গ্যাস সংযোগে নিয়ম মানে না দেশের ৭৪% প্লাস্টিক কারখানা
দেশের প্লাস্টিক কারখানাগুলোর ৭৪ শতাংশই গ্যাস সংযোগ নিয়েছে নিয়মবহির্ভূতভাবে। ১৪ শতাংশ এক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক জরিপে এ তথ্য উঠে আসে।
শনিবার রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। ‘প্লাস্টিক খাতে সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকি: কী পদক্ষেপ প্রয়োজন’ শীর্ষক এ গবেষণায় সহযোগিতা করে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ)।
জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন রুল ২০১৪-এর গ্যাস পাইপলাইন রেগুলেশন অনুযায়ী, মাটির নিচ দিয়ে গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপন করতে হবে। কিন্তু বেশির ভাগ প্লাস্টিক কারখানা এ নিয়ম মানেনি।
সিপিডির তথ্যানুযায়ী, বড় কারখানার সবগুলোই নিয়ম মেনে গ্যাস সংযোগ নিয়েছে। নিয়ম না মানা কারখানাগুলোর মধ্যে ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্র, ৬০ শতাংশ ছোট এবং ৩৫ শতাংশ মাঝারি। এসব কারখানার অধিকাংশেরই নিয়মিত হাইড্রোলিক টেস্টিং সুবিধা, অভিজ্ঞ বয়লার পরিচালক এবং যথাযথভাবে অনুমোদিত স্টোরহাউজ নেই। বেশির ভাগ কারখানার দেয়াল আগুন প্রতিরোধী নয়।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গ্যাস পাইপলাইনগুলো মাটির নিচ দিয়ে যাওয়া দরকার। কিন্তু কোনো কোনো জায়গায় এমন হয়েছে, সেগুলো মাটির নিচ দিয়ে নেয়ার সুযোগই নেই। সে জায়গাগুলোর ক্ষেত্রে নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। কিছু কারখানা এমন এমন জায়গায় স্থাপিত হয়েছে, যেগুলো পুনঃস্থাপন ছাড়া কোনো উপায় নেই। এজন্য প্লাস্টিক কারখানাগুলোকে একটি শিল্পজোনে সরিয়ে নিতে হবে।
কারখানাগুলোর নিরাপত্তা সংকট তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ কারখানা ভাড়া করা জায়গায় অবস্থিত। তাদের নিজস্ব কোনো জায়গা নেই। ঐতিহাসিকভাবে কারখানাগুলো পুরান ঢাকা এলাকায় গড়ে উঠেছে। এগুলোর অধিকাংশই ক্ষুদ্র ও ছোট। এর মধ্যে অনেকগুলো কারখানার অবস্থান বহুতল ভবনে। কারখানাগুলোর বড় একটি অংশ আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। এ তিনটি বিষয় নিরাপত্তার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘কারখানা চলাকালীন দরজা-জানালা সবকিছু বন্ধ থাকে, যা আবাসিক এলাকা এবং সেখানকার কর্মীদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারখানাগুলোর ফায়ার ড্রিল করার কথা, প্রতি মাসেই সেগুলো নবায়ন করার কথা। কিন্তু কারখানার মালিকরা সেগুলো করছেন না। মাত্র ৮ শতাংশ কারখানায় বড় ধরনের ফায়ার ড্রিল হয়। বড় কারখানাগুলো নিয়মিত ফায়ার ড্রিল করে। ২০ শতাংশ কারখানায় কখনই ফায়ার ড্রিল হয়নি।’
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, কারখানাগুলোর নিরাপত্তা অবস্থা নিয়ে আমরা যখন ইন্সপেকশন শুরু করি, তখন কারখানার মালিকরা ভয় পেয়ে যায়। অনেক বড় বড় কারখানার এ ধরনের সমস্যা রয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে তাদের কোনো চিন্তা নেই।৷ এগুলো নিয়ে এফবিসিসিআই কাজ শুরু করেছে। ফায়ার লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যও না, এ রকম অনেক কারখানা আছে। জাতীয় অর্থনীতিতে সেগুলোরও অবদান আছে। যখন আগুন লাগে তখন সেগুলো নিয়ে কথা বলা শুরু হয়, তারপর আবার সবাই চুপ হয়ে যায়। ৷
বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) শামিম আহমেদ বলেন, ‘যেকোনো দেশের শিল্প এলাকা ছোট আকারেই গড়ে ওঠে। যেমনটি আমাদের পুরান ঢাকায় প্লাস্টিকের কারখানা গড়ে উঠেছে। এটাকে অনেকটা স্টার্টআপের মতো বলা যায়। সেখান থেকে বড় শিল্পগুলো যাত্রা করে। আমরা চেষ্টা করছি, পুরান ঢাকার কারখানাগুলোকে একটি ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য।’
(ঢাকা টাইমস/২৪সেপ্টেম্বর/এসএ)