একদিনের জন্য স্বাভাবিক ঢাকা! তারপর?

গত কয়েক দিনে কত কিছুই না হয়ে গেল রাজধানীর বুকে। নেপথ্যে বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং হাইকোর্টের রায়ে নিবন্ধনহীন জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ। শনিবার একই দিনে কাছাকাছি দূরত্বে তিন দলই পালন করে এই কর্মসূচি।
এর দুদিন আগে থেকেই গোটা রাজধানী ছিল থমথমে। নাগরিকদের মধ্যে ছিল উৎকণ্ঠা আর আতঙ্ক। কখন কার সঙ্গে কী ঘটে যায়! ঢাকার প্রতিটি প্রবেশ পথে ছিল পুলিশের তল্লাশি। বন্ধ ছিল দূরপাল্লার বাস। ঢাকার প্রতিটি রাস্তায়ও ছিল গণপরিবহনের চরম সংকট।
সব মিলিয়ে এমনিতেই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল রাজধানীবাসীর জীবন। স্বাভাবিক চলাচল হয়েছিল মারাত্মকভাবে ব্যাহত। তার মধ্যেই তিন দলের সমাবেশের দিন শনিবার দুপুরের পর থেকে দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। পুলিশের সঙ্গী আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি-জামায়াত।
এই সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যসহ এ পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি অনেকে। পুলিশ হত্যার দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুজনকে। এদিকে বাসায় বাসায় হানা দিয়ে আটক করা হচ্ছে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদেরও।
ছাড় পাননি দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। রবিবার সকালে গুলশানের বাসা থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিএনপির এই নীতিনির্ধারককে জেলেও পাঠানো হয়েছে। মেলেনি জামিন।
এছাড়াও গত দুই দিনে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বহু যানবাহন। এর মধ্যে একটি ঘটনায় জীবন্ত পুড়ে মরেছে অসিম পরিবহনের নাঈম নামে এক হেলপার। ঘুমিয়ে থাকায় নিজেকে সে বাঁচাতে পারেনি। দগ্ধ হয়েছে রবিউল নামে আরেক শ্রমিক।
এত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মাঝে অল্প সময়ের জন্য হলেও ভালো খবর হলো, আজ সোমবার কোনো ভীতি নেই রাজধানীজুড়ে। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সকালে কর্মক্ষেত্রে আসার পথে সবকিছুই দেখা গেল স্বাভাবিক।
তিন দলের সমাবেশের ভয়ংকর একটি দিন, পরের দিন বিএনপি-জামায়াতের হরতাল—এসব পেরিয়ে আজ সোমবার রাজধানীবাসীর জন্য স্বস্তির একটা দিন। রাস্তায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক। বাসা থেকে বেরিয়ে সময় মতোই কর্মস্থলে ছুটতে পারছেন সবাই।
যারা ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার ব্যবহার করেন, তারাও আজ রাস্তায় বেরোতে পারছেন কোনো শঙ্কা ছাড়াই। কারণ গত তিন-চার দিন আরামের গাড়ি ছেড়ে তাদেরও চলাফেরা করতে হয়েছে রিকশা কিংবা সিএনজিতে। সেই ভয় আর ভোগান্তি আজ অন্তত নেই।
তবে মঙ্গলবার থেকে আবারও অমঙ্গলে ঢেকে যেতে পারে রাজধানী ঢাকাসহ গোটা দেশ। কারণ হরতাল পালনের পর মঙ্গলবার থেকে তিন দিন দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বিএনপি। রবিবার দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আটক হওয়ার পরই এই কর্মসূচির ঘোষণা আসে।
কী হবে এই তিন দিনে? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে দেশবাসী। সঙ্গে মনে জমা হচ্ছে নতুন আতঙ্ক। হয়তো আগামী তিন দিন আবারও যানবাহন পুড়বে রাস্তায়। সঙ্গে পুড়বে তাজা প্রাণও। আবার হয়তো কোনো পুলিশ সদস্য কিংবা দলীয় কর্মীকে পিটিয়ে রাজপথে ফেলে রাখা হবে। মৃত্যুর যন্ত্রণায় কাতরাবে সে। একসময় উড়াল দেবে প্রাণপাখি।
এমন অনেক কিছুই ঘটতে পারে। এই শঙ্কা নিয়েই আগামী তিনটি দিন পার করতে হবে দেশবাসীকে। সন্তানকে নিয়ে মা-বাবা থাকবেন দুশ্চিন্তায়, স্বামীকে নিয়ে স্ত্রী, বাবাকে নিয়ে সন্তানরা। এই দুশ্চিন্তা আর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ হবে কবে? উত্তর অজানা।
লেখক: সংবাদকর্মী, দৈনিক ঢাকা টাইমস ও ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম।

মন্তব্য করুন