চুয়াডাঙ্গায় সাত কোটি টাকার সেতুটি কোনো কাজে লাগছে না

আহসান আলম, চুয়াডাঙ্গা
  প্রকাশিত : ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:০২
অ- অ+
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর প্রায় পৌনে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর প্রায় পৌনে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি কোনো কাজে লাগছে না। এক বছর আগে সেতুর অবকাঠামো নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ হলেও জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার কারণে সংযোগ সড়ক নির্মাণ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এতে যানবাহন ও এলাকাবাসীর চলাচলে দুর্ভোগ ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয় কৃষক থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী সবাই এখনো নৌকায় নদী পার হচ্ছেন। আর পীরপুর-গঞ্জেরঘাট সড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলো চুয়াডাঙ্গা শহরসংলগ্ন মাথাভাঙ্গা সেতু অথবা দামুড়হুদা উপজেলার কেশবপুর সেতু হয়ে অনেকটা পথ ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় মানুষের দাবির মুখে তারা পীরপুর-গঞ্জেরঘাট সড়কে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ৯০ মিটার দীর্ঘ এবং ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্ত সেতুটি নির্মাণে বরাদ্দ হয় ৬ কোটি ৬৬ লাখ ৬৮ হাজার ১০ টাকা। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি মাসে গঞ্জেরঘাট প্রান্তে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী সেতুটি ২০২২ সালের ১৮ আগস্টের মধ্যে নির্মাণ শেষ করে জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা ছিল। তবে এক বছর পরও সেতুটি চালু করা যায়নি।

কাজের দরপত্র পেয়েছে কুষ্টিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠার মো. নুরুজ্জামান মিয়া ও সৈকত এন্টারপ্রাইজ জেভিসিএ। তবে এই প্রতিষ্ঠানটির হয়ে কাজটি করছেন স্থানীয় ঠিকাদার চুয়াডাঙ্গার দৌলাতদিয়াড় এলাকার ইলিয়াস হোসেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার ইলিয়াস হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জেনেছি, জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সমস্যা কেটে গেছে। জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলেই সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করা হবে।’

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেতুটি নির্মাণের শুরু থেকেই স্থান নির্বাচন নিয়ে নদীর দুই পাড়ের মানুষেরই চরম আপত্তি ছিল। তাঁদের দাবি ছিল, নদীর দুই পাড়ের সড়ককে সংযুক্ত করে স্থান নির্বাচন করে সেতু নির্মাণ করা হোক। অথচ এলজিইডির কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিতে মূল জায়গা থেকে ৫০ মিটার ভাটিতে সেতুটি তৈরি করা হয়েছে। যে কারণে সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য উভয় পাড়েই ৩৩ শতক (এক বিঘা) করে মোট ৬৬ শতক জমির প্রয়োজন হচ্ছে। সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজ প্রায় শতভাগ শেষ হলেও সেতুর দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় সেতুটি কোনো কাজে আসছে না।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম ভূঁইয়া স¤প্রতি জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় এই সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতা ও দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ দ্রæত শেষ করে সেতুটি সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ করেন।

এদিকে, সরেজমিনে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পীরপুর-গঞ্জেরঘাট সড়ক থেকে একটু দূরে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর সেতুটি নির্মিত হয়েছে। সেতুর দুই পাশে সড়ক না থাকায় এটি ব্যবহার করতে পারছে না লোকজন। সেতুর কাছেই নৌকায় নদী পারাপারের ব্যবস্থা রয়েছে। খেয়াঘাটের মাঝি শাহাবুল হক রশি টেনে নৌকায় যাত্রী পারাপার করছেন। পণ্য নিয়ে অনেকেই পারাপার হচ্ছেন। সেতুর পেছনে সরকারের বরাদ্দের কোটি কোটি টাকাও তাদের জীবনকে আধুনিক যোগাযোগের সুবিধা এনে দিতে পারেনি।

মাইক্রোবাসের চালক মিরাজুল ইসলাম জানান, সেতু চালু না হওয়ায় যানবাহনগুলোকে অতিরিক্ত ১২ থেকে ১৫ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হচ্ছে। গঞ্জেরঘাট এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভূমি অধিগ্রহণে ধীরগতির কারণে সেতু নির্মাণের এক বছর পরও সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। এসবের পেছনে কারও কর্তব্যে অবহেলা ও গাফিলতি থাকলে তাদেরকে চিহ্নিত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এলজিইডি চুয়াডাঙ্গার নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তিনি চুয়াডাঙ্গায় যোগদানের পূর্বেই সেতুর স্থান নির্বাচন থেকে শুরু করে নির্মাণকাজের ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। তাই এ বিষয়ে তার কোনো মন্তব্য নেই। তিনি বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স¤প্রতি একটি চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু তথ্যগত ত্রুটির কারণে তা ফেরত এসেছে। নতুন করে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। জমি অধিগ্রহণের জটিলতা কেটে গেলে নিয়ম মেনে জমির মালিককে মূল্য পরিশোধ এবং পরবর্তী সময়ে দ্রততম সময়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ সম্পন্ন হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, মূল সড়ক থেকে দূরে সেতুর স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক। সঠিক জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হলে সংযোগ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে হতো না। এটি একদিকে সময়সাপেক্ষ, অন্যদিকে আর্থিক বিষয় জড়িয়ে আছে। এলজিইডি থেকে প্রস্তাবনা এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢকোটাইমস/৪অক্টোবর/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আ.লীগকে নিষিদ্ধ করলে ভালো হতো: জামায়াত আমির
জামালপুরে মাদ্রাসায় ছাত্রী ভর্তিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২০
ইউনাইটেড হাসপাতালের কাছে ডিএনসিসির কর বকেয়া ৩০ কোটি টাকা
শহীদ নিজামীর খুনিদের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে ইনশাআল্লাহ: রফিকুল ইসলাম 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা