চিকিৎসকের অবহেলায় সাপেকাটা স্কুলছাত্রীর মৃত্যু, বিচার চেয়ে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৪৫
অ- অ+

নওগাঁর নিয়ামতপুরে চিকিৎসকের অবহেলায় চিকিৎসা না পাওয়া সাপেকাটা রোগী ৬ষ্ঠ শ্রেণির স্কুলছাত্রী তাসকেয়া তৃষার মৃত্যুতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী।

বুধবার নিহত তৃষার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গাংগোর স্কুল এ্যান্ড কলেজের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

এ সময় বক্তৃতা করেন গাংগোর স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অতুল চন্দ্র পাল, বটতলী হাট বিএম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সরকার শাহ আলম, গাংগোর স্কুল এ্যান্ড কলেজের সিনিয়র সহকারি শিক্ষক শারমিন আরা সুলতানা, গাংগোর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খাতুন, তৃষার চাচা শরিফুল ইসলাম, দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শহিদুল ও তৃষার সহপাঠী মালিহা ও চৈতী।

মাববন্ধনে তৃষা হত্যার বিচার চাই, দায়িত্ব পালনে অযোগ্য ডাক্তারের বিচার চাই, খুনী ডাক্তারের বিচার চাই, আমাদের ছোট বোন তৃষার মৃত্যুর বিচার চাই লিখা সংবলিত বিভিন্ন প্লেকার্ড হাতে নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।

তৃষার চাচা শরিফুল ইসলাম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, রাতে তৃষাকে সাপেকাটার পর রাত দুটার দিকে মরা সাপসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাকে নিয়ে গেলে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. লিংকন তাদের অ্যান্টিভেনম আছে বলে অভয় দেন। এরপর ভর্তি করা হয় তৃষাকে।

ভর্তি রাখা অবস্থায় চিকিৎসা প্রদানের প্রস্তুতি না নিয়েই তার পায়ের বাঁধন খুলে দেয়া হয়।

এর কিছুক্ষণ পরই তৃষা জানায়, তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে, প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে বুকে। এর মাঝে কেটে যায় প্রায় দুই ঘণ্টা। রাত তখন প্রায় সোয়া ৪টা। তৃষার এমন মুমূর্ষু অবস্থায় ডাক্তার লিংকনকে অনেক অনুরোধ করেও কোনো চিকিৎসা (অ্যান্টিভেনম না দিয়ে) শুরু না করে বরং রাজশাহী মেডিকেল নেওয়ার পরামর্শ দেন।

মুহূর্তেই ধীরে ধীরে অবনতির দিকে যেতে থাকে তৃষা। এরি কিছুক্ষণ পর রাজশাহী মেডিকেলে নেওয়ার পথে ভোর পাঁচটার দিকে তার মৃত্যু হয়। ডাক্তারের এমন গুরুতর অবহেলায় তার ভাস্তি তৃষার মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে তিনি ডাক্তার লিংকনের শাস্তি দাবি করেন।

মানববন্ধনে গাংগোর স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অতুল চন্দ্র পাল ও বটতলী হাট বিএম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সরকার শাহ আলম বলেন, সাপে কাটা রোগী জেনেও ডাক্তার লিংকট অভয় দিয়েছিলেন, অ্যান্টিভেনম আছে বলে আশ্বস্থ্য করেছিলেন তৃষার পরিবারকে।

কিন্তু ভর্তি করার পর কোন চিকিৎসা না দিয়ে বরং কালক্ষেপন করে তৃষাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। কর্তব্যে অবহেলার কারণেই তৃষার এমন অকাল মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে ডাক্তার লিংকনের চাকরিচ্যূতসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান এবং এ এলাকার খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

উল্লেখ্য, রবিবার দিবাগত রাতে তৃষাকে বিষাক্ত সাপ (চিতি বড়া) কামড় দিলে রাতেই মরা সাপসহ তাকে নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তার স্বজনরা। দায়িত্বরত চিকিৎসক ডাক্তার লিংকন অ্যান্টিভেনম রয়েছে এবং এর চিকিৎসাও রয়েছে বলে শিশুটিকে ভর্তি করান স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।

এরপর কেটে যায় প্রায় দুই ঘণ্টা। তখনও চিকিৎসা শুরু হয়নি তৃষার। যন্ত্রণায় হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছিলেন শিশুটি। ধীরে ধীরে শিশুটি অবনতির দিকে যেতে থাকলে এক পর্যায়ে চিকিৎসক ডা. লিংকন জানান স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অ্যান্টিভেনম নেই। পরে ওই শিশুটিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

এমন ঘটনায় পরদিন সোমবার উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহববুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিভেনম রয়েছে। তিনি (ডা. লিংকন) কারও সঙ্গে যোগাযোগ না করেই অ্যান্টিভনম নেই এ কথা কীভাবে বললেন তা বোধগম্য হচ্ছে না। তবে এ ঘটনার দায় তাকেই নিতে হবে বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/৬সেপ্টেম্বর/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বাউফলে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে শ্রমিকের মৃত্যু
আবদুল হামিদের দেশ ছাড়ার ঘটনায় তিন উপদেষ্টার তদন্ত কমিটি
ডিবি হারুন ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকলো?
মিরপুরে ট্রাফিক সদস্যদের মাঝে স্যালাইন বিতরণ 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা