এ যেন আরেক সাহেদ! নাম তার হানিফ মিয়া, হতে চেয়েছিলেন সংসদ সদস্য

প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম ভাঙানো আর প্রতারণার মাধ্যমে ওপরে উঠে আসেন আবু হানিফ তুষার ওরফে হানিফ মিয়া। বিভিন্ন স্থানে সুবিধাজনক পরিচয় দিতেন তিনি। কখনো নিজেকে রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী-নেতাদের ঘনিষ্ঠ এবং প্রধানমন্ত্রীর নিকটআত্মীয় বলে পরিচয় দিয়েছেন।
প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে তোলা ছবি ব্যবহার করে তিনি নিজেকেও প্রভাবশালী হিসেবে তুলে ধরতেন।
মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এসময় তার কাছ উদ্ধার করা হয়েছে বিদেশি অস্ত্র।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন, হানিফ মিয়ার প্রতারণার ধরন একটি অনন্য। তাকে বলা যায় প্রতারক জগতের 'আইডল'। যাতে প্রতারক সাহেদের অনুসারী বলা যেতে পারে। প্রতারণাই ছিল তার প্রধান ব্যবসা।
র্যাব বলছে, হানিফ মিয়া নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের নিকটাত্মীয় হিসেবে মিথ্যা পরিচয় ও সুসম্পর্কের কথা বলতেন। তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়া, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন-পদোন্নতি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়াসহ বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে তার এই ধরনের কার্যক্রম নজরদারি করা হচ্ছিল। অভিযানে তার সঙ্গে সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণির অনেকের ছবি পাওয়া গেছে। যা ব্যবহার করে হানিফ মিয়া দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিলেন।
এর আগে ২০২০ সালে করোনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম। তার নাটকীয় উত্থান নিয়ে তখন গণমাধ্যমে ঢালাওভাবে সংবাদ প্রকাশিত হয়। অনুমোদন না নিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে প্রতারণা, টকশোতে নিজেকে সরকারি দলীয় বড় নেতা পরিচয় দেওয়া, কখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন পরিচয়ে দিয়ে প্রতারণার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছান তিনি। পরে সাতক্ষীরা সীমান্তে দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। সাহেদের মতোই প্রতারণা করে আসছিলেন হানিফ মিয়া।
কে এই হানিফ মিয়া?
জানা গেছে, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় বাড়ি এই হানিফ মিয়ার। স্থানীয় স্কুলে প্রাইমারি শেষ করে তিনি ঢাকার একটি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। তার দাবি তিনি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ ডিগ্রি নিয়েছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এ সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। হানিফ মিয়া আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে কসবা থেকে ভোট করতে চেয়েছিলেন। এজন্য ওই এলাকায় পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, সাইনবোর্ড দিয়ে ছেঁয়ে দিয়েছিলেন। তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন বলেও দাবি করেছেন।
যেভাবে প্রতারণা করতেন
হানিফ মিয়া সরকারি দলের প্রথমসারির অনেক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ছলেবলে কৌশলে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। যার হাতিয়ার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের নাম ব্যবহার করেছেন। তাতে তিনি প্রতারণা করে সফলও হয়েছেন। প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন এই হানিফ মিয়া। পাশাপাশি বায়িং হাউজের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলেও জানা গেছে।
এমপি বানিয়ে দিতে ২০০ কোটি টাকা
প্রধানমন্ত্রী পরিবারের নিকটাত্মীয় পরিচয় দেওয়া হানিফ মিয়া জাতীয় নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান তারা টাকা দিলেই মনোনয়ন পাবেন এমন নিশ্চয়তা দিতেন। এজন্য তিনি ২০০ কোটি টাকায় চুক্তিবদ্ধ হতেন। অনেকে তার ফাঁদে পড়ে টাকাও খুঁইয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে সরাসরি কেউ তার প্রতারণার বিষয়ে মুখ খোলেননি।
যাদের সঙ্গে ছবি হানিফ মিয়ার
হানিফ মিয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক অনেক নেতার ছবি এসেছে ঢাকা টাইমসের হাতে। তাতে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি কথা বলছেন। ছবির ডান পাশে হানিফ মিয়া দাঁড়িয়ে আছেন। তবে ছবিটা এডিটিং কি না সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এদিকে অন্য আরেক ছবিতে দেখা গেছে, বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে একান্তে কথা বলছেন হানিফ মিয়া। বিতর্কিত কাণ্ডে পদ হারানো সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন।
অন্য ছবিতে হানিফ মিয়াকে কোনো একটি অনুষ্ঠানে ক্রেস্ট উপহার দিচ্ছে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদ। তাছাড়া বিতর্কিত কাণ্ডে আলোচনায় আসা ব্যবসায়ী আদম তমিজি হক, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের ও এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সঙ্গে তার হাস্যজ্বল ছবি রয়েছে। তবে যাদের সঙ্গে হানিফ মিয়ার ছবি পাওয়া গেছে তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
(ঢাকাটাইমস/১৭অক্টোবর/এসএস/ইএস)

মন্তব্য করুন