আমদানির নিম্নমানের গমের ভুসিতে বাজার সয়লাব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:৩৬

আমদানি করা নিম্নমানের গমের ভুসি অবাধে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা পূরণের সক্ষমতা থাকার পরও ভুসি আমদানি করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশীয় উৎপাদকরা। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ৫০ শতাংশ আটা-ময়দার মিল। উৎপাদন বন্ধ থাকলে সংকট দেখা দেওয়ার পাশাপাশি দাম বাড়বে আটা-ময়দার। পশুর জন্য হুমকি ভেজাল গমের ভুসি বিক্রি হচ্ছে নামি কোম্পানির মোড়কে। নিরাপদ পশুখাদ্য নিশ্চিত করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে ভুসির আমদানি শুল্ক বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে বছরে গমের ভুসির চাহিদা ২১ লাখ ৯০ হাজার টন। সারা দেশে ছোট-বড় ১ হাজার ১০০-এর বেশি আটা-ময়দার মিলে উৎপাদন হয় ২২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন হলেও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে গমের ভুসি আমদানি করা হচ্ছে। এতে দেশি কোম্পানিগুলোর বিপুল পরিমাণ ভুসি অবিক্রীত থাকায় আটা-ময়দা উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। একই সমস্যায় ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে মোট আটা-ময়দার মিলের প্রায় অর্ধেকই। পশু-প্রাণীর জন্য হুমকি ভেজাল গো-খাদ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি দেশীয় শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে গমের ভুসি আমদানি শুল্ক বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ আটা-ময়দা মিল মালিক সমিতির সভাপতি জসিম উদ্দিন মৃধা বলেন, আমদানিকৃত ভুসি খুবই নিম্নমানের। তাই এসব ভুসি কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে আমাদের দেশের মিল মালিকদের উৎপাদিত ভুসি বিক্রি হচ্ছে না। গমের ভুসি আমদানিতে আটা-ময়দা আমদানির সমান শুল্ক আরোপ করা হলে আমরা টিকে থাকতে পারব।

বর্তমানে আটা-ময়দার আমদানি শুল্ক ৩৮ শতাংশ হলেও গমের ভুসি আমদানির শুল্ক মাত্র ৫ শতাংশ। আবার খামারিরা সরাসরি আমদানি করতে পারছেন কোনো শুল্ক ছাড়াই। এই সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দেশে নিম্নমানের ভুসি আমদানি ও নামি কোম্পানির মোড়কে (ব্যাগ) বাজারজাত করছে। এতে দেশি কোম্পানিগুলোর সুনাম নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নিম্নমানের গমের ভুসি বিক্রি করছে একটি অসাধু চক্র। ভেজাল গো-খাদ্য বিক্রি বন্ধের পাশাপাশি নিরাপদ গমের ভুসি বাজারজাত করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের উপপরিচালক ডা. মো. নাজমুল হক বলেন, আমরা ভেজাল গো-খাদ্যের (ভুসি) বিষয়ে কঠোর অবস্থানে। বিশেষ করে আমদানিকৃত ভুসিতে ভেজাল পেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। পশুর জন্য ক্ষতিকর এসব ভুসি আমদানিতে আমাদের নজরদারি রয়েছে। ভেজাল গমের ভুসি না কেনার জন্য খামারিদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্র জানায়, এক বছরের ব্যবধানে ভুসি আমদানি বেড়েছে ৮৮ শতাংশের বেশি। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫৩ মেট্রিক টন গমের ভুসি আমদানি করা হয়েছে। ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে আমদানি করা হয়েছিল ২ লাখ ৩৩ হাজার ৪১৬ মেট্রিক টন। চলমান ডলার সংকটে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি আমদানি ব্যাহত হলেও ভুসি আমদানি বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জরুরি পণ্যে এলসি উন্মুক্ত রাখার নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। গত বছরের ৬ নভেম্বর সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে খাদ্যপণ্য, সার ও জ্বালানি আমদানির এলসি খোলা নিশ্চিত করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করে একটি চক্র দেশীয় শিল্পকে ধ্বংস করতে নিম্নমানের গমের ভুসি আমদানি করছেন।

এ বিষয়ে বসুন্ধরা ফুডের বিভাগীয় প্রধান (বিক্রয় ও বিতরণ) রেদোয়ানুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে দেশের যে ভুসির চাহিদা আছে তার চেয়ে বেশি ভুসি দেশেই উৎপাদন হচ্ছে। সাধারণত গম থেকে ৩০ শতাংশ ভুসি উৎপাদন হয়। কারখানাগুলোতে উৎপাদিত ভুসি সর্বোচ্চ ৪-৫ দিনের বেশি মজুদ করে রাখা যায় না। মজুদ ভুসি বিক্রি করতে না পারলে নতুন করে উৎপাদনে যেতে পারে না কারখানাগুলো। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে বাজারে আটা-ময়দার সরবরাহ সংকট তৈরি হয়ে দাম বেড়ে যেতে পারে।’

রেদোয়ানুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত নিম্নমানের ভুসিতে বাজার সয়লাব। তাদের নিতে হয় না কোনো বিএসটিআই সনদ, লাগে না কোনো মান পরীক্ষা। এসব নিম্নমানের ভুসির কারণে একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় কোম্পানিগুলো। প্রাণিসম্পদ খাত হুমকির মুখে পড়ছে। দেশের আটা-ময়দার মিলগুলোতে পর্যাপ্ত থাকার পরও ভুসি আমদানির ফলে দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হচ্ছে। অন্যদিকে ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি ও জরুরি খাদ্যপণ্য আমদানি ব্যাহত হচ্ছে।’

বসুন্ধরা ফুডের এই কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে আমদানিকৃত আটা-ময়দায় ৩৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ রয়েছে, কিন্তু এর উপজাত (বাই প্রোডাক্ট) ভুসিতে মাত্র ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ আছে। যদিও পশুখাদ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো বিনা শুল্কে ভুসি আমদানি করতে পারছে। এসব নিম্নমানের ভুসি দেশের নামিদামি কোম্পানির বস্তা নকল করে বাজারজাত করছে। এতে মানসম্পন্ন পশুখাদ্য পাচ্ছেন না খামারিরা। জানতে চাইলে এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ডসের ইনস্টিটিউশন সেলসের মহাব্যবস্থাপক অবন্তি কুমার সরকার বলেন, নিম্নমানের আমদানিকৃত ভুসিতে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। আমাদের উৎপাদিত ভুসি বিক্রি করতে পারছি না। আমদানিকৃত ভুসি দেশে নামিদামি কোম্পানিগুলোর মোড়কে (ব্যাগ) মানুষকে ফাঁকি দিয়ে বিক্রি করছে। এতে আমাদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। অনেক মিল বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদেরটাও বন্ধের পথে। ভুসি বিক্রি করতে না পারায় আটা-ময়াদার উৎপাদন বন্ধ রাখা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশে আটা-ময়দার দাম আরও বেড়ে যাবে।

আমদানিকৃত নিম্নমানের গমের ভুসি দেশের নামিদামি কোম্পানির মোড়কে (ব্যাগ) বিক্রি করে দেশি কোম্পানিগুলোর সুনাম নষ্ট করা হচ্ছে। চলতি বছরের ৬ মার্চ কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে বসুন্ধরা ভুসির মোড়কে (ব্যাগ) ভেজাল ভুসি বিক্রি করায় দুই ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২১ বস্তা ভেজাল গমের ভুসি জব্দ করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/০৪সেপ্টেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

ফের বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম

পুঁজিবাজার সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে: সালমান এফ রহমান

সিটি ব্যাংকের লভ্যাংশ অনুমোদন

অত্যাধুনিক ফিচারযুক্ত নতুন ২ মডেলের অল-ইন-ওয়ান পিসি বাজারে ছাড়ল ওয়ালটন

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ২৫তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

আন্তর্জাতিক ট্যুরিজম অ্যাওয়ার্ড পেলো ইউএস-বাংলা

শাহ আলম সারওয়ারকে আইএফআইসি ব্যাংকের উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে নানা প্রশ্ন

বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণকারীদের সার্টিফিকেট বিতরণ প্রদান করল ব্যাংক এশিয়া

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড অপারেশন বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

কৃষকদের মাঝে সাউথইস্ট ব্যাংকের আর্থিক সহায়তা প্রদান

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :