টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর: এডিজি হলেন ওএসডি হওয়া সেই সাহাবুদ্দিন

অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার অভিযোগে ওএসডি হওয়া কর্মকর্তা সাহাবুদ্দিনকে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) করা হয়েছে।
সোমবার সাহাবুদ্দিনকে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের জিএম পদ থেকে একই অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রেগুলেটরি) বিভাগে পদায়ন করা হয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব তার এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ওএসডি হওয়া সাহাবুদ্দিনকে চেয়ারে বসিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর ওএসডি করা হলে চার মাসের মাথায় তাকে নতুন করে দায়িত্ব দিয়েছেন সচিব।
বিটিসিএলের ক্রয় বিভাগের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ওএসডি করা হয়েছিল সাহাবুদ্দিনকে। তার দুর্নীতির কারণে বিটিসিএলের টেলিকমিউনেশন নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিডি-পি ৫৩) থেকে অর্থ প্রত্যাহার করে নেয় জাপানি দাতা প্রতিষ্ঠান জাইকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি মোবাইল কোম্পানি টেলিটকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় সম্পৃক্ততাসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি প্রতিষ্ঠান টেলিটকের দুর্বল নেটওয়ার্ক তৈরি পেছনে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে। তার দুর্নীতি আর অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানটির বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়। ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকা অবস্থায় শত শত কোটির টাকার মালিক বনে যান তিনি। সেই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে আবার টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক দায়িত্ব দেওয়ায় অনেক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন করে ধ্বংসের পায়তারা চালাতেই তাকে আবারও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে প্রশ্ন তুলেছেন টেলিকমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেন, সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বেশ কয়েকটি অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন ও দোষী হিসেবেও প্রমাণিত হয়েছেন। এছাড়া বদলির পর দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ব্যাংকে ৫৫৭ কোটি টাকা এফডিআর আর চলতি হিসাবের ১০০ কোটি টাকার কোনো হিসাব দিতে পারেননি তিনি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এই অর্থের ব্যয় কোনো খাতে হয়েছে তার জন্য গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেলিটকের একজন কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয়ের বিএনপিপন্থী কিছু আমলা এবং বিআরটিসির কিছু অসাধু লোকজনের যোগসাজশে সাহাবুদ্দিনের অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসাসহ অনিয়মের রাজত্ব গড়ে তুলেছেন। এতো অভিযোগ থাকার পরও সিন্ডিকেট আর তদবিরে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্নীতির মাধ্যমে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছেন সাহাবুদ্দিন। অবৈধভাবে শত শত কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন। রাজধানীর পিঙ্কসিটির এ ব্লকে ডুপ্লেক্স বাড়িসহ ঢাকায় রয়েছে তার একাধিক বাড়ি। বসুন্ধরা আবাসিক এইচ ব্লকে বাড়ির কাজ করছেন। ঢাকার বাইরে অর্ধশত বিঘা জমি কিনেছেন। এছাড়াও নামে-বেনামে বহু সম্পত্তির মালিক তিনি।
২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের সমাপনীতে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার কারণে বাংলাদেশ বছরে ৪ হাজার ৫৬২ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে উল্লেখ করে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ ও সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, বাংলাদেশে অবৈধ ভিওআইপির ভয়াবহ সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, ২০২১ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ টেলিযোযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) মন্ত্রণালয়ে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। এ ব্যবসার সঙ্গে টেলিটকের কতিপয় কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের ভেতর কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকেও লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। দুদক এ বিষয়ে তদন্ত করার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে দায়িত্ব দেয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নির্দেশনায় টেলিটকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করেছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এই তদন্ত প্রতিবেদনও অদ্যাবধি ফাইলবন্দি বলে জানা গেছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে তদন্ত হওয়া জরুরি বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
জানা যায়, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেরে বাংলা নগর এক্সচেঞ্জের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও রেড এক্সচেঞ্জের ডিভিশন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন সাহাবুদ্দিন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রেগুলেটরী) একাধিকবার ফোন ও ম্যাসেজ করলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
এ বিষয়ে কথা বলতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনার সঙ্গে একাধিকবার ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
(ঢাকাটাইমস/৫ডিসেম্বর/জেএ/বিবি/ইএইচ)

মন্তব্য করুন