফলতা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে তুলে ধরেছি। সম্মেলনের সাইডলাইনে বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে আমার আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। বৈঠককালে তাঁরা বাংলাদেশের প্রস্তাবনার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তাঁরা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করেন’—যোগ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকের সময় বাণিজ্য, কৃষি, প্রাণি সম্পদ ইত্যাদি বিষয়ে অব্যাহত সহাযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়াও আমি তাঞ্জানিয়ার রাষ্ট্রপতি, মোজাম্বিকের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করি। তাঞ্জানিয়ার রাষ্ট্রপতিকে আমি জি-টু-জি ভিত্তিতে প্রযুক্তিগত সহায়তা বিনিময়, আইটি পণ্য ও পরিষেবার বাজারে প্রবেশ এবং স্টার্ট-আপগুলির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে যোগ উদ্যোগ শুরু করার প্রস্তাব দিই। এছাড়া, বাণিজ্য, ওষুধ শিল্পে বিনিয়োগ, চুক্তিভিত্তিক চাষাবাদ, সুনীল অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়। মোজাম্বিকের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পরিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিষয়ে সহমত হই। মোজাম্বিকের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর অংশগ্রহণে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে মোজাম্বিকের যুদ্ধবিরতি ও শান্তি পুনঃস্থাপন প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, একইদিন নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। সাক্ষাৎকালে তাঁকে আমি একটি উচ্চ আয়ের স্মার্ট বাংলাদেশ' বিনির্মাণে এনডিবিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানাই। তাছাড়াও ইরানের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠককালে বিপাক্ষিক সহযোগিতা বিষয়ক আলোচনা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা আয়োজিত গণসংবর্ধনায় ভার্চুয়ালি যোগদান করি। আমি তাঁদের দেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনযোগাযোগ বাড়াতে অনুরোধ করি। আমি তাঁদের বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠানোর মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশীদার হতে বলি।

ঢাকাটাইমস/২৯আগস্ট/জেএ/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

দেশের অর্থনীতিতে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের প্রভাবের আশঙ্কা প্রধানমন্ত্রীর

রবীন্দ্রনাথ মানুষের পরিশুদ্ধতার কথা ভাবতেন: সিমিন হোসেন

স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত্তি মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা: প্রতিমন্ত্রী

ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্রসচিব

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যুক্তরাজ্যের সহায়তা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

গণমাধ্যমের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

ভোক্তার কাছে প্রতিনিয়ত সস্তা হচ্ছে তামাকজাত দ্রব্য: গবেষণা

প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলার ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা

ধান কাটার মৌসুম হওয়ায় ভোটার উপস্থিতি কম: সিইসি

প্রযুক্তি খাতে নারীদের বিশেষ কোটা চালুর কথা জানালেন প্রতিমন্ত্রী পলক

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :