যুক্তরাষ্ট্রসহ ৬ দেশে হাসান সারওয়ার্দীর অঢেল সম্পদ, তথ্য চেয়ে দুদকের চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:১৮ | প্রকাশিত : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ১৫:২৩

বাইডেনের ভুয়া উপদেষ্টাকাণ্ডে গ্রেপ্তারের পর অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর দুর্নীতি তদন্তে নড়েচড়ে বসেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার সম্পদের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন দেশে চিঠি পাঠানো হয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির পক্ষ থেকে। কমিশন সচিব মাহবুব হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় দলটির কার্যালয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ‘ভুয়া উপদেষ্টাকে’ দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন করে আলোচনায় আসেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সারওয়ার্দী।

এমন কাণ্ডের পর পল্টন মডেল থানায় হওয়া প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তারের পর হাসান সারওয়ার্দী আদালতের আদেশে ৮ দিনের পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন। তার সঙ্গে একই মামলায় আসামি বাইডেনের ভুয়া উপদেষ্টা মিয়ান আরেফি ও অ্যাডভোকেট বেলাল নামে এক বিএনপি নেতা। আরেফি গ্রেপ্তারের পর বর্তমানে কারাগারে।

হাসান সারওয়ার্দীর অবৈধ সম্পদ ও দুর্নীতির অনুসন্ধানে ২০২০ সালেও উদ্যোগ নিয়েছিল দুদক। তবে তিন বছরেও কোনো কিনারা হয়নি। এ নিয়ে গত ৩১ অক্টোবর ‘হাসান সারওয়ার্দীর ক্ষেত্রে কেন ধীরে চলো নীতি নিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন?’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ঢাকা টাইমস।

ওই দিন এ বিষয়ে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেছিলেন, ‘প্রক্রিয়াগতভাবে কাজ চলছে।’ এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সাবেক সেনা কর্মকর্তা সারওয়ার্দীর সম্পদের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন দেশে দুদকের চিঠি দেওয়ার তথ্য জানালেন।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, অনুসন্ধানকালে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৬ দেশে সারওয়ার্দীর সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এ জন্য ওই ৬ দেশে সম্পদের তথ্য জানতে চেয়ে দুদকের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

প্রাপ্ত নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশন বৈঠকে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়। অনুসন্ধানের জন্য বিশেষ তদন্ত বিভাগের মহাপরিচালককে নির্দেশনা দেওয়া হয়। অনুসন্ধানেও নামে দুদক।

তবে রহস্যজনকভাবে দুদকের সেই অনুসন্ধানের কোনো কূলকিনারা হয়নি। একইসঙ্গে ধামাচাপা পড়ে যায় সাবেক এই সেনা কর্মকর্তার দুর্নীতির বিপরীতে শাস্তির প্রক্রিয়া। আদৌ তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষ হবে কি না তা নিয়েও তৈরি হয়েছে সংশয়।

আরও পড়ুন>> হাসান সারওয়ার্দীর ক্ষেত্রে কেন ধীরে চলো নীতি নিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন?

অনুসন্ধানসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, হাসান সারওয়ার্দীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান। তিনি ক্ষমতার মাধ্যমে অনৈতিকভাবে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। বিপুল সম্পদের মালিক হতে ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা, জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।

অবৈধভাবে অর্জিত কোটি কোটি টাকা দিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের নামে বাড়ি ও ফ্ল্যাট কিনেছেন। এছাড়া বিদেশে অর্থ পাচার করে মানিলন্ডারিং অপরাধ করেছেন বলে যে অভিযোগ রয়েছে, তাও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এসব অভিযোগের বিপরীতে প্রমাণাদি জোগাড় করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, চৌধুরী আবু সাহেদ নামে এক ব্যক্তির দাখিল করা ৩০ পৃষ্ঠার অভিযোগ প্রাথমিক অনুসন্ধান করে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায় সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এরপর তার দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

সারওয়ার্দী বগুড়া গলফ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তার সাবেক স্ত্রীর ঘরের দুই ছেলে মেয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। পরবর্তীতে তিনি ফারজানা ব্রাউনিয়ার সঙ্গে দ্বিতীয় বিবাহে আবদ্ধ হন।

অনলাইনে এক টকশোতে সেনাবাহিনীকে নিয়ে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে একসময় আলোচনায় আসেন হাসান সারওয়ার্দী। নারী কেলেঙ্কারিসহ সেনা শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের জন্য দেশের সব সেনানিবাসে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়েছিল।

নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবে রানা প্লাজা ধসের পর উদ্ধারকাজের নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় আসেন চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী। ২৬ মার্চ ‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা’ আয়োজনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি।

এরপর তিনি আর্টডকের জিওসি ও ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট হন। এর আগে তিনি আনসার ও ভিডিপি এবং এসএসএফের মহাপরিচালক এবং সেনা গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/০২নভেম্বর/আরআর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অপরাধ ও দুর্নীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :