চার মন্ত্রীসহ সাত এমপিকে সরিয়ে নতুন প্রার্থী দেয়ার ছক কষেছিলেন আবু হানিফ! রফাদফা হয় কয়েক'শ কোটি!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২০ অক্টোবর ২০২৩, ১৮:৫৬| আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৩, ২০:২১
অ- অ+

'আপনার বিষয় 'ছোট খালা', 'বড় খালা'কে বলেছি। ভোটার আইডি কার্ড, কোভিডের সার্টিফিকেট প্রস্তুত রেখেন। গণভবনে যেতে হলে এগুলো লাগবে। পাশাপাশি ওইদিন প্রায় হান্ড্রেড (১০০ কোটি) মতো রেডি রাইখেন। এরমধ্যে আমরা আগামীকাল বসে সব ঠিক করব।'

একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় পরিচয় দিয়ে এভাবে কথা বলছিলেন প্রতারক আবু হানিফ তুষার ওরফে হানিফ মিয়া। ওই ব্যবসায়ী ছাড়া আরও কয়েকজনের সঙ্গে একই ধরনের কথোপকথনের অডিও এসেছে ঢাকা টাইমসের কাছে। যা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দ্বাদশ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে অনেকে তুষারের সঙ্গে আর্থিক চুক্তি করছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে র‌্যাবের কাছে গ্রেপ্তার হন প্রতারক আবু হানিফ তুষার ওরফে হানিফ মিয়া। তিনি প্রধানমন্ত্রী পরিবারের আত্মীয় এমন মিথ্যা পরিচয় দিতেন। গ্রেপ্তার হওয়ার সময় তার কাছ থেকে একটি দেশি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় পরেরদিন তুষারের বিরুদ্ধে অস্ত্রআইনে র‌্যাব বাদী হয়ে মামলা করে। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে ভাটারা থানা পুলিশ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তুষার দাবি করেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বড় খালা এবং প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানাকে ছোট খালা বলে ডাকতেন। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের আত্মীয় পরিচয়ে তুষার বিভিন্ন ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনের অনেককে ফাঁদে ফেলেছেন। বনে গেছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। রাজধানীতে কিনেছেন একাধিক ফ্ল্যাট, ঢাকা-রংপুর রুটে সাতটি বাস, বিলাসবহুল গাড়ি ও এলাকায় বিপুল জমি। র‌্যাবের কাছে গ্রেপ্তারের পর তার বিষয়ে ভয়ঙ্কর সব তথ্য বেরিয়ে আসছে।

জানা গেছে, প্রতারক তুষার দেশের সাতটি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিজয়ী বর্তমান এমপিদের পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। এই তালিকায় চারজন প্রভাবশালী মন্ত্রীও রয়েছেন। এসব সংসদীয় আসনে নতুন যারা প্রার্থী হতে চান তাদের সঙ্গে কোটি কোটি টাকা চুক্তি করেছিলেন এই প্রতারক। র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার না হলে তুষার হয়ত আগামী মাস থেকে এসব টাকা হাতিয়ে নেওয়া শুরু করতেন। যাদের সঙ্গে তুষারের এসব চুক্তি হয়েছে তারা সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। মূলত নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে যারা খানিকটা দুর্বল তাদেরকে টার্গেট করে চলছিল এই প্রতারণা।

সূত্র বলছে, তুষার দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়ন বাণিজ্যে নেমেছিলেন। বিশেষ করে গাজীপুরের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী যেন মনোনয়ন না পান সেই তদবির করছিলেন। তাকে সরিয়ে একজন বিতর্কিত রাজনীতিবিদকে ওই আসনে মনোনয়ন পাইয়ে দিতে দৌড়ঝাঁপ করছিলেন। এজন্য ওই রাজনীতিবিদের সঙ্গে তিন শ কোটির টাকা চুক্তি করেন। তাদের কথোপকথনের এমন প্রমাণ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তাছাড়া নারায়ণগঞ্জের আরেক প্রভাবশালী মন্ত্রীকে সরিয়ে বিতর্কিত ও আলোচিত একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে চুক্তি করেন। যিনি তুষারের সঙ্গে দেড় শ কোটি টাকার চুক্তি করেছিলেন। চাঁদপুরের একজন মন্ত্রীকে সরিয়ে একজনকে মনোনয়ন পাইয়ে দেবেন বলে ওই প্রার্থীর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেন। তার সঙ্গেও দেড় শ কোটি টাকার চুক্তি হয়।

আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, এই তুষার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আওতাভুক্ত একটি বিভাগে সরকারি একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিশ কোটি টাকা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাতে চেয়েছিলেন।

টাকার বিনিময়ে যেসব এমপিকে সরানোর প্লান ছিল

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক আবু হানিফ তুষার জানিয়েছেন, তিনি ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার কসবা থেকে নির্বাচন করতে চান। এজন্য এলাকায় ব্যানার, পোস্টারে ছেঁয়ে দিয়েছেন। ওই আসনের বর্তমান এমপি ও একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে সরাতে চান। ওই মন্ত্রীকে ঢাকার যেকোনো একটি একটি আসনে মনোনয়ন দেয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। ওই আসনে তুষার নিজের মনোনয়ন নিতে ২৫ কোটি টাকা খরচ করতে হবে জানিয়েছেন। যা তার ছোট খালাকে দিতে হবে। ঢাকা-১৮ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যকে সরিয়ে ওই আসনে 'ত' অদ্যাক্ষরের একজনকে মনোনয়ন পাইয়ে দেবেন বলেন জানিয়েছে তুষার। এজন্য 'ত' অদ্যাক্ষরের ওই রাজনীতিবিদের সঙ্গে দেড় শ কোটি টাকা চুক্তি হয়েছে। কারণ, তুষার ওই 'ত' অদ্যাক্ষরের ওই ব্যক্তির এপিএস ছিলেন। তাদের কথোপকথনে এমন তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া ময়মনসিংহের একটি আসনের সংসদ সদস্যকে সরিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিকে প্রার্থি করতে তদবির করছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জের একাংশ এলাকার সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্যকে সরিয়ে নতুন একজনকে ওই আসনে মনোনয়ন দিতে তদবির চালাচ্ছিলেন। তাছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্যও তুষারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন, যাতে তার মনোনয়ন নিশ্চিত থাকে।

বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের সঙ্গে আবু হানিফ তুষার (বাঁয়ে লাল চিহ্নিত)

তাছাড়া দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক ('এ' অদ্যাক্ষর) তুষারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ যোগাযোগ রাখতেন। টিভি চ্যানেলের মালিকের কাছ থেকে ১৫০ কোটি টাকা দাবি করেন তুষার। ওই চ্যানেলের মালিক তার টিভি বিক্রির ৭০ কোটি টাকা দিতে পারবেন বলে চুক্তি করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, মনোনয়ন পাইয়ে দিতে ৩০০ কোটি টাকা দাবি করতেন হানিফ। তার ফাঁদে পড়েছেন অনেকে।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে তোলা ছবি দেখিয়ে নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতেন প্রতারক তুষার

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেন, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এমন অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন আবু হানিফ তুষার। তবে সবার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেও মোটা দাগে কারও সঙ্গেই লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাদের মধ্যে চুক্তি হয় মনোনয়ন পাওয়ার পর টাকা পরিশোধ করার।

(ঢাকাটাইমস/২০অক্টোবর/ইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আ.লীগকে নিষিদ্ধ করলে ভালো হতো: জামায়াত আমির
জামালপুরে মাদ্রাসায় ছাত্রী ভর্তিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২০
ইউনাইটেড হাসপাতালের কাছে ডিএনসিসির কর বকেয়া ৩০ কোটি টাকা
শহীদ নিজামীর খুনিদের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে ইনশাআল্লাহ: রফিকুল ইসলাম 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা