আমদানি নির্ভরতা কমাতে দিনাজপুরে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে সাফল্য 

শাহ আলম শাহী, দিনাজপুর
 | প্রকাশিত : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৩৬

দেশে বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে বাড়ছে অস্থিরতা। নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে এর দাম। এমন পরিস্থিতিতে আশা জাগাচ্ছে দিনাজপুরের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ। জেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় চিরিরবন্দর, খানসামা, বিরল ও বীরগঞ্জ উপজেলার অসংখ্য কৃষক (নাসিক এন-৫৩) জাতের পেঁয়াজ চাষ করে ভালো সাফল্য পেয়েছেন।

ইতিমধ্যেই তারা পেঁয়াজ উত্তোলন শুরু করেছেন। এতে করে এই সংকটকালীন মুহূর্তে আমদানি নির্ভরতা কমাতে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

মূলত: দেশের বেশিরভাগ কৃষক শীতকালীন পেঁয়াজ চাষ করেন। ফলে গ্রীষ্মকাল আসতে আসতে পণ্যটির দাম বেড়ে যায়। এ কারণে বিদেশ থেকে আমদানির পরও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

গত কয়েক বছর ধরে এই অবস্থা চলতে থাকায় কৃষি বিভাগ দেশে গ্রীষ্মকালেও পেঁয়াজ চাষের পদক্ষেপ নিয়েছে। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে লাখ টাকা আয় করছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা। স্বল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় অন্য কৃষকরাও ঝুঁকছেন এন-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষে।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানান, চলতি মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জেলায় ২৭০ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্যে ২ হাজার ৫০০ কৃষককে প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। হেক্টর প্রতি পেঁয়াজের ফলন ১৭ মেট্রিক টন। আবহওয়া অনুকূলে থাকলে ও কৃষকরা যথাযথ পরিচর্যা করলে ফলন আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর গ্রামের কৃষক গনেশ চন্দ্র রায় ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলছেন। বেশ হাসি খুশি তিনি।

এ বিষয়ে তিনি জানান, ‘সরকারি প্রণোদনা পেয়ে গতবছর থেকে আগাম জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করছি। গতবার পরীক্ষামূলক ভাবে পাঁচ শতক জমিতে লাগিয়ে ভালো ফলন পেয়েছিলাম। বাজারে দামও ছিলো ভালো। তাই এবার ১০ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। এবারও পেঁয়াজের ভালো ফলন হয়েছে। একেকটি পেঁয়াজের ওজন ২০০ গ্রামের বেশি । আমার দশকাঠা জমিতে পেঁয়াজ চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। এখন এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ১২০ টাকা তাতে খরচ বাদ দিয়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লাভ হবে।’

বিন্নাকুড়ি এলাকার পেঁয়াজ চাষি নিশি কান্ত রায় বলেন, ‘গতবছর থেকে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করছি প্রণোদনার আওতায় এবারও ২০ শতক জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। বৃষ্টির জন্য কিছু চারা মারা গেছে। তবে, পেঁয়াজের ভালো ফলন হয়েছে।’

পেঁয়াজ চাষি কৃষ্ট মহন্ত জানান, ‘আমি প্রথম এবার প্রণোদনার আওতায় দশ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ লাগিয়েছি। প্রথম দিকে বৃষ্টির কারণে আমার ক্ষেতের কিছু চারা মারা গিয়েছে। আর এক সপ্তাহ পরে পেঁয়াজ তুলবো ক্ষেত থেকে। আশা করছি, ভালো দাম পাবো। উৎপাদন খরচের থেকে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হবে পেঁয়াজ।’

চিরিরবন্দর উপজেলার কৃষক কর্মকর্তা জোহরা সুলতানা বলেন, ‘চিরিরবন্দর উপজেলার ১৫০ কৃষকে প্রণোদনার আওতায় বীজ সার বিতরণ করা হয়। সেই সঙ্গে বীজতলা তৈরির জন্য কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। এখন পেঁয়াজের সংকটকালীন সময়ে কৃষকরা সেই পেঁয়াজ বাজারে নিয়ে আসতে পারছে। বর্তমান বাজারে রপ্তানি করা পেঁয়াজের যে দাম, তাতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কৃষক ভালো দাম পাচ্ছে।’

(ঢাকাটাইমস/১৫ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/জেডএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :