জনগণকে ভোটমুখী করতে আওয়ামী লীগের নানা কৌশল
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিতর্কমুক্ত করতে নানা কৌশলে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি অংশ না নেওয়ায় আগামী নির্বাচনে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখানো এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার কেন্দ্রে আনাই এখন আওয়ামী লীগের বড় লক্ষ্য। তাই নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক, উৎসবমুখর করতে বিভিন্ন কৌশল করে নির্বাচন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ছক সাজাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির নির্বাচনি কৌশলের মূলে রয়েছে যত বেশি সম্ভব ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করা। ভোট পড়ার হার বাড়াতে পারলে দেশে-বিদেশে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য দেখানো যাবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা।
নির্বাচন যেন গতবারের মতো না হয় এ জন্য প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের নিদের্শনা দিয়ে নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কৌশলে ছাড় দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। একইসঙ্গে দলীয় বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশনে না গিয়ে তাদের বিষয়ে নমনীয় দলটি। সবকিছুর মূলে রয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের নির্বাচনমুখী করার চিন্তা।
সংসদ নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে মাঠে নেই বিএনপি ও তার মিত্ররা। তবুও বেকায়দায় পড়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে দলের বহু নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটের লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন। এতে নির্বাচন আরও প্রতিযোগিতামূলক হবে, এমনটাই বলছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকর্মীরা।
গত জাতীয় নির্বাচন নিয়েও আন্তর্জাতিক নানা মহলের সমালোচনা শুনতে হয়েছিল আওয়ামী লীগকে। ফলে এবার আর সেই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি চায় না ক্ষমতাসীনরা। বিএনপি না এলেও ভোটের মাঠে যত বেশি সম্ভব দল ও প্রার্থীদের আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। এছাড়া দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করলেও কৌশল হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাঠে রাখতে চাইছে আওয়ামী লীগ।
নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে ভোটের মাঠে ‘ডামি’ প্রার্থী রাখার কথা আগেই বলেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ যাতে নির্বাচিত হতে না পারের, সেজন্য দলের বিদ্রোহীদের প্রতি নমনীয়তা দেখাচ্ছে আওয়ামী লীগ। অতীতে বিদ্রোহীদের প্রতি কঠোরতা দেখালেও দলটি এবার সেই সিদ্ধান্তের বাইরে।
কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, উৎসবমুখর নির্বাচন করাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। সেটাই করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়াও স্বতন্ত্রী ও অন্যান্য দলের প্রার্থীদের অংশগ্রহণে নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হবে এবং ভোটাররা সবাই ভোট দিতে আসবে। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপি ছাড়া একটি ‘গ্রহণযোগ্য’ ও ‘ভালো’ নির্বাচন কীভাবে হয় সেটা দেখাবে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে থাকছে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের বার্তা। জনগণের কাছে গিয়ে সরকারের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি নৌকা মার্কায় ভোট চাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের একটি কৌশলগত অবস্থান বলেও গত সোমবার জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রায় প্রতিটি আসনেই ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা ভোটে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলের মনোনয়নবঞ্চিতরা এরই মধ্যে ভোটের লড়াইয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন।
স্বতন্ত্রের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, অনেকেই কয়েক দফা এমপি ছিলেন। তাদের কর্মকাণ্ডে দলের নেতাকর্মীরা সন্তুষ্ট নন। এমপিরা বিভিন্ন স্থানে স্বজনপ্রীতি করেছেন, ভাইলীগ, এমপিলীগ তৈরি করেছেন। কর্মীরা এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে মুক্তি চায়। স্বতন্ত্র হয়ে ভোটের লড়াইয়ে অংশ নেওয়া দলের বিরুদ্ধে নয়, ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মানে, শেখ হাসিনা মানে এদেশে উন্নয়ন, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন। শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়ন দেখে দেশের মানুষ নৌকায় ভোট দিবে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার যে উন্নয়ন অগ্রগতি করছে দেশের মানুষ তা দেখেই শেখ হাসিনাকে নৌকাকে ভোট দিবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সারাদেশে নির্বাচনের আমেজ শুরু হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/০১ডিসেম্বর/এফএ)