নেত্রকোনার কেন্দুয়া

পাটের ফলন ভালো হলেও দামে হতাশ কৃষক

আশরাফ গোলাপ, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা)
| আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৪৬ | প্রকাশিত : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:০৬
রোদে পাট শুকাচ্ছেন কৃষক।

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় এবার আগাম বৃষ্টি না হওয়ায় সোনালি আঁশ পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে ভালো ফলনের পরও দাম কম থাকায় দুশ্চিন্তায় কৃষকরা। উপজেলায় ইতোমধ্যে ক্ষেত থেকে পাট কাটার কাজ শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে অনেকে মুক্ত জলাশয়ে জাঁক দেয়া পাট থেকে আঁশ ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ শেষ করে বিক্রির চিন্তা করছেন। কিন্তু দাম নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। সরকারি ও বেসরকারি পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সঠিক দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা ও হতাশায় পড়েছেন তারা।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর আগেও চাষিরা পাট চাষ করে লোকসানে পড়েছিলেন। তাই অনেকে বাধ্য হয়ে অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকে পড়েন। মাঝে স্বল্প পরিসরে যারা আবাদ ধরে রেখেছিলেন, তারাই লাভবান হয়েছেন। তাদের দেখেই অন্যরা আবারো পাট চাষে ফিরেছেন। গত বছর পাটের দাম ভালো পাওয়ায় চলতি মৌসুমের শুরুতেই চাষিরা পাট চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন। এতে পাটের আবাদ বেড়েছে অনুকূল আবহাওয়ায় ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু

এ বছর দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উপজেলার পূর্বরায় গ্রামের পাট চাষি মো. ওয়াসকরুন (৪৫) বলেন এবার ৫০ শতাংশ জমিতে পাট চাষ করেছেন। তিনি বলেন আমি প্রতি বছরই পাট চাষ করে থাকি। ফলন এবার ভারো হয়েছে। কঠিন পরিশ্রম করে পাট আবাদ করি। কিন্তু বর্তমান বাজারে পাটের দাম অনেক কম। এতে লোকসানে পড়তে হচ্ছে।

ইসলাম উদ্দিন (৫০) নামে আরেকজন বলেন গত বছর দুই বিঘা জমিতে পাট আবাদ করে কিছুটা লাভ করতে পেরে এবার আবাদ বাড়িয়েছি। কিন্তু এখন দেখছি আগের থেকে ১ হাজার টাকা কমে গেছে দাম। পাটের উৎপদন খরচ আর বদলি খরচ বাবদ ৫০০ টাকা খরচ সহ বর্তমানে যে পাটের বাজার মূল্য তাতে লোকশানের মুখে পড়তে হবে। সরকার যদি পাটের দাম না বাড়ায় তাহলে আমাদের পাটের আবাদ থেকে সরে আসতে হবে। সরকারের উচিত পাটের মূল্য বাড়ানো।

পাটের ফলন ভাল হওয়ায় এলাকার মৌসুমি শ্রমিকদের ব্যস্ততা ও বেড়েছে। এক আঁটি জাঁক দেওয়া পাট থেকে আঁশ ছাড়িয়ে ২০ টাকা পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে দিনে ১০০ থেকে ১২০ টাকা টাকার মতো আয় হয় তাদের।

এদিকে পাইকাররা বলছেন, মিল মালিকেরা পাটের সঠিক দাম না দেয়ার পাশাপাশি গত বছরের বকেয়া বিল থাকায় কৃষকদের কাছ থেকে কম মূল্যে পাট ক্রয় করতে হচ্ছে।

জানা যায়, উপজেলায় গত বছর মণ ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় কৃষক পাট বিক্রি করলেও বর্তমানে তা ১ হাজার টাকা কমে ২ হাজারের নিচে নেমে এসেছে। এদিকে চলতি মৌসুমে উপজেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৫৮০ হেক্টর জমিতে ধরা হয়েছে। আবাদ ও হয়েছে ৫৮০ হেক্টর জমিতে।

কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন এবার মোটামুটি আশানুরূপ হয়েছে। প্রথম দিকে পাটের দাম কিছুটা কম থাকে। কৃষকরা এখন যে পাটের দামটা কিছুটা কম পাচ্ছে কৃষকরা যদি তাদের উৎপাদিত পাটের সোনালী আঁশগুলো কিছুদিন মজুদ রাখে তাহলে আশা করি দেড় মাস কিংবা দু’মাসের মধ্যে দামটা আরো বাড়বে। তখন কৃষকরা ভালো দাম পেতে পাবেন।

কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, চলতি বছরে উপজেলায় ৫৮০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষাবাদ হয়েছে। এবার প্রতি হেক্টর জমিতে ১.৬ মেট্রিকটন ফলন হয়েছে। এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে আশাকরি পাটের যে সোনালি দিন ছিল সেটা আমরা খুব কম সময়ের মধ্যেই ফিরে যেতে পারবো। এ উপজেলায় পাট উৎপাদন ভালো হওয়ায় চাষিদের নিয়মিত বিভিন্ন পরামর্শ ও সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এবার আশা করছি ন্যায্য দাম পেলে কৃষক লাভমান হবেন। সে ক্ষেত্রে সামনের বছর আরও দ্বিগুণ জমিতে উৎপাদনে কৃষকরা ঝুঁকবে। পাটের লক্ষ্যমাত্রা ও দ্বিগুণ অর্জন হবে পাশাপাশি পাটের উৎপাদনও বাড়বে।

(ঢাকাটাইমস/১২সেপ্টেম্বর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :