ডাকের অপেক্ষায় ছোট দলগুলো

লিটন মাহমুদ ও মেহেদী হাসান, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:১৭ | প্রকাশিত : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১১:২৯

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে ততই জোট গঠনে বড় দুই দলের নজর পড়ছে ছোট দলগুলোর ওপর। ক্ষমতার রাজনীতিতে এতদিন অবহেলায় থাকলেও এখন হঠাৎ তারা গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে। দুই দলের সঙ্গে সকাল-বিকাল বৈঠক করছেন ছোট দলের বড় নেতারা।

দেশের দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি হঠাৎ রাজনৈতিক মিত্রের সন্ধানে নেমেছে। উভয় দল মহাজোট ও চারদলীয় জোট নামে ভিন্ন দুটি রাজনৈতিক শক্তির নেতৃত্বে থাকলেও তারা আরও কিছু ছোট দলকে নিজ নিজ জোটে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে।

শরিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে ঐক্য সংহত করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, ছোট দলগুলোর রাজনৈতিক অবস্থান যা-ই থাকুক, রাজনৈতিক গুরুত্বের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই এসব দলকে বড় দুই দল জোটে টানছে।

এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ঢাকা টাইমসের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ১০টি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এদের অধিকাংশই বড় দুই দলের পক্ষ থেকে এখনও কোনো ডাক পাননি বলে জানান। আবার অনেকেই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়েছে। আবার কয়েকটি দল এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, শুরু করেছে মনোনয়ন বিক্রি।

নিজেদের ‘মাছ’ প্রতীকে নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত ‘গণফ্রন্ট’। দলটির চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন (কর আইনজীবী) ঢাকা টাইমসকে জানান, আমরা এককভাবেই নির্বাচনে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ‘একপক্ষ চাচ্ছে নির্বাচন না হোক। কিন্তু এটা বলে তারা তো সুধিধা করতে পারছে না। কারণ, নিবন্ধিত দলগুলোর ৩০-৩৫টি নির্বাচনে যাচ্ছে, আস্তে আস্তে সবাই যাচ্ছে।’

নির্বাচনের আগে বড় কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসার প্রস্তাব এসেছে কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বড় দলগুলোর মধ্যে সরকারি দল আলোচনার জন্য ডাকলে যাব, সমস্যা নাই। আর বিএনপির এখনকার নেতারা রাজনৈতিকভাবে আমার অনেক জুনিয়র। তাদের সাথে বৈঠকের কিছু নাই।’

নির্বাচনে আসার টার্গেট করে নিজেদের চেয়ার প্রতীকের মনোনয়ন বিক্রয় শুরু করেছে ইসির ৩০ নম্বর নিবন্ধিত দল ‘ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ’। দলের মহাসচিব আবুল বাশার মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন জুবাইর বলেন, ‘গতবারের মতো এবারও আমরা দল থেকেই নির্বাচন করতে যাচ্ছি। মনোনয়ন বিক্রিও ইতোমধ্যে শুরু করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রথম থেকেই দাবি তত্ত্ববধায়ক সরকার চাই না, সরকারের প্রভাবমুক্ত স্বাধীন নির্বাচন কমিশন চেয়েছি। কিন্তু আমরা সেই শঙ্কামুক্ত নয়। নির্বাচন কমিশন শঙ্কামুক্ত বললেও সময় সেটা কতটুকু পারল, সেটা সময়ই বলে দেবে।’

বড় রাজনৈতিক দলের ডাকের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও কারও ফোন পাইনি বা কারও সাথে সংলাপের আহ্বানও আসেনি। দলগুলোর সাথে আমাদের কারও তেমন কমিউনিকেশন নেই।’

সম্প্রতি ঘোষিত তফসিলে নির্বাচনে যাবে না ‘বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি’। নিবন্ধিত এই দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ঢাকা টাইমসকে জানান, এই তফসিলে আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি না। সরকার বিভিন্নভাবে নির্বাচনে নেওয়ার চেষ্টা করছে। চাপ হুমকি প্রলোভন দেখাচ্ছে। আমার ধারণা গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিরোধী দলই নির্বাচনে যাবে না।’

ইসির ৪১ নম্বর নিবন্ধিত দল বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট)। দলীয় প্রতীক ছড়ি। দলের প্রধান আবু লায়েস মুন্না ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তবে আমরা নির্বাচন করব। বড় দলগুলোর সঙ্গে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা আমাদের মতো করে আগাচ্ছি।’

বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসির ২৩ নম্বর নিবন্ধিত দল ‘জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’। দলের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নির্বাচনে যাচ্ছি না। কারণ এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে আমরা মনে করছি না।’

দলীয়ভাবে প্রস্তুতি নিলেও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিও (বাংলাদেশ ন্যাপ)। ইসির নিবন্ধিত এই দলের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ দেখছি। আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু অংশগ্রহণ করব কি না এখনও শিওর না। আমরা শুরু থেকেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চেয়ে আসছি। না হলে তো সমস্যা থেকেই যাবে। অনেকের সাথেই তো রাজনৈতিক সম্পর্ক, কিন্তু আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি কারও সাথে।’

দলীয় মোমবাতি প্রতীকে ৩০০ আসনে নির্বাচন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসির ৩৫ নম্বর নিবন্ধিত দল ‘বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট’। দলের চেয়ারম্যান মাওলানা এম. এ. মতিন বলেন, ‘আমরা এককভাবে ৩০০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমরা কারও সঙ্গে বসিনি। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য দল বসার জন্য চেষ্টা করলেও আমরা এখনও বসিনি। আমরা আশাবাদী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। তবে সামনে পরিস্থিতি খারাপ হলে আমরা পদক্ষেপ নিব।’

বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার আলী বুলবুল চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছি। মনোনয়ন বিক্রিও শুরু করেছি। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, ভোটাররা ভোট দিতে পারবে, সেই প্রেক্ষিতে আমরা নির্বাচনে যাব। শুনেছি অনেকে বৈঠক করছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। তবে আমাকে এখনও ফোন করেনি কেউ।’

দলীয় টেলিভিশন প্রতীকে নির্বাচনে যাবে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ)। দলের প্রেসিডেন্ট এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা মনোনয়ন দিচ্ছি ৫ দিন ধরে, আরও দুদিন বাড়ানো হয়ছে। দলের বাইরে কাউকে মনোনয়ন দিচ্ছি না।’ কেউ বৈঠকের আহ্বান করেছে কি না? তিনি বলেন, ‘ডাকলেও যাব কেন? দল, রাজনৈতিক মতের মিল নাই, আদর্শগতভাবে মিল নাই, এজন্যই তো আলাদা দল গঠন করেছি। তবে গত ২১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়, সালাম বিনিময় শেষে তিনি বলেছেন, আমিও নির্বাচনে আসছি, আপনারাও আসেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সারা বছর গুরুত্ব না থাকলেও নির্বাচনের আগে নামসর্বস্ব ছোট দলগুলোকেও কাছে টানতে উদ্যোগী হয় আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি। ফলে ছোট দলগুলোর কদর বেড়ে যায়। ভোটের মাঠে অস্তিত্ব নেই, এমনকি আদর্শিক মিল না থাকলেও ছোট দলগুলোকে পাশে রাখতে চায়, কাছে টানার চেষ্টা করে। তবে শেষ পর্যন্ত কোন দল কার সঙ্গে গাটছড়া বাঁধে, তা দেখার জন্য নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোটগতভাবে অংশ নেয়। এর বাইরে তারা বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতা করে। ওই সময় বিএনপি তাদের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে আরও একটি আলাদা জোটের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেয়। তবে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি তারা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। জাতীয় পার্টিও বলেছে তারা আপাতত এককভাবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জোটগত নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি শেষ মুহূর্তে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে চূড়ান্ত করবে বলে জানিয়েছে দলটি। তবে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি তাদের জোটের পরিধি এবং শক্তি বাড়াতে বিগত নির্বাচনের মতো এবারও সমমনা ছোট ছোট রাজনৈতিক দলকে পক্ষে নিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। স্বাধীনতার স্বপক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের কাছে টানার চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অপরদিকে বাম, ডান, ধর্মভিত্তিকসহ নানান ঘরানার বিরোধী শিবিরের দলগুলোকে পাশে রাখতে নিজেদের মতো করে সক্রিয় বিএনপিও।

জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে প্রবীন রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেন, আমরা ১৪ দলগতভাবে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবো। এর বাইরে সমমনা অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচনি জোট কিংবা নির্বাচনি সমঝোতা হতে পারে।

ছোট দলগুলোকে জোটে টানা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক--সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন আসলেই বড় দুই দল ছোট দলগুলোকে কাছে টানতে চেষ্টা করে। শক্তি, সামর্থ্য এবং জনসমর্থনহীন ছোট দলগুলোও বড় দুই দলের সঙ্গী হয়। আদর্শহীন এই দলগুলোর মূল চাওয়া ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া। এর বাইরে আর কিছুই না। যা রাজনীতির জন্য একটি সুবিধাবাদী খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন ছাড়া আর কিছু না।

(ঢাকাটাইমস/২৫নভেম্বর/এলএম/কেএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

‘সব গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হবে এবং শিগগির স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের পতন’

মামুনুল হকের জামিন, কারামুক্তির অপেক্ষা

হাসপাতাল থেকে বাসায় খালেদা জিয়া

ওমরাহ করতে সস্ত্রীক ঢাকা ছাড়লেন মির্জা ফখরুল

বিএনপির রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য যে কোনো উপায়ে ক্ষমতা দখল: ওবায়দুল কাদের

রাজধানীতে জনসাধারণের মাঝে মহিলা পার্টির পানি ও শরবত বিতরণ

বিএনপি নয়, আ.লীগের নেতা ও তাদের স্বজনরা দেশ ছেড়ে যাচ্ছে: রিজভী

উপজেলা নির্বাচন: এমপি-মন্ত্রীর কোন কোন স্বজন অংশ নিতে পারবেন না জানালেন শেখ হাসিনা

এভারকেয়ারে ভর্তি খালেদা জিয়া, এবার কতদিন থাকতে হবে হাসপাতালে?

ত্যাগের মহিমায় মানবসেবা করে গিয়েছেন স্বামী বিবেকানন্দ: মেয়র তাপস

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :