১০ মাসেও সন্ধান মেলেনি ৪২ জেলের, উৎকণ্ঠায় স্বজনরা

চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭:১২

বঙ্গোপসাগরে ট্রলারে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার জেলে। কিন্তু জেলেদের জন্য নেই কোনো নিরাপত্তা সরঞ্জাম। ফলে সমুদ্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবছরই বাড়ছে প্রাণহানির ঘটনা।

অভিযোগ রয়েছে, সরকারি নিষেধাজ্ঞা কিংবা বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে অধিক লাভের আশায় জেলেদেরকে সাগরে পাঠান ট্রলার ও আড়ৎ মালিকরা। মালিকদের লোভের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়লে নিখোঁজ বা মৃত জেলের লাশ উদ্ধারে অনেক সময় মালিকদের পাশে পাওয়া যায় না। চলতি বছর মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সাগরে গিয়ে গত ২৫ জুন ১৩ মাঝিমাল্লাসহ চরফ্যাশনের সামরাজ ঘাটের জাহাঙ্গীর মাঝির ট্রলার ডুবে যায়।

এরপরই গাফিলতির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। এ ঘটনার পর জাহাঙ্গীর মাঝি ও তার ছেলে আব্দুল গণিকে জেলেরা জীবিত উদ্ধার করেছেন। এরপর গত ২৮ জুন জাকির, রফিকুল ইসলাম, আনোয়ার ও জাকির নামের আরও ৪ জেলেকে জীবিত উদ্ধার করা হয় সাগর থেকে। এ ঘটনার ৬ দিন পর সাগরের তিন চর এলাকা থেকে নিখোঁজ শরীফ, মোহাম্মদ হারুন, আব্দুস সাত্তার হাওলাদার, ফজলে করিম, নুর ইসলাম মো. শিহাব ও রহিম মাঝির লাশ উদ্ধার করেছেন স্বজনরা।

এদের সবার বাড়ি ভোলার চরফ্যাশনে। পরিবারের অভিযোগ ট্রলার ও আড়ৎ মালিকদের অসহযোগিতা প্রয়োজনীয় জ্বালানি ও ট্রলারের অভাবে দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার তৎপরতা চালানো সম্ভব হয়নি।

নিহত নুর ইসলামের ভাই মো. রফিকের অভিযোগ, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আড়ৎ মালিক জয়নাল মিয়া ট্রলার দিয়ে সহযোগিতার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত করেননি। সেসময় উদ্ধার অভিযান চালানো হলে সবাইকে জীবিত পাওয়া যেত।

নিহত শিহাবের চাচা সিরাজ জানান, আড়তদার জ্বালানির তেল দেওয়ার কথা বলে দুইদিন ঘুরিয়েছে। পরে বিভিন্ন জেলে ও ট্রলার থেকে তেল তুলে সাহায্য নিয়ে সাগরে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে পাঁচ দিন পর ৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন থেকে পাননি কোনো সহযোগিতা অভিযোগ করছেন রহিম মাঝির ছেলে মিলন।

নিখোঁজ মনির মাঝির স্ত্রী নুসরাত বেগম জানান, মালিকপক্ষ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সাগরে মাছ ধরার নামে তাদের মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনার বিষয়টি প্রকাশ না করার জন্য হুমকি দিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, সরকার বা মালিকপক্ষ নিখোঁজদের সন্ধানে তৎপরতা চালায়নি। দুর্ঘটনার পর থেকে এসব পরিবারের অভাবের মধ্যে থাকলেও তাদের খোঁজ কেউ নেয়নি। মনির মাঝির ট্রলারে ছিলেন চরফ্যাশন চর কর্মী ইউনিয়নের নাংলা পাতা গ্রামের তৈয়ব, কবির ও আবুল কাশেম। তারা ছিল পরিবার একমাত্র উপার্জনকারী তাদের অনুপস্থিত পরিবার নেমে এসেছে চরম দুর্দশা।

আবুল কাশেমের ভাই মিজান অভিযোগ করে বলেন, মালিকপক্ষের লোভের কারণে তারা এখন নিঃস্ব। সাগরে গিয়ে প্রাণ গেলে বিচার বা সাহায্য কিছুই পাই না।

একই এলাকার ট্রলার চালক মাঝি নুরুল ইসলাম সিত্রাংয়ের কবল থেকে বেঁচে ফিরেছেন। তিনি জানান, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ম্যানেজ করে ট্রলার সাগরে পাঠানো হয়েছে। মহাজনের কাছ থেকে দাদন নেওয়ার কারণে ঝুঁকির মধ্যেও সাগরে যেতে বাধ্য হচ্ছে অনেকে জেলেই।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতি চরফ্যাশন উপজেলার সভাপতি মো. সোহাগ জানান, মালিকপক্ষের লোভের কারণে সাগরে জেলেদের সলিল সমাধির ঘটনা বেড়ে চলছে। সাগরে ডুবে নিখোঁজ জেলে পরিবারের দুর্দশা লাঘবে সরকার ও মালিকদের কেউই এগিয়ে আসে না।

চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেন মিনার জানান, জেলেদের উদ্ধারে সাগরে যাওয়ার মতো যানবাহন নেই। তারপরও জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও দুর্ঘটনা এড়াতে সচেতনতার পাশাপাশি আইন প্রয়োগ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/০২ সেপেটম্বর/ইএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সারাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :