কক্সবাজার সদর হাসপাতাল: সেবার ধরন বদলেছে, কমেনি দুর্ভোগ

ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২৩:৪৬
অ- অ+

অবকাঠামোগত সমস্যা, চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা দিতে পারছে না কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী ভর্তি হচ্ছে।

সমস্যার কথা স্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদানে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই হাসপাতালটিতে অনুমোদিত রোগীর ধারণক্ষমতা ২৫০ শয্যার। কিন্তু হাসপাতালে নিয়মিত ভর্তি থাকেন প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ জনের মতো, যা ধারণক্ষমতার তিনগুণ বেশি।

এতে দফায় দফায় সংকটের মুখ থেকে ফিরে সেবার ধরন বদলানো হলেও এখনও কমেনি দুর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের দুর্ভোগ। রয়েছে বেড সংকটও। শয্যার চেয়ে অধিক রোগী আসলেই হাসপাতালের ফ্লোরে রোগীদের স্থান নিতে দেখা গেছে।

২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা আসার পর থেকে নতুনভাবে সাজানো হয় চিকিৎসা সেবার ধরন ও হাসপাতালের অবকাঠামোগত উন্নয়ন। কিন্তু এতকিছুর পরও দুর্ভোগ কমেনি রোগীদের। কারণ বেড সংকট, লোডশেটিংসহ নানান কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয় রোগী ও তার স্বজনদের। আগের মত কমিশন বাণিজ্য বন্ধ হলেও কমেনি দালালদের দৌরাত্ম্য।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ১৯৯৭ সালে কক্সবাজার জেলার সদর হাসপাতালটিকে ১০০ থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২৫ বছর পার হলেও বাড়তি অবকাঠামোর কোন জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। মঞ্জুরী পদ অনুযায়ী যেখানে কর্মরত থাকার কথা ৬৯৪ জন চিকিৎসকের। যেখানে সিনিয়র কনসালটেন্ট পদে ১০ জনের ৬টি পদই শূন্য, জুনিয়র কনসালটেন্ট ১১ পদের মধ্যে আছে ১০ জন চিকিৎসক, মেডিকেল অফিসার ৪৫ জনের মধ্যে কর্মরত আছেন ৩৯ জন, নার্স ৫৪৭ জনের মধ্যে ১১৬ জনের পদ শূন্য, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ৫৭ জনের মধ্যে পদ শূন্য ৩৬ এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ২৪ জনের মধ্যে ৯টি পদ খালি। চক্ষু, সার্জারি, হৃদরোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও আছে নেই এ রকম। এছাড়াও সংকট রয়েছে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরও।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও বলছে, রোগীর চাপ সামলাতে চিকিৎসক নিয়োগ দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয় ও মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও চিকিৎসকের শূন্য পদগুলোতে লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে জেলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদে চিকিৎসকের সংকট। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়নি। যার কারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

হাসপাতালে আসন সংকটের কথা স্বীকার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমান আরও জানান, ২৫০ শয্যার হাসপাতালে রোগীর ভর্তি রয়েছে ৬ শতাধিক। তাহলে কিভাবে সঠিক চিকিৎসা দেব। আর বেড সংকটও দীর্ঘদিনের। এ বিষয়ে আমরা উচ্চ পর্যায়ে জানিয়েছি। আশা করছি খুব দ্রুত এর একটা সমাধান আসবে।

কক্সবাজার জেলার অর্ধকোটি মানুষের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র হচ্ছে জেলা সদর হাসপাতাল। জেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এ হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করা হয়। যা পরবর্তী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে স্বীকৃতি দেয়া হয়। সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যা উন্নীত করা হলেও ১৫০ শয্যা হাসপাতালেরও জনবল নেই। এতে সেবাদানে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের।

হাসপাতালে আবার অনেক যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এত বিশাল জেলা ও বড় হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও চোখের চিকিৎসা হয়না। চক্ষু বিভাগের সমস্ত যন্ত্রাংশ থাকার পরেও কোন চিকিৎসক কর্মচারী না থাকায় চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

রোগী ও স্বজনরা জানান, হাসপাতালের ৪র্থ তলা মহিলা ওয়ার্ডে সারা বছরই রোগীদের ভিড় থাকে। এতে চরম দুর্ভোগে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় এক বেডে ২ মহিলাকে চিকিৎসা দিতে হয়। আবার বিছানা না পেয়ে হাসপাতালের মেঝে-বারান্দায় থাকতে হয়। ফলে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসক ও নার্সদের।

টেকনাফ থেকে আসা রোগীর স্বজন শাহ আলম বলেন, হাসপাতালে সবসময় সিট ফাঁকা পাওয়া যায় না। তাছাড়া হাসপাতালের পরিবেশ নোংরা হওয়ায় নিজেরাই অসুস্থ বোধ করেন। অনেকে আবার বেড না পেয়ে বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।

রামু থেকে আসা নুর নাহার বলেন, এসেছি দীর্ঘক্ষণ হচ্ছে এখনো বেড পাইনি। অনেকে বলছে বারান্দায় থাকতে হবে।

তার মতো বৃদ্ধ আনজুআরা বেগম ভর্তি হয়েছেন আরও দুইদিন আগে কিন্তু এখনও তার বেড হাসপাতালের বারান্দায়। তিনি বলেন, ডাক্তার সময় মত আসছে না। তাদের মন চাইলে আসছে আর না চাইলে আসছে না বলে অভিযোগ তার।

জরুরি বিভাগের প্রধান ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আশিকুর রহমান জানান, জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সেবা দেশজুড়ে প্রশংসনীয় হয়েছে। রোগী টিকেট নিয়ে একটুও বসে থাকতে হয়না। কিন্তু আউটডোরের চিকিৎসকের সংকট আছে। চিকিৎসক যারা আছেন তাদের পক্ষে সবকিছু দেখভাল করা কষ্টদায়ক। চিকিৎসকদের বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় চিকিৎসক পদায়ন করা না হলে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন রোগীরা।

(ঢাকাটাইমস/১২ সেপ্টেম্বর/ইএইচ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ওপারে কারফিউ, সুনামগঞ্জের ১২ কিলোমিটার সীমান্তে বিজিবির সতর্ক অবস্থান
খালিশপুরে শহীদ মিনারের জমি দখলের ভিডিও করায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণায় শাহবাগে ছাত্র-জনতার উল্লাস
৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা