লাগেজে পাওয়া মরদেহটি এক যুবকের, খুন হন পতিতালয়ে

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ২৩:০৬ | প্রকাশিত : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ২২:৫১
হত্যাকাণ্ডে জড়িত নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ইনসেটে লাগেজে পাওয়া যুবকের মরদেহ।

ফরিদপুর বাস টার্মিনালে লাগেজের মধ্যে যুবকের মৃতদেহ ফেলে রেখে যায় অজ্ঞাতরা। ঘটনার দুই দিন পর ওই যুবকের পরিচয় শনাক্ত হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। দৌলতদিয়া পতিতা পল্লীতে অর্থ নিয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে তাকে হত্যা করা হয়। অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত যৌনকর্মী রোজিনা আক্তার কাজলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার দুপুরে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।

পুলিশ সুপার জানান, পাবনা সদর উপজেলার মিলন প্রামানিক (৩৯) রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়ায় ইটের ভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন। ২৬ জানুয়ারি রাতে মিলন দৌলতদিয়া যৌন পল্লীতে যায়। সেখানে গিয়ে যৌনকর্মী রোজিনা আক্তার কাজলের রুমে যান। শারীরিক সম্পর্ক শেষে তাদের মধ্যে টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে রোজিনা ক্ষিপ্ত হয়ে তার পরিহিত ওড়না মিলনের গলায় পেচিয়ে হত্যা করে।

তিনি আরও জানান, সকালে মিলনের মৃতদেহ কম্বল দিয়ে পেচিয়ে স্যুটকেসে ভরে ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে মরদেহ ভর্তি লাগেজটি নিয়ে রিকশাযোগে গোয়ালন্দ বাজারে যায়। সেখান থেকে মাহেন্দ্র গাড়িতে ফরিদপুর বাস টার্মিনালে আসেন। বিকাশ পরিবহনে গাড়িতে টিকিট কাটেন এবং মরদেহ ভর্তি লাগেজটি গাড়ির হেলপারের সহায়তায় গাড়িতে রাখেন। গাড়ি ছাড়তে কিছুটা বিলম্ব হলে কৌশলে নাস্তা খাওয়ার কথা বলে রোজিনা দ্রুত পালিয়ে যায়।

পুলিশ সুপার জানান, সিসি টিভি ফুটেজ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মঙ্গলবার ভেররাতে ডিএমপির কদমতলী থানার জুরাইন এলাকার বাসা বাড়ি থেকে রোজিনা আক্তারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হবে।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত যৌনকর্মী রোজিনা আক্তার কাজল বলেন, মিলন মাঝে মধ্যেই আমার কাছে আসতো। আমি ওর কাছে টাকা পাইতাম। ওই রাতে ঝগড়া হয় এক পর্যায়ে আমি ক্ষিপ্ত হয়ে ওড়না গলায় পেচিয়ে মারধর করি। কিন্তু এতে সে মারা যাবে ভাবতে পারিনি। রাগের মাথায় এ ঘটনা ঘটেছে।

স্যুটকেসে মরদেহ বহনকারী রিকশাচালক তালেব বেপারী জানান, সকাল থেকেই আমি রিকশা চালাই। প্রতিদিনের মতো শনিবার সকালে দৌলতদিয়া পতিতা পল্লীর সামনে অবস্থান করছিলাম। এমন সময় যৌনকর্মী রোজিনা আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। বলে একটি এসি কিছু মালামাল আছে বাইরে আনতে হবে।

তিনি আরও জানান, আমি ভেতরে গিয়ে স্যুটকেস ভারী দেখে তাকে জানাই এটা নিতে আরও একজন লোক লাগবে। ৬০০ টাকা দিতে হবে। রোজিনা বলে ঠিক আছে। আমি মাথায় নিয়ে অর্ধেক রাস্তা আসি, পরে আমার সঙ্গে থাকা আরেকজন মাথায় নেয়। পরে রিকশায় করে দৌলতদিয়া বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে যাই। পরে সেখান থেকে রোজিনা ওই স্যুটকেস মাহেন্দ্রতে করে নিয়ে যায়।

মাহেন্দ্র চালক গানু বেপারী জানান, দৌলতদিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বোরকা পরা এক নারী ফরিদপুরে আসার জন্য আমার মাহেন্দ্রতে ওঠে। দুইটি সিট নেয়, ৬০০ টাকা ভাড়া নেই। সে ফরিদপুর বাস টার্মনালে এসে নামে। স্যুটকেস এতো ভারী কেন জানতে চাইলে ওই নারী বলেন, ভেতরে এসি লোহার কিছু মালামাল রয়েছে একারণে ভারি। আমি টার্মিনালে নামিয়ে দিয়ে চলে যাই।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতয়ালী থানার এস আই সুজন বিশ্বাস জানান, ঘটনার পর থেকেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ শুরু করে। সিসি টিভি তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দঘাট বাজার থেকে মাহেন্দ্র গাড়ির চালককে শনাক্ত করে হেফাজতে নেওয়া হয়। তার দেয়া তথ্যমতে মতে লাগেজ বহনকারী রিকশা চালককে হেফাজতে নিয়ে গোয়ালন্দ পতিতাপল্লীর রুবেল মাতুব্বরের বাড়ির দোতলার ভাড়াটিয়া রোজিনার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

তিনি আরও জানান, ঘটনার পর থেকে রোজিনা পলাতক ছিল। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় রোজিনাকে মঙ্গলবার ভোররাতে ডিএমপির কদমতলী থানার জুরাইন এলাকার দেওয়ান বাড়ির ৬তলা থেকে রোজিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এস আই সুজন জানান, রোজিনাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে ১০-১২ বছর যাবৎ গোয়ালন্দঘাট দৌলতদিয়া পতিতা পল্লীতে রয়েছে। তার বয়স যখন ১৪ বছর তার বাবা-মা তাকে বিয়ে দেয়। কিছুদিন পর তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। পরবর্তীতে দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর চায়ের দোকানদার হাকিমের সহিত তার ২য় বিয়ে হয়। হাকিম মারা যাওয়ার পর সে সুজন নামে একজনকে ৩য় বিবাহ করে।

তিনি আরও জানান, নিহত মিলন প্রামানিক পাবনা সদর উপজেলার নতুন গোহাইল বাড়ি এলাকার কাশেম প্রামানিকের ছেলে। তার বাড়ি পাবনা সদর হলেও রাজবাড়ী জেলায় বিভিন্ন ইটভাটায় কাজ করত এবং মাঝে মাঝে যৌন পল্লীতে আসত। ২৬ জানুয়ারি রাতে রোজিনার ঘরে যায় মিলন। তাদের মধ্যে টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে রোজিনা তার পরিহিত ওড়না মিলনের গলায় পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করে।

(ঢাকাটাইমস/৩০জানুয়ারি/ প্রতিনিধি/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :